ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - মঠবাড়িয়ার এমপি ডা. ফরাজি আওয়মীলীগে : মিশ্র প্রতিক্রিয়া

মঠবাড়িয়ার এমপি ডা. ফরাজি আওয়মীলীগে : মিশ্র প্রতিক্রিয়া

দেবদাস মজুমদার >>

পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া আসনের স্বতন্ত্র এমপি ফরাজির আ.লীগে যোগদানের খবরে এলাকায় রাজনৈতিক অঙ্গনে গত দুই দিন ধরে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে দুই পক্ষের বিভাজনে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা দুই পক্ষে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে আছেন। এমন অবস্থার মধ্যে এমপি ডা. ফরাজির আওয়ামীলীগে যোগদানের খবরে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। সামাজিক সাইট ফেসবুকে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রবীণ এক আওয়ামীলীগ নেতা বলেছেন, ফরাজি গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের একটি অংশের প্রকাশ্য সহযোগিতা লাভ করেছেন। ফলে গত নির্বাচনে জিততে তাকে তেমন বেগ পেতে হয়নি। এর পর থেকেই থেকেই ডা. ফরাজি আওয়ামীলীগে যোগদানের কথা রটতে শুরু করে। তিনি জীবনের শেষ দিকে এসে আওয়ামীলীগে যোগদান করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে মঠবাড়িয়া আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে কিছু অস্থিরতার মুহূর্তে এ যোগদানের খবর নতুন করে রাজনৈতিক কি পরিবর্তন ঘটাবে সেটা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র মো. রফিউদ্দিন ফেরদৌস বলেন, এমপি ডা. রুস্তুম আলী ফরাজির আ.লীগে যোগদানের বিষয়ে এ মূহুর্তে নিশ্চিত করে কিছু জানিনা। যতদুর জানি তিনি এখন দুবাইতে অবস্থান করছেন। তবে যেহেতু আমি আজন্ম আওয়ামীলীগ করি সেহেতু দলের সিদ্ধান্ত কি হবে তার ওপর আমাকে আস্থাশীল থাকতে হবে। ডা. ফরাজির আ.লীগে যোগদানের বিষয়টি আসলে স্থানীয় নয় এটি কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সিদ্ধান্তের বিষয় । আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় দল যদি ডা. ফরাজির ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকেন তাহলে সত্যিকার আওয়ামীলীগের সদস্য হিসেবে আমি কেন সকলেরই তা মেনে নিতে হবে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে দলের মধ্যে কোন বিতর্কের কিছু এ মূহুর্তে নেই। তবে ভবিষ্যতে কি হবে সেটাও এ মূহুর্তে বিচার্য বিষয় নয়।

মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মো. আশরাফুর রহমান বলেন, আমি শুনেছি ডা. ফরাজি আওয়ামীলীগে যোগদান করেছেন। তবে আমার কাছে এটা এখনও উড়ো খবর। কারন উনি বিদেশে অবস্থান করছেন। আ.লীগের বিদ্রোহী হিসেবে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের আবার দলে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। ওই সভায় ডা. ফরাজি উপস্থিত ছিলেন না। তবে আওয়ামীলীগে তার যোগদানের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। আওয়ামীলীগ আদর্শিক একটি রাজনৈতিক দল। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশত্ববাদের দল। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনককের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এমন যে কোন দেশপ্রেমিকের আওয়ামীলীগে যোগ দিতে বাঁধা নেই। ডা. ফরাজি সবসময়ই আওয়ামীলীগের বিরোধি শিবিরে রাজনীতি করেছেন। এখন শেষ বয়সে এসে যদি উনি মনে করনে কিংবা দল যদি তাকে চায় তাহলে তার যোগ দিতে বাঁধা থাকারও কথা নয়। বিষয়টি একেবারে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে ২০০১ সালে বিএনপির শিবিরে থেকে সংসদ নির্বাচিত হয়ে অতীত রাজনীতিতে যদি তিনি কোনও ভুল করে থাকেন তা ভুলে যদি তাঁর শুভ বুদ্ধির উদয় হয় তাহলে সেজন্য সাধুবাদ জানাই।

এমপি ডা. রুস্তুম আলী ফরাজির প্রতিক্রিয়া জানতে তাঁর ব্যাক্তিগত মোবাইল ফোনে দফায় দফায় চেষ্টা চালিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর একান্ত সহকারী মো. মাছুম ফরাজি টেলিফোনে ডা. ফরাজির আওয়ামীলীগে যোগদানের বিষয়টি কিছুটা নিশ্চিত করে জানান, এমপি স্যার দুবাইতে অবস্থান করছেন। তাই এ মুহূর্তে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়। তিনি দেশে ফিরেই বিষয়টি খোলসা করবেন।

উল্লেখ্য ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি ও ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন। তিনি ২০০১ সালে জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন।

তবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই স্থানীয় বিএনপির সাথে তাঁর বৈরীতা শুরু হলে তিনি সংস্কারপন্থী হিসেবে বিতর্কিত হয়ে পড়েন। ফলে সে যাত্রা বিএনপির মনোয়ন লাভে ব্যর্থ হন।

ডা. রুস্তুম আলী ফরাজির গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামে।

তিনি বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাতকার ও বক্তৃতায় জানিয়েছেন, ১৯৬৬ সালে র্পূব পাকিস্তান ছাত্রলীগের মঠবাড়িয়া থানা শাখার প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। পরে তিনি সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ৬৯ সালে এগারো দফা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর ভাষ্যমতে ৭১ সালে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়কও ছিলেন।
তবে তিনি নির্বাচনী কর্মকান্ডে সব সময় আওয়ামীলীগের বিরোধি শিবিরে নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে ডা. ফরাজির আওয়ামীলীগে যোগদানের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত ঘটেছে।

জানাগেছে, ১৯৭৮ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলজে থেেক এমববিএিস পাস করনে। তিনি সরকারী চাকরি ছেড়ে দিয়ে এলাকায় এসে সাধারণ মানুষের চিকিতসা সেবা দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৮৬ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। সে সময় তিনি নির্বাচিত হলেও এরশাদ সরকার ফলাফল কেড়ে নেন। এ নিয়ে সেসময় মঠবাড়িয়ায় ডা. ফরাজির সমর্থকদের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংর্ঘষ হয়। পরে সেনা বাহিনী এসে নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর ১৯৯০ সালে উপজলো নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। পরে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে উপজেলা পরিষদ বিলুপ্ত করে দেয়।

২০১৪ সালের নির্বাচনে ডা. ফরাজি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামীলীগ প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ার হোসেনকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। এর পর থেকেই ডা. ফরাজির আওয়ামীলীগ শিবিরে যোগদানের গুঞ্জন উঠতে শুরু করে। ডা. ফরাজি একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জনসহ তৃণরমূল মানুষের নেতা হিসেবে ‍সুনাম অর্জন করেছেন। ফলে মঠবাড়িয়া আ.লীগে যোগদানের বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...