ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - যাকাত ও আমার উপলব্ধি

যাকাত ও আমার উপলব্ধি

যাকাত শব্দের অর্থের সাথে আমরা সকল মুসলমান ভাই বোনেরা পরিচিত। সে হোক ধনী বা গরীব। এই দুজনার মধ্যে দেওয়া এবং নেওয়ার সম্পর্ক। যিনি যাকাত নেন তিনি যেমন সামান্য কিছু পায়, তেমনি যিনি যাকাত দেন তিনি পান “অসামান্য “কিছু। কারন দানের মধ্যে আছে এক অসামান্য প্রাপ্তি। তাই আমরা সকল সামর্থবান মুসলমান ভাই বোনেরা পেতে চাই “অসামান্য পাওয়া”। আল্লাহ সকল সামর্থবান ধনী মুসলমানের উপর যাকাত ফরজ করে দিয়েছেন। আমাদের সম্পত্তির একটা অংশের মালিক আমাদের আত্মীয় বা অনাত্মীয় গরীব মানুষ। তাই আমাদের সকল সম্পত্তির মালিক আমি নিজেই তা মনে করব না; ভাবতে হবে এর এক অংশের মালিক কোন দরিদ্র মানুষ।
আমরা যাকাত দেওয়ার পরিমান কি এবং কি কি জিনিস দেওয়া যায় তা প্রায় সবাই কম বেশি জানি। সাধারনত আমরা যাকাত হিসেবে শাড়ি, লুঙ্গি, ছোটদের পোশাক দিয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে আমার একটা উপলব্ধি হলো, ধরেন, আমরা কেউ ১০০ টা শাড়ি কিনার বাজেট করলাম। সে ক্ষেত্রে আমরা যদি ১০০ টা শাড়ি না কিনে ৮০ টা শাড়ি ভাল মানের কিনি তাহলে একজন গরীব নারী সেই শাড়িটা একটা বছর ভাল ভাবে পরতে পারবে। কারন দেখা যায় অনেক শাড়ি কম্পানী ঈদের সময় যাকাতের জন্য বিশেষ নিম্নমানের সুতায় শাড়ি তৈরি করে। তাই আমরা যদি রোজার বেশ কিছুদিন আগে আমাদের যাকাতের বস্তুটি কিনে রাখি তাহলে সেটা ভাল হয়। আমাদের খেয়াল করলে ভাল হয় যে, আমরা যাকাতের বস্তুর পরিমানের পরিধি না বাড়িয়ে যদি এর গুণগত মানের দিকে দৃষ্টি দেই তাহলে ভাল হয়। আবার অনেকে ভেবে থাকেন বা বলেন শাড়ি লুঙ্গি দিয়ে কি হবে কাউকে টাকা দিয়ে দেওয়া ভাল। হ্যা সেটাও ঠিক। সেভাবে যদি আমরা বড় করে ভাবতে পারি যে, আমাদের যাকাতের বাজেট থেকে কোন একটা ফ্যামিলিকে সাবলম্বী করে দিব সেটা খুব ভাল পদক্ষেপ। কিন্তু দেখা যায় আমাদের কাছের এমন কিছু আত্মীয় বা পরিচিত মানুষ আছেন যারা যাকাত নিতে পারে না কিন্তু তাদের প্রয়োজনটা অনেক বেশি এবং এদের সংখ্যাও অনেক বেশি। তাই আমরা যদি তাদের প্রয়োজন বুঝে যাকাত দেই তাহলে সেটা অনেক বেশি গ্রহনযোগ্য হয়। যেমন: কোন পরিবারের বছরের বস্ত্র, তাদের সন্তানদের শিক্ষা উপকরণ, অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসা খরচ, কোন মেয়ের বিয়ের খরচ ইত্যাদি নানা প্রয়োজন আমরা ইচ্ছে করলে যাকাত ফান্ড থেকে দিতে পারি। আবার আমরা হয়ত অনেক সময় ভাবি খুব বড়ভাবে সাহায্য করতে পারব না বলে হাত গুটিয়ে নেই। কিন্তু এটা ঠিক না। আমি যেটুকু পারব তা দিয়েই না হয় সাহায্য করি। এ ক্ষেত্রে আমি হযরত আলী ইবন আবী তালিব (রাঃ) এর একটা অসাধারণ উদাহরণ দিতে চাই, তা হলো,” অল্প দান করিতে লজ্জিত হইও না, কেননা বিমুখ করা অপেক্ষা অল্প দান করা অনেক ভাল”। এরপর আমরা আজকাল বিভিন্ন উদ্দোমী মানুষের বিভিন্ন পথ শিশু, বৃদ্ধ বা বিভিন্ন অসহায় মানুষদের নিয়ে কাজ করে। আমরা ইচ্ছে করলে তাদেরকেও যাকাত থেকে সাহায্য করতে পারি। এবার আবার আসি সেই শাড়ির কথায়।
