ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - মঠবাড়িয়ার গুলিসাখালীর মুক্তিযোদ্ধা আলম ফরাজির জীবদ্দশায় স্বীকৃতি মেলেনি !

মঠবাড়িয়ার গুলিসাখালীর মুক্তিযোদ্ধা আলম ফরাজির জীবদ্দশায় স্বীকৃতি মেলেনি !

দেবদাস মজুমদার >

মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। মজিবুর রহমান আলম ফরাজি। মুক্তিযুদ্ধে তিনি প্রথমে সুন্দরবনের স্টুডেন্ট ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। পরে ভারতের আমলানী ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপকূলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীন দেশে বেঁচে থেকে দেশের জন্য এই অবদানের স্বীকৃতি পাননি দুর্ভাগা আলম ফরাজি। মুক্তিযোদ্ধার তালিকা ভূক্ত হতে না পেরে চরম হতাশায় এখন তিনি প্রয়াত।

প্রয়াত আলম ফরাজির পরিবার মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন। আর তাঁর সহযোদ্ধারাও চান মৃত্যুর পরেও হলেও আলম ফরাজির স্বীকৃতি।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার দক্ষিণ গুলিসাখালী গ্রামের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য আব্দুর রশীদ ফরাজি ও মৃত যমুনা খাতুনের ছেলে মজিবুর রহমান আলম ফরাজী মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় জড়িত ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ততকালীন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতার সাথে তিনিও মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমে সুন্দরবনের স্টুডেন্ট ক্যাম্পে প্রশিক্ষণে অংশ নেন। পরে ভারতের আমলানী কাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে উপকূলীয় সুন্দরবন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন। দুর্ভাগ্যের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পেয়েই তিনি প্রয়াত হন।

পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে,১৯৪৯ সালের ১৮ মে মজিবুর রহমান আলম ফরাজি মঠবাড়িয়ার দক্ষিণ গুলিসাখালী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। চার ভাই তিন বোন সাত ভাই বোনের মধ্যে সে চতুর্থ ছিলেন । তিনি গুলিশাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে উচ্চ মাধ্যমিক ও মঠবাড়িয়া সরকারি কলেজে লেখা পড়া করেন। শৈশব কৈশোর কাটে গ্রামে । তিনি ছাত্র থাকাকালে মঠবাড়িয়ায় ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ২২ বছর বয়সী তরুণ আলম ফরাজি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দেশ স্বাধীনের তিনি প্রায় ২০ বছর প্রবাসি জীবন শেষে দেশে ফিরে আসেন। এসময় তিনি কিডনী রোগে আক্রান্ত হন।

পরে ২০০৬ সালের ২৬ জুন তিনি গাজীপুরের জয়দেবপুরে নিজ বাসভবনে মৃত্যু বরন করেন । তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী সংসারের হাল ধরেন। তবে দুর্ভাগ্য প্রয়াত মজিবুর রহমান আলম ফরাজি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হলেও জীবদ্দশায় তাঁর কোন স্বীকৃতি মেলেনি।

উপজেলার গুলিসাখালী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বাদল বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আলম ফরাজি ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে তিনি স্টুডেন্ট ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে পরে ভারতের আমলানী ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। তাঁর সহযোদ্ধা হিসেবে ছিলেন, তখনকার ছাত্রলীগ রাজনীতির সাথে জড়িত মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা শাহ আলম দুলাল, এমাদুল হক খান ও দেলোয়ার হোসেন বাদল।

মজিবুর রহমান আলম ফরাজী একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্বেও আজও তিনি তালিকা ভূক্ত হতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি এ বিষয়ে কোনও চেষ্টাও করেননি। দুর্ভাগ্য তিনি এখন প্রয়াত । তাঁর এখন স্বীকৃতি হওয়া প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন,আলম ফরাজির মত গুলিসাখালী ইউনিয়নে অন্তত আরও সাতজন মুক্তিযোদ্ধা্ আজও তালিকাভূক্ত হতে পারেননি।

সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা নিরব মাহমুদ ও সাকু হাওলাদার বলেন, আলম ফরাজি মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাথে অংশ নিয়েছেন। কি কারনে জীবদ্দশায় তিনি তালিকাভূক্ত হতে পারেননি ঠিক জানিনা। তবে মৃত্যুর পরে হলেও তার স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।

প্রয়াত আলম ফরাজির স্ত্রী বদরুন্নেছা খানম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরে আমাদের বিয়ে হয়। তবে আমার স্বামী মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন এ কথা জেনে এসেছি। তিনি জীবদ্দশায় অনেক আক্ষেপ করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভূক্ত না হতে পারা তাকে অনেক হতাশ করেছিল। আমি,আমার স্বামী ও সন্তানদের দুর্ভাগ্য হয়ত। ২০০৬ সালের ২৬ জুন তিনি হতাশায় মারা যান। মুত্যুদিনে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক আমার মৃত স্বামীকে দেখতে আমার বাড়িতে এসেছিলেন। এসময় তিনি আমার শোকাহত পরিবারকে আশ্বস্ত করেছিলেন যাতে মুক্তিযুদ্ধে আমার স্বামীর অবদানের স্বীকৃতি মেলে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আজও আমার স্বামী তালিকাভূক্ত হতে পারেননি। আমার পরিবার নানা হতাশায় এ নিয়ে কিছুই করতে পারিনি। বর্তমান সরকার যদি আমার পরিবারের প্রতি সদয় হন তাহলে হয়ত আমার প্রয়াত স্বামী তালিকাভূক্ত হতে পারেন। সেই দাবি সরকারের কাছে জানাচ্ছি।

আলম ফরাজির বড় ছেলে মো. রাহাতিল আশিকিন অভি বলেন, ছোট বেলা থেকেই জেনে এসেছি আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্ত তিনি তালিকাভূক্ত হতে পারেননি। বাবার এমন দুর্ভাগ্য সন্তান হিসেবে অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

গুলিসাখালী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোশারেফ হোসেন বলেন, আমি যতদুর জানি আলম ফরাজি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ছাত্রলীগ রাজনীতির সাথে সক্রিয় জড়িত ছিলেন। শুনেছি তিনি তখনকার মুক্তিযোদ্ধা ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে জড়িত ছিলেন। তবে তিনি কি কারনে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভূক্ত হননি সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান আলম ফরাজির বাবা আব্দুর রশীদ ফরাজি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সেদিন ছেলেকে দিয়ে ছিলাম যুদ্ধে দেশ স্বাধীন করার জন্য কোন সনদ এর জন্য নয় তবে কষ্ট এতটুকু যে ছেলেটার নাম নাই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তবে এখন শুনলাম বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা নাকি এবার সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় করবে তাইলে আশাকরি এই তালিকায় নাম থাকবে।

মুক্তিযুদ্ধকালী সুন্দরবন অঞ্চেলের আসাদ নগরের কমান্ডিং অফিসার মজিবুল হক মজনু ২০০৩সালে প্রদত্ত একটি প্রত্যয়ণ পত্রে উল্লেখ রয়েছে, মজিবুর রহমান আলম ফরাজি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। সে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবনের স্টুডেন্ট ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। তিনি তাঁর অধিনে উপকূলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। জীবদ্দশায় তিনি তালিকাভূক্ত হতে পারেননি । মৃত্যুর পরে হলেও তার স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।

 

 

 

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...