ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - স্বাধীনতা যুদ্ধ : যেভাবে শুরু ও বিজয়

স্বাধীনতা যুদ্ধ : যেভাবে শুরু ও বিজয়

নূর হোসাইন মোল্লা >

 

( পর্ব-১ )

“এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।”

পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁও নিবাসী প্রায়ত গোবিন্দ হালদারের রচিত দেশাত্মবোধক গানটি দিয়ে শুরু করছি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংঙ্গালি জাতির জীবনে আশ্চর্য অনুভূতিময় আনন্দ-বেদনায় শিহরিত এক উজ্জ্বল দিন। মহান স্মৃতি ‎চিহ্নিত এই দিনটিতে এদেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে প্রায় নয় মাস ব্যাপী এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের বিজয়কে। এদিন স্বদেশ ভূমিতে আত্মপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। এই বিজয়ের মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে জাতীয় জীবনের এক নবতর অধ্যায়। এদিনটি সরকারী ছুটির দিন। বাংলা দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একদিকে যেমন করুণ, শোকাবহ ও লোমহর্ষক, তেমনি ত্যাগের মহিমাব্যঞ্জিত ও বীরত্বপূর্ণ। এই যুদ্ধ ছিল শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের লড়ই, যালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের অনিবার্য প্রয়োজনেই এ যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়ে ছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আমাদেরকে উপহার দিয়েছে পরম প্রিয় স্বাধীনতা। বসবাস সূত্রে পাকিস্তানের বিখ্যাত সাংবাদিক এবং লেখক অ্যানথনি ম্যাসকারেনহাস বলেন, “The HoLY Sprit of the Liberation war could lead The Bengali reach the highest pinacle of success” প্রতি বছরই গর্ব ও আনন্দের সাথে এ দিনটিকে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে উদযাপন করে আসছি। কিন্তু স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে এবং জেল খানায় জাতীয় চার নেতা কেন নির্মম ভাবে নিহত হলেন এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজ করছি না। খোঁজ করছি না কিভাবে রাজাকাররা এ দেশের প্রধান মন্ত্রী এবং মন্ত্রী হয়েছেন। পাকিস্তানীদের ২৪ বছরের শাসন, শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়ে বলেন, “তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। ২৫ মার্চ রাত দেড়টায় গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে বঙ্গবন্ধু ক্লানডেস্টিন ট্রান্সমিটার এবং ওয়ারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিন্তু অতি অল্প সংখ্যক মানুষ ইহা শুনতে পেয়েছেন। ২৭ মার্চ সন্ধ্যা ০৭ টা ৪০ মিনিটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর শুরু হয় প্রথমে প্রতিরোধ পরে যুদ্ধ। এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। তবে এ কথা সত্য যে, জিয়াউর রহমান স্বপ্রণোদিত হয়ে এ উদ্যোগ নেননি। তিনি ঘোষনাটি দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বেলাল মোহাম্মাদের অনুরোধে। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধে অত্যন্ত সাহসী ভুমিকা রেখেছেন। কিন্তু স্বাধীনতার চরম বিরোধিতাকারী কুষ্টিয়ার শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধান মন্ত্রী এবং নীলফামারীর মশিউর রহমান যাদু মিয়া, জয়পুর হাটের আব্দুল আলিম, চাঁদপুরের মাওলানা আব্দুল মান্নান প্রমুখকে মন্ত্রী বানিয়ে তাঁর অবদান অনেকটা ভুলুন্ঠিত করেছেন। মহান ৪৫তম মহান বিজয় বার্ষিকীতে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি শতাব্দীর মহানায়ক আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রাণ পুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর চার জন ঘনিষ্ট সহকর্মী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহেম্মদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামানসহ স্বাধীনতার জন্যে প্রাণ দেয়া লাখ লাখ শহীদদের।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব প্রথম বিজয় আসে ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে বখতিয়ার খিলজীর বঙ্গবিজয়ের মধ্য দিয়ে। এ বিজয়ের পূর্বে এদেশের মানুষ ব্রা‏হ্মন্যবাদের যাঁতাকালে পিষ্ট হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরেছিল। তাদের স্বাধীন সত্তা বলতে কিছুই ছিল না। তাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার ছিল না। জ্ঞান চর্চার অধিকার ছিল না। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী মীর জাফর ও জগত শেঠদের সহায়তায় এদেশ দখল করে নেয়। ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তির জন্য গঠিত হয় ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং ১৯০৬ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। ভারতীয় উপমহাদেশে তিনটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪০ সালে পাশ হয় লাহোর প্রস্তাব। প্রস্তাবটি পেশ করেন শেরে বাংলা এ,কে, ফজলুল হক। ১৯৪৬ সালের মুসলিম লীগের দিল্লী কনভেনশনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রস্তাবে লাহোর প্রস্তাব সংশোধিত হয় এবং ভারতীয় উপমহাদেশে তিনটি স্বাধীন রাস্ট্রের পরিবর্তে দুটি রাস্ট্র ভারত ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সোহরাওয়ার্দী লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করে বাঙ্গালিদের মহা সর্বনাশ করেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারত বিভক্ত হলে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের নেতাদের সহায়তায় এদেশ পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত হয়। এটি ছিল আমাদের আরেক ধরণের পরাধীনতা। এখানে ইসলামের নামে পাকিস্তানীরা আমাদেরকে করে শাসণ ও শোষণ। কেড়ে নেয় আমাদের মুখের ভাষা, বঞ্চিত করে আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকার থেকে। বাঙ্গালীরা বুঝতে পারলো যে, তাঁরা পরাদিন। পরাধীনতা নাগপাশ থেকে মুক্তি পেতে হলে তাদেরকে আরেক সাগর রক্তের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। শুরু হল পাকিস্তানের যালিমদের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ন আন্দোলন। ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কখনো জুলুম পছন্দ করেননি। অন্যায়ভাবে যুলুম কারাকে তিনি অপরাধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তার মতে যলিমকে প্রতিহত করা আর মজলুমকে সহায্য করা মুসলমানদের কর্তব্য। পাকিস্তানীদের ৯বছরের শাসণ ও শোষণের বিরুদ্ধে ১৯৫৭ সালের ৭-৮ ফেব্রুয়ারী আওয়ামী লীগের কাগমারী(টাঙ্গাইল) সম্মেলনে মাওলানা ভাসানী পূর্ব বঙ্গের স্বায়ত্তশাষন দাবি করে বলেন, পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের শোষণ যদি বন্ধ না করা হয় তবে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানকে ওয়ালাইকুম আচ্ছাসালাম জানাবে। তাৎক্ষনিকভাবে তাঁকে কমিউনিষ্ট, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ভারতের দালাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ সময় মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সোহরাওয়ার্দী সাহেব তাঁর ভাষণের দৃঢ়তার সাথে দাবি করেন যে, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রে সরকার গঠন করায় পূর্ব পাকিস্তানে ৯৮ শতাংশ স্বায়ত্তশাসণ ইতোমধ্যেই অর্জিত হয়েছে। তাঁর এ দাবি সঠিক ছিল না। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদে স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থেকে নির্বাচিত গণতন্ত্রী দলের ( যুক্তফ্রন্ট ভূক্ত) সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। প্রস্তবটি সমর্থন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। ২৪ বছর পাকিস্তানী শাসনের যাঁতাকলে পিস্ট হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ২১৪ বছর ৫ মাস ২৩ দিন পর বাংলার আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার সূর্য। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিল সত্য ও ন্যায়ের বিজয়। সেদিন পরাজিত হয়েছিল অন্যায়, অসত্য ও মানবতা বিরোধী শক্তি। এ বিজয় দিবসের পটভূমিতে রয়েছে বাঙ্গালি জাতি সত্তা বিকাশের এক সংগ্রামী অধ্যায়, রয়েছে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর ২৪ বছরের শাসন, শোষণ আর নির্যাতনের করুণ ইতিহাস। