ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - তিনি পাগল ছিলেন না..

তিনি পাগল ছিলেন না..

শা‌কিল আল আ‌মিন >
গত দুদিন হল শীতটা মনেহয় একটু বেশিই লাগছে। মহল্লার চা/পানের দোকান থেকে পান কিনছিলাম। এমন সময় বাবার বয়সী একটা লোক এসে দাঁড়ালেন। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখে মনে হয়েছে পাগল। গায়ে জড়ানো জীর্ণশীর্ণ একটা কম্বল। কম্বলটা দেখেও স্পষ্ট বোঝা যায় ওটাও কুড়িয়ে পেয়েছেন। দোকানে ঢুকতে উদ্ধত হলে দোকানীসহ বসে থাকা লোকজন কেমন দুরদুর করতে লাগলো। চোখের চাহনি আর মুখ দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল তিনি ক্ষুধার্ত কিছু খেতে চাচ্ছেন। কিন্তু সবার দুরদুর ভাব দেখে তিনি চলে যাচ্ছিলেন। মানবিক কারনে তাকে পিছু ডাকলে তিনি আমার দিকে তাকালেন। তখন তাহার চোখে মুখে রাগান্বিত ভাব দেখেছি। আমি ইশারায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
> কিছু খাবেন?
>তিনি মাথা ঝুলিয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলেন। তখন তার চোখেমুখে খুশী দেখতে পেলাম।
> আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি খাবেন?
> তিনি হাতের ইশারায় কলা দেখিয়ে দিলেন। আমি নিজের হাতে ছিঁড়ে তার হাতে দুটো কলা দিলাম। কিন্তু খেয়াল করলাম তার চোখ তখনো বন রুটির দিকে।
> বললাম রুটি নিবেন?
> তিনি আবারো মাথা ঝুলিয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিয়ে নিজের হাতেই একটা রুটি নিলেন। তখন লক্ষ করলাম, বসে থাকা অনেকেই তাকে রুটিতে হাত লাগাতে দেখে নাক ছিটকাচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার ছিলনা কারন আমি এই এলাকায় নতুন। কাউকে চিনিওনা তেমন করে। শুধু দোকানী আমাকে চিনেন।
>দোকানিকে জিজ্ঞাস করলাম, কত হইছে?
> সে বলল ৪৪ টাকা। পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমার কাছে ৩৮ টাকা আছে। ওটা তাকে দিয়ে বলাম ভাই বাকিটা আমি বাসা থেকে এনে দিচ্ছি। (সাথেই আমার বাসা ছিল) যতক্ষণে বাসায় গিয়ে টাকা নিয়ে আসলাম ততক্ষণে তার খাওয়া শেষ। তিনি উঠে চলে যাবার সময় দোকানে চায়ের কাপ রাখার ট্রের সাথে ওনার গায়ের সেই জীর্ণশীর্ণ কম্বলটা আটকে গেলে তিনি যেন আতকে উঠলেন। চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলেনঃ
> আল্লাহ ছিঁড়লো নাকি? এদিকে দোকানের কাপ পরে যাচ্ছে সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। তিনি বারবার বলতে লাগলেন ছিঁড়লো নাকি? ছিঁড়লো নাকি? তখন আর বুঝতে কষ্ট হয়নি যে কোন নর্দমা থেকে তুলে আনা ওই জরাজীর্ণ কম্বলটা তার কাছে কতটা মূল্যবান। তিনি কম্বলটা গায়ে থেকে খুলে বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিলেন। তখন লক্ষ করলাম তার গায়ে কম্বলটা ছাড়া আর কিছুই নেই।
জিজ্ঞেস করলামঃ
> জামা নাই?
> তিনি উত্তরে শুধু মাথাটা এপাশ ওপাশ করে বললেন,
> না।
আমি ওনাকে বসতে বলে আবার বাসায় গিয়ে আমার অব্যবহৃত একটা হুডি গেঞ্জি নিয়ে আসলাম। নিজের হাতে ওনাকে পরিয়ে দিলাম। তখন ওনার চোখেমুখে যে খুশী অবলোকন করেছি সেটা ছিল অকৃত্রিম। ততক্ষণে আশেপাশের দুরদুর করা সেই লোকদের মধ্যে কয়েক জনের দরদ উতলে উঠতে দেখলাম একটু কাছে এগিয়ে এলো তারা। সর্বোপরি তিনি চলে যাবার সময় নিজে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমার সাথে করমর্দন করলেন।
বললেনঃ
> আবার দেখা হবে। (স্পষ্ট শুদ্ধ বাংলা) খেয়াল করলাম তার চোখ ছলছল করছে। আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা যে তিনি পাগল ছিলেননা।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...