আমার মনে আছে বেশ ক’বছর আগে আমার শ্বশুর বাড়িতে আমি যাকাতের শাড়ি দিয়ে শেষ করেছি মাত্র। এমন সময় একজন বৃদ্ধ মহিলা একটা মুরগি হাতে আমার কাছে এসে বলে, মা, আমাকে একটা শাড়ি দেও, আমার কেউ নেই। আমি তখন বৃদ্ধাকে বললাম, চাচি, শাড়ি তো সব দেওয়া শেষ। কিন্তু উনি বিশ্বাস করলেন না আমার কথা। বললেন, মা, আমার এই মুগিটা নিয়ে আমাকে একটা শাড়ি দেও। এই মুরগিটা আমি এক বাড়ি থেকে সদকা হিসেবে পয়েছি আর এই মুরগি যে রান্না করে খাব তারও কিছু নেই। আমার তখন ওনার কথা শুনে এত খারাপ লাগছিল যে আমি পরে ওনাকে বাজার থেকে একটা শাড়ি এনে দিয়েছিলাম। আর বলেছিলাম প্রতি বছর আমার কাছ থেকে শাড়ি নিয়ে যেতে। আর এক বছর আমার কাছে এক হিন্দু মহিলা আসলেন একটা শাড়ি নিতে। তিনিও একই ভাবে আমার কাছে একটা শাড়ি চাচ্ছিলেন, তবে একটু ইতস্ত বোধ করে। আমারর তখন ওনাকে একটা শাড়ি দিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আমার কাছের অনেকে বলেছেন অন্য ধর্মীকে যাকাত দেওয়া যাবে না। কিন্তু আমি পঞ্চম শ্রেণির ধর্ম বইয়ে দেখেছি যে, “ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে এমন লোককে যাকাত দেওয়া যাবে”। খুবই সুন্দর ও অসাধারণ নির্দেশ মহান আল্লাহ দিয়েছেন। তবে যেকোন একটা ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট বা দুর্বল হওয়া একজন মানুষের ব্যক্তিগত ইচ্ছা। কিন্তু আমরা সেই দিকে ওভাবে জোরালো নজর না দিয়েও শুধু আল্লাহর সৃষ্টি একজন মানুষ মনে করে মানবিক বিবেচনায় পারি অন্য ধর্মের বস্ত্রহীন বা অভূক্ত মানুষকে সাহায্য করতে।
ইসলামের সঠিক নিয়ম বা প্রয়োগ আমারা সঠিক ভাবে করতে পারলে সমাজে কোন দুঃসহ চিত্র দেখা যেত না।ইসলাম মানে বোমা, জঙ্গী,হত্যা,সংকীর্ণতা বা ধর্মের নামে বোকা বানানো নায়; ইসলাম মানে শান্তি। তাই আমরা অনেকেই সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দিতে চাইলেও যাকাত দিতে কেউই অপারগতা বা অনিচ্ছা করি না। এবং এই যাকাত ফান্ডকে কাজে লাগিয়েও আমরা সমাজের অনেক অসহায়ের অভাব বা চাহিদা পূরণ করতে পারি। তাই সবশেষে বলতে চাই আমরা যারা অনেকেই নির্দৃষ্ট পেশায় নিযুক্তহীন মানুষ বা বিশেষ কারে নারী,আমরাও ভাবতে চাই সমাজকে নিয়ে; আমরাও দিতে চাই সমাজকে কিছু আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী। কিন্তু আমাদের বিশেষ করে নারীদের সমাজকে দেওয়ার প্রতি আছে কিছু বাঁকা, কিছু কু, কিছু আড়,কিছু তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি যেটা আমাদের কোন পদক্ষেপ নিতে বাঁধাগ্রস্ত করে। তাই আমাদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে কোন বাঁধা আছে কি???
লেখিকা >> রুমানা রুমা, গল্পকার ও সমাজকর্মী ।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...