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ‘৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ সালে স্বৈরাচারী আইউব খান সরকারের প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বিরোধী আন্দোলন, ‘৬৪ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে চ্যান্সেলর ও গভর্নর আবদুল মোনায়েম খানের হাত থেকে ছাত্ররা সনদপত্র গ্রহণে করতে অস্বীকার করলে অনুষ্ঠানে পুলিশের সাথে ছাত্রদের সংষর্ষ হয় এবং ৩১৩ জন ছাত্র গ্রেফতার হন। এম,এ, ডিগ্রী বাতিল করা হয় ছাত্রলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মনি এবং আসমত আলী শিকদারের। ৫ বছরের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হন সওগাতুল আলম সগীর ( ইকবাল হলের ভিপি), রাশেদ খান মেনন (ডাকসুর সহসভাপতি), কে,এম, ওবায়দুর রহমান, একে বদরুল হক বাচ্চু ( ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি) প্রমুখ। ‘৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ‘৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ‘৬৯ সালের ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের তীব্রতর মুখে সংঘটিত হয় স্বৈরাচারী আইউবখানের বিরোদ্ধে গণআন্দোলন এবং ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন। স্বাধিকার আন্দোলন পরিনত হয় স্বাধীনতার আন্দোলনে। গণ আন্দোলনের জোয়ারে ভেসে যায় পাকিস্তানের লৌহ মানব ফিল্ড মার্শাল মুহাম্মদ আইউব খান। ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ তিনি পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসেন জেনারেল আগা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া খান। তিনি ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বেতার ভাষণে তিনটি প্রতিশ্রুতি দিলেন। এগুলো হলো দোষী এবং অদক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থার পরিশোধন, পূর্ণ বয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সাধারণ নির্বাচন এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। প্রথম দু’টি প্রতিশ্রুতে তিনি আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু তৃতীয় প্রতিশ্রুতিতে তিনি আন্তরিক ছিলেন না। আইউব খান তাঁর দুস্কর্মের দ্বারা নিজের জন্যে যে মৃত্যুর ফাঁদ তৈরী করেছিলেন সে সম্পর্কে তিনি অত্যন্ত সজাগ ছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৭০ সালে ৫ অক্টোবর জাতীয় পরিষদ এবং ২২ অক্টোবর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেও তা পিছিয়ে ৭ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। ১২ নভেম্বর এদেশে স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের কারণে এদেশের উপকূলীয় এলাকার জাতীয় পরিষদের ৭টি আসনের নির্বাচন ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিপুলভাবে বিজয়ী করেন। জাতীয় পরিষদের ৩০০ সাধারণ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসন লাভ করে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৮৩টি আসন লাভ করে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন একটি দলের পক্ষে এত বেশী আসন লাভ করার নজির ইতোপূর্বে দেখা যায়নি। কিন্ত সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তান পিপলস্ পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ৬ দফার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাননি। ভূট্টো ২০ ডিসেম্বর লাহোরে ঘোষণা করেন যে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পিপলস্ পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসবে না এবং তার দলের সহযোগিতা ছাড়া পাকিস্তানের সংবিধান রচিত হবে না কিংবা কেন্দ্রে কোন সরকার পরিচালিত হবে না।
২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ ভূট্টোর এই ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন যে, আওয়ামী লীগ সংবিধান প্রণয়নে এবং কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে একাই যোগ্য। কেউ সাহায্য করলে ভাল, সাহায্য না করলেও আওয়ামী লীগ এককভাবে সেটা করবে। এরপর পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ মুনির পাকিস্তান টাইমস পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লিখেন। নিবন্ধে তিনি ৪টি প্রশ্ন তুলেন ১। আওয়ামী লীগের ৬ দফা প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ঘোষিত লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারের পরিপন্থি, ২। কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে আওয়ামীলীগের মেজরিটি আঞ্চলিক মেজরিটি মাত্র। পশ্চিম পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের কোন প্রতিনিধি নেই, ৩। গ্রহণযোগ্য সংবিধান রচনা করতে হলে শুধুমাত্র পূর্ব পাকিস্তানের মেজরিটিতে তা করা যাবে না। ৫টি প্রদেশ হতেই মেজরিটি সদস্যের সমর্থন পেতে হবে, ৪। মাত্র দুটি বিষয় নিয়ে কোন ফেডারেশন চলতে পারে না। আওয়ামী লীগ নিজেরাই যখন কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন তখন এত দূর্বল কেন্দ্র তাঁরা চাচ্ছেন কেন? ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারী ঢাকার জাতীয় মুজাহিদ সংঘ প্রকাশিত হয় স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের রুপরেখা নামে একটি পুস্তিকা।
অতঃপর বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি শপথ দিবস ঘোষণা করেন। এদিন বিকেলে তিনি ঢাকার রেসর্কোস ময়দানে এক বিশাল জনসভায় আওয়ামী লীগ দলীয় ১৫১ জন জাতীয় পরিষদ সদস্য এবং ২৬৮ জন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যকে ৬ দফা ও ১১ দফা বাস্তাবায়নের শপথ পাঠ করান। সংসদীয় ইতিহাসে এই ধরনের শপথ বিরল ঘটনা । শপথ শেষে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, আওয়ামী লীগ সারা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল । নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আমরা যে সংবিধান প্রণয়ন করব তা পাকিস্তানের জনগন গ্রহণ করবে। সংবিধান প্রণয়নের পথে কেউ বাঁধা সৃস্টি করলে চরম সংগ্রাম শুরু হবে। ৬ দফা আমাদের বাঁচার দাবি। ইহা বাঙ্গালির মুক্তির সনদ। ব্রিগেডিয়ার এ.আই. করীম বলেন, রেসকোর্স ময়দানে শপথ অনুষ্ঠান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে বিপন্ন করে এবং শেখ মুজিবকে ৬দফা্ ব্যাখ্যা করতে বলে। ব্যাখ্যা শুনে তিনি শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদি বলেন।

অতপর পাকিস্তান সরকার ৬ দফাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী পদক্ষেপ বলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার শুরু করেন। যারা এতদিন আওয়ামী লীগের সাথে ডিমোক্রাটিক এ্যাকশন কমিটি (ডাক) গঠন করে সংসদীয় গনতান্তিক শাসন ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করে আসছিল, সেই নেজামে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী, কাউন্সিল মুসলিম লীগ, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট(এন,ডি,এফ) প্রভৃতি রাজনৈতিক দলগুলো ৬ দফাকে পাকিস্তানের সংহতি বিরোধী, ভারতের ষড়যন্ত, পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার কর্মসুচি হিসেবে অভিহিত করে। এমনকি পি,ডি,এম, পন্থী আওয়ামীলীগের সভাপতি নবাবজাদা নসরুল্লা খান এবং পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আবদুুস সালাম খানও ৬ দফার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষির্কীতে ছাত্র নেতারা বঙ্গবন্ধুকে প্রচন্ড চাপ দিলেন যে, ৩ জানুয়ারি তিনি যা বলেছেন তার চেয়ে বেশি কিছু বলার জন্যে। তিনি ছাত্র নেতাদের বললেন, প্রয়োজন হলে আমি ডাক দিব। ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা অপেক্ষা কর। ৫ জানুয়ারি ভূট্টো কেন্দ্রে কোয়ালিশন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন। বঙ্গবন্ধু তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১১ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ঢাকায় আসেন এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও জাতীয় সমস্যা নিয়ে ২ দিন বৈঠক করেন। বঙ্গবন্ধু ১৫ ফেব্ররুয়ারি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অহবানের অনুরোধ জনান। কিন্তু প্রেসিন্ডেন্ট চুপ থকেন। ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহাল থাকতে চাইলেন, কিন্তুু বঙ্গবন্ধু তাঁকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তিনি আশ্রয় নেন জুলফিকার আলী ভূট্টোর কাছে। ১৪ জানুয়ারি ঢাকা ত্যাগ কালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের ভাবী প্রধান মন্ত্রী ঘোষণা করে তাঁকে সন্তষ্ট করার চেস্টা করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ফাঁকা বুলিতে বিমোহিত হননি। ১৭ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে হাজির হন লারকানায় জুলফিকার আলী ভূট্টোর বাড়িতে। ভূট্টো সেনাকর্মকর্তাদের আশ্বাস দেন যে, আমি তোমাদের সাথে