ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - স্বাধীনতা যুদ্ধ : যেভাবে শুরু ও বিজয়

স্বাধীনতা যুদ্ধ : যেভাবে শুরু ও বিজয়

নূর হোসাইন মোল্লা >

(তৃতীয় পর্ব )

স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বে ইহা প্রচারের জন্যে তিনি ৪টি পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। একটি ব্যর্থ হলে অপরটি সফল হবে। ৪ টি কার্যক্রমই সফল হয় । প্রথমতঃ পিলখানার ই,পি,আর, ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচার, দ্বিতীয়তঃ মগবাজার ওয়্যারলেস থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার, তৃতীয়তঃ ইস্টার্ন ওয়ারলেস ডিভিশনের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার এ,কে, এম, নুরুল হক এর মাধ্যমে বলধা গার্ডেনের গাছের চূড়ায় ট্রান্সমিটার স্থাপন করে স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচার করেন।
উল্লেখ্য, এ বেতার যন্ত্র থেকে প্রচারিত স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণসংযোগ অফিসার মেজর সিদ্দিক সালেকের রেডিওতে ধরা পড়েছিল, যেটি তিনি জেনারেল টিক্কা খানকে শুনিয়েছিলেন । তবে গলার আওয়াজ ছিল অতি ক্ষীণ, যাতে মনে হচ্ছিল খুব সম্ভবত ওটা আগেই রেকর্ড করা ছিল। চতুর্থতঃ চট্টগ্রামের প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরীর নিকট প্রেরণ করেন। স্বাধীনতা ঘোষণার পর রাত ১টা ৩০ মিনিটে লে. কর্ণেল জেড এ খান এবং মেজর বেলাল এর নেতৃত্বে পাকিস্তান কমান্ডো বাহিনীর একটি ইউনিট বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যান। ২৯ মার্চ ড. কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে। ৩১ মার্চ বন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকে করাচি নিয়ে যায়। পরে মিয়ানওয়ালী কারাগারে আটক রাখেন। ৬ এপ্রিল ড.কামাল হোসেনকে হরিপুর কারাগারে নেওয়া হয়। বলা আবশ্যক যে, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান ভাঙ্গার দায়িত্ব নিজ হাতে গ্রহণ করেননি। তিনি বিশ্ব বাসীকে দেখাতে চেয়েছেন যে, তিনি ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী তাঁর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি। তাঁরাই এ দেশের মানুষ নিধন এবং সম্পদ ধ্বংস করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সুতরাং বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর আর কোন বিকল্প পথ ছিল না।
জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি প্রচারের জন্য ২৬ মার্চ সকালে চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদের সভা আহবান করেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ, হান্নান ২৬ মার্চ বেলা দেড়টায় হঠাৎ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বার্তাটি প্রচার করেন মাত্র ২ মিনিটের জন্যে। দুপুর বেলায় মানুষ কাজে ব্যস্ত থাকায় অধিকাংশ লোকই এ ঘোষণা শুনতে পাননি। আগ্রাবাদাস্থ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রটি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আওতায় থাকায় বেতার প্রচার শুরু করা হলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের পান্ডু লিপিকার বেলাল মোহাম্মদ এবং বেতার কর্মী আব্দুস সালাম,আবুল কাসেম সন্দ্বীপ, আবুল ফজল ও হোসনেয়ারা বেগম তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম শহরতলী কালুরঘাট ট্রান্সমিশন থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় বেলাল মোহাম্মদ কালুরঘাট ট্রান্সমিশনটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নামকরণ করেন। অতঃপর আবুল কাসেম সন্দ্বীপ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তাটি পাঠ করেন। এ কেন্দ্রটি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সংগঠন। এ প্রচার ভবনের নিরাপত্তার জন্যে বেলাল মোহাম্মদের অনুরোধে মেজর জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ সকালে তাঁর কিছু সৈন্য পটিয়া থেকে কালুরঘাট প্রেরণ করেন। ওই দিন বিকেলে মেজর জিয়া ক্যাপ্টেন অলি আহমেদসহ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে আসেন। বেলাল মোহাম্মদের প্রস্তাবে ওই দিন প্রচার ভবনের অফিস কক্ষে মেজর জিয়াউর রহমান ইংরেজিতে একটি স্বাধীনতা ঘোষণা পত্র রচনা করেন। ঘোষণাটি বাংলায় অনুবাদ করেন অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহামেদ। ঘোষণাটি ছিল”I, Major Ziaur Rahman, On behalf of our great national leader Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, do hereby declare the independence of Bangaladesh. And that the government headed by Sheikh Mujibur Rahman has already been formed. It is further proclaimed that Sheikh Mujibur Rahman is the sole leader of the elected representatives of seventy five million people of Bangladesh and the government headed by him is the only ligitimate governmant of the people of the independent sovereign state of Bangladesh, which is legally and constitutionally formed and is worthy of being recognised by all the governments of the world. I, therefore, appeal on behalf of our great leader Sheikh Mujibur Rahman to the governments of all the democratic countries of the world, specially the big powers and the neighbouring countries to recognise the legal government of Bangladesh and take effective steps to stop immediately the aweful genocide that has been carried on by the army of occupation from Pakistan. The guiding principle of the new state will be first neutrality, second peace and third friendship to all and enmity to none. May Allah help us. Joy Bangla. “সন্ধ্যার কিছু পূর্বে তিনি তাঁর ঘোষণা লিপিটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করেন। কিন্তু ঘোষণা লিপিটি অনুসরণ না করে তিনি নিজেকে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্র প্রধান হিসাবে ঘোষণা করেন। তাঁর এ ঘোষণায় সবাই হতবাক হন। চট্ট্রগ্রামের প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং সাবেক মন্ত্রী আবুল কাসেম খান টেলিফোনে মেজর জিয়াউর রহমানকে বাস্তব অবস্থা বুঝিয়ে বলেন যে, তাঁর এ ঘোষণা বিপজ্জনক হতে পারে। এতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন পাওয়া যাবে না। এ ঘোষণা জনগণের মুক্তিযুদ্ধ না হয়ে সামরিক অভ্যুত্থান হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। রাজনৈতিকভাবে আমাদের বিপর্যয় হবে। স্বাধীনতা ঘোষণার দায়ভাগ বহনের ক্ষমতা এ মুহূর্তে শেখ মুজিব ছাড়া আর কারও নেই। মেজর জিয়া বিষয়টি বুঝে ওই দিনই সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বিশ্ববাসীর সহযোগিতা ও স্বীকৃতি কামনা করেন। মেজর জিয়ার ২য় ঘোষণার ফলে প্রথম ঘোষণাটির কার্যকরিতা হারায়। মেজর জিয়ার ঘোষণাটি ছিলঃ

I, Major Ziaur Rahman, Provisional Commander in chief of Bangladesh Liberation Army,hereby proclaim,on behalf of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman,the independenee of Bagladesh. I also declare,we have already framed a sovereign legal Government under Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, which pledges to function as per law and the constition. The new democratic government is committed to a policy of nonalignment in international relations. It will seek friendship with all nations and strive for international Peace. I appeal to all government to mobilige public opinion in their respective countries against the brutal genocide in Bangladesh.

The Government under Sheikh Mujibur Rahman is Soverign legal Government of Bangladesh and is entitled to recognition from all democratic nations of the word.

মেজর জিয়ার এ ঘোষণাটি ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়। তাঁর এ ঘোষণার পর দেশের ভিতরে শুরু হয় সর্বাত্মক প্রতিরোধ আন্দোলন। দেশের সাধারণ মানুষের মনে প্রচন্ড একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সারা দেশে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ই.পি.আর, পুলিশ,আনসার, মুজাহিদ বাহিনী, প্রাক্তন সৈনিক এবং আপামর জনগণকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করে।

( চলবে )

…………………………………………….
লেখকঃ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক
০১৭৩০-৯৩৫৮৮৭

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...