ব্রেকিং নিউজ
Home - জাতীয় - পিরোজপুর উপকূলে শতাধিক গ্রামে জোয়ারের প্লাবন নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে

পিরোজপুর উপকূলে শতাধিক গ্রামে জোয়ারের প্লাবন নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে

খালিদ আবু, পিরোজপুর >
উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি এবং অমাবস্যার জোয়ারের প্রভাবে পিরোজপুরের বলেশ্বর- সন্ধ্যা ও কচা নদীতে অতিজোয়ারের কারনে জেলার বিভিন্ন উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। এছাড়া জোয়ারের পানির তোড়ে সন্ধ্যা ও কচা নদী তীরবর্তী অন্তত ১৫টি গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়েছে। জোয়ারের পানির প্লাবনে একদিকে জনজীবনে দুর্ভোগ ও নদী তীরে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়ায় মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে আতংক।
কাউখালী বিআইডব্লিউটিএর গেজ পাঠক মো. হাবিবুর রহমান আলো জানান, জোয়ারের পানি পরিমাপ করে দেখা দেখাগেছে নদীতে ১৫ সেন্টিমিটারের অধিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই নদীর জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাউখালী উপজেলার জোলাগাতি, পাংগাশিয়া, বেকুটিয়া , আমরাজুড়ি, অশোয়া ও সোনাকুর পাল পাড়ায় তীব্র নদী ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। ভ্ঙানে সোনাকুর মৃৎ পল্লীর বাসিন্দারা আতংকের মধ্যে রয়েছেন।নি¤œাঞ্চলে প্লাবন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সন্ধ্যা নদীর প্রবল জোয়ারে কাউখালী শহরের উত্তর বন্দর, লঞ্চঘাট এলাকা, কুমিয়ান ও কচুয়াকাঠি ও আসপর্দি মহল্লা প্লাবিত হয়ে গেছে।
আমরাজুড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা চান জানান, কুমিয়ান এলাকার খাদ্যগুদাম ও ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় জোয়ারের তোড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকা হুমকীর মুখে রয়েছে।
এছাড়া কাউথালী-স্বরূপকাঠি আঞ্চলিক মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার কচুয়াকাঠি কাজী হারুন অর রশীদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বিথীকা রায় জানান, গত দুই দিনে সন্ধ্যা নদীর জোয়ারের প্লাবনে স্কুল মাঠ তলিয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জোয়ারের পানির তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে পাঠদানে বিঘœ ঘটে। ছাত্র ছাত্রীরা শ্রেণী কক্ষে পানি ঢুকে পড়ায় আতংকিত হয়ে পড়ে।
মঠবাড়িয়া পৌরসভার দক্ষিণ বন্দর এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানি উপচে শহরের দক্ষিণ বন্দর এলাকার ৫ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ২ সহ¯্রাধিক পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, শহরের প্রাণকেন্দ্রে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় দক্ষিণ বন্দর সেতু থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকার সড়কে ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এই এলাকার ৫ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতর পানি ঢুকেছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধসহ মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। পানিতে নষ্ট হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দক্ষিণ বন্দর খালের মোহনায় পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি অপরিকল্পিত ও অপ্রশস্থ স্লুইস গেট নির্মাণ করায় পানি অপসারণের ছোট দরজা দিয়ে ঠিকমতো পানি অপসারিত হচ্ছে না। এ ছাড়া শহরের তিন দিকের খালের দু’পাড় অবৈধ দখলদাররা দখল করে শত শত পাকা স্থাপনা নির্মাণ করায় খালটি সংকুচিত হওয়ায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। মঠবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুস ছালেক বলেন, শহরের ওই এলাকাটি অপেক্ষাকৃত নিচু। তাই অল্প জোয়ারেই শহরে পানি ঢুকে পড়ছে। ওই পানি রোধে শহর রক্ষা বাঁধ ও সড়ক উঁচু করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
অপরদিকে জিয়ানগরে বলেশ^র নদের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদী তীরবর্তী বেঁড়ি বাধের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙ্গন সৃস্টি হয়েছে। গত ৩ দিন ধরে জোয়ারে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় খোলপটুয়া, চন্ডিপুর, চরবলেশ^র, কলারন,কালাইয়া ও টগড়া, সেউতিবাড়িয়া, পাড়েরহাট, চাড়াখালী, গ্রামের এ কারনে নদী তীরবর্তী প্রায় ২০ হাজার মানুষ চরম দূর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ৯ গ্রামের শতশত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হওয়া এসব গ্রামের শত শত একর জমির বীজতলা ও ইরি ধানের ক্ষেত এখন পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। এছাড়া অসংখ্য পুকুর, মাছের ঘের ও পানের বরজ তলিয়ে গেছে পানিতে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য সংকট। এছাড়া বিভিন্ন বসতবাড়ি, স্কুল, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিক সহ কাচা পাকা রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগের শিকার হয়েছে স্কুলগামী শত শত শিক্ষার্থী।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...