আছি। তোমরা আওয়ামী লীগকে ৬ দফার ভিত্তিতে পাকিস্তান শাসন করার সুযোগ দিও না। লারকানায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, আওয়ামী লীগের হাতে কোন মতে ক্ষমতা দেয়া যাবে না। শুরু হয় ষড়যন্ত্র । ৮ ফেব্রুয়ারি ভূট্টো করাচিতে এক কর্মী সম্মেলনে বলেন যে, ক্ষমতার তিনটি স্তম্ভ- আওয়ামী লীগ, পিপলস্ পার্টি ও সেনাবাহিনী । ভূট্টোর এ ঘোষণার কঠোর সমালোচনা করেন বঙ্গবন্ধু। অনেক টালবাহনার পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৩ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করেন যে, ৩ মার্চ রোজ বুধবার বেলা ৯ টায় ঢাকায় প্রাদেশিক আইন পরিষদ ভবনে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
১৪ ফেব্রুয়ারি ভূট্টো পেশোয়ারে ঘোষণা করেন যে, ৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য অধিবেশনে তাঁর দল যোগদান করবে না এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অন্যান্য দলের সদস্যগণ যোগদান করতে পারবে না। ভূট্টোর পরামর্শে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ১ মার্চ বেলা দেড়টায় জাতির উদ্দেশ্যে বেতার ভাষণে ৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এই ঘোষনার পরপরই জনতার প্রতিবাদ মিছিলে ঢাকার অলি গলি ভেসে যায়। বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনীর সাথে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। হতাহত হয় শতশত মানুষ।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এইদিন বিকেল ৩ টায় ছাত্রলীগের চার নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী , শাহজাহান সিরাজ, আ,স, ম, আব্দুর রব ও আব্দুল কুদ্দুস মাখন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে এ দিন বিকেল ৪ টায় পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগের উদ্দ্যোগে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় হাজার হাজার কন্ঠে আওয়াজ উঠে যে, পকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন কর, বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা কর, বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থাগিত করার প্রতিবাদে এ দিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে অহিংস ও অসযোগ আন্দোলন ঘোষণা করেন। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা পূর্ব পাকিস্তানে অর্ধ হরতাল পালনের আহবান জানান। এ দিন রাতে ইকবাল হলের (বর্তমানে জহুরুল হক হল) ৩১৩ নং কক্ষে ছাত্র লীগের প্রাক্তন ৪ নেতা এবং ওই সময়ের ৪ নেতার এক ঐতিহাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই সভাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সভায় উপস্থিত ছিলেন ছাত্র লীগের প্রাক্তন নেতা শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ এবং ওই সময়ের ছাত্র লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী ও শাহ্জাহান সিরাজ, ডাকসু-এর ভি,পি এবং জি,এস, আ,স,ম, আব্দুর রব ও আব্দুল কুদ্দুস মাখন। সভায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ও জাতীয় সংগীতের কাঠামো ও রুপরেখা নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সভায় আরো সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় যে, ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রলীগের সভায় স্বাধীনতার প্রস্তাব পাঠ করা হবে। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্দ্যোগে ৩ মার্চ বিকেলে পল্টন ময়দানে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই সভায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইস্তেহার পাঠ করেন, উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা, ঘোষণা করা হয় জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি”। এটা ছিল ছাত্র লীগের দুঃসাহসী ও ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। স্বাধীনতার ইস্তেহারটি বঙ্গবন্ধু হাতে নিয়ে জনতার উদ্দেশ্যে বলেন যে, এ ইস্তেহারে যা কিছু আছে সবই আমার বক্তব্য হিসেবে গ্রহণ করবেন। তিনি ঘোষণা করেন, ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে থেকে ২ টা পর্যন্ত শান্তিপূর্নভাবে হরতাল পালিত হবে। এর মধ্যে যদি সরকার মনোভাব পরিবর্তন না করেন, তাহলে ৭ মার্চ আমার যা বলার তা বলব। ৬ মