ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - প্রিয় খাদেম স্যারের জন্য প্রার্থনা …

প্রিয় খাদেম স্যারের জন্য প্রার্থনা …

দেবদাস মজুমদার >
মন খারাপ হওয়ার মত খবর ।আমাদের প্রিয় শিক্ষক খাদেম আলী খন্দকারের কণ্ঠনালীতে ক্যান্সার ধরা পড়েছে । এই খবর একজন প্রিয় ছাত্র হিসেবে অত্যন্ত বেদনার । শুভজন এই শিক্ষা গুরু মঠবাড়িয়ায় একজন গুণি ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে আজও সবার কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য মানুষ। স্কুল ,বাসা আর খেলার মাঠ আজন্ম এই গুণি মানুষকে এমনিভাবেই দেখতে আমরা অভ্যস্ত । সদালাপী আর সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত এমন মানুষের বসবাস কেন ক্যান্সারের সঙ্গে হবে! এ খবর অত্যন্ত দুর্ভাবনার, অত্যন্ত কষ্টের । খবরটা প্রথমে ছড়িয়েছে সামাজিক সাইট ফেসবুকে। বিশ্বাস হচ্ছিল না। বুকের ভেতর কেমন জানি মোচড় দিয়ে ওঠে। সত্যিটা জানতে পারি শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক মোস্তফা জামান স্যারকে মধ্যরাতে ফোন করে। তিনিই নিশ্চিত করেন দুর্ভাবনার খবরটা। মোস্তফা জামান স্যার ক্যান্সার আক্রান্ত খাদেম স্যারের মোবাইল নম্বর দিলেন।কথা বলতে ইচ্ছে করছিল প্রিয় স্যারের সাথে। তাই মধ্য রাতেই অসুস্থ স্যারকে ফোন করেছি। নিজেই মোবাইল কল রিসিভ করলেন। আমি পরিচয় দেই, স্যার আমি আপনার ছাত্র দেবদাস বলছি। ও সাংবাদিক দেবদাস কেমন আছ বাবা ? স্যার কথা বলতে পারছেন না ঠিক আগের মত। আমাদের শ্রেণী কক্ষে পাঠদানের সময়কার মত কন্ঠের আওয়াজটা আর নেই। কেমন যেন ফ্যাস ফ্যাসে আওয়াজ কণ্ঠে । শরীরের বৃত্তান্ত বললেন। কণ্ঠনালীতে নাকি ক্যান্সার ধরা পড়েছে স্যারের । দোয়া চাইছেন আমার কাছে, মঠবাড়িয়ার সকল মানুষের কাছে । দোয়া চাইছেন তাঁর সকল প্রিয় ছাত্রদের কাছে। ক্যান্সার রোগ থেকে মুক্তি চান আমাদের প্রিয় খাদেম স্যার। সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসতে চান । প্রিয় বিদ্যাপীঠ মঠবাড়িয়া কেএম লতীফ ই্নস্টিটিউশনের শ্রেণী কক্ষে আবার পাঠদান করতে চান।
খাদেম আলী খন্দকার । আমাদের মঠবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেএম লতিফ ইনস্টিটিউশনের সুদক্ষ ক্রীড়া শিক্ষক । টানা ৪০ বছরের শিক্ষকতার জীবন এখানে। অবসরের পরও চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক হিসেবে এখন অবধি কর্মরত আছেন। ক্রীড়া শিক্ষক হলেও তিনি নিয়মিত ইংরেজী বিষয়ে এ প্রতিষ্ঠানে পাঠাদান করছেন।
১৯৭৭ সালে ২ জানুয়ারী স্যার খাদেম আলী খন্দকার ক্রীড়া শিক্ষক পদে মঠবাড়িয়া কেএম লতীফ ইনস্টিটিউশনে যোগ দান করেন। তিনি ক্রীড়া শিক্ষক হলেও ইংরেজী বিষয়ে পাঠদান করেন। শিক্ষকতার বর্ণাঢ্য জীবনে অত্যন্ত সুনামের সাথে একই স্কুল হতে ২০০৩ সালের ১৯ জানুয়ারী অবসর নেন। তারপরও এই গুণি শিক্ষকের অবসর মেলেনি। নিজ কর্মস্থলে আজ অবধি চুক্তিভিত্তিক ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
স্যার জানালেন, গত রমজানের ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ কণ্ঠনালীতে সমস্যা বোধ করেন। বরিশালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঢাকায় যান। খ্যাতিমান চিকিৎসক ডা, প্রাণগোপাল দত্তের তত্ত্বাবধানে খাদেম স্যারের গলায় অপারেশন হয়। ওই অপারেশনের পর স্যারের কণ্ঠনালীতে ক্যান্সার রোগ ধরা পড়ে। এরপর তিনি মিরপুর ডেল্টা হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ (এ্যানোকোলিজিস্ট) ডা. মো. মুকিদুল হুদার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধিন রয়েছেন। স্যারের মেয়ে পারভীন আক্তারের বাসায় থেকে এখন তাঁর চিকিৎসা চলছে।
আমরা জানি ক্যানসার একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা, যেটা করার মত সামর্থ্য একজন শিক্ষকের থাকার কথা নয়। তবু স্যার কোন সা্হায্য চাননি। দোয়া চাইছেন সবার কাছে । সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে চাইছেন। আত্মসম্মানবোধের এই গুণিজনদের হয়ত আর কিছু চাওয়ার থাকেনা। স্যারের গুণমুগ্ধ প্রচুর ছাত্র দেশে বিদেশে আজ প্রতিষ্ঠিত। তাঁরা যদি মনে করেন স্যারের কোনো উপকারে আসবেন তাঁরা প্রিয় থাদেম স্যারের খোঁজ খবর নিতে পারেন। আসুন আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে স্যারের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা জানাই।স্যার যেন দ্রুত ক্যান্সার মুক্ত হয়ে সুস্থ জীবনে আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারেন। আবার যেন শ্রেণী কক্ষে পাঠদান করতে পারেন। শহীদ মোস্তফা খেলার মাঠে খেলা শুরুর বাঁশিটা যেন আবার স্যার বাজাতে পারেন। আসুন আমরা সবাই মিলে প্রিয় খাদেম স্যারের সুস্থ জীবনের প্রার্থনা করি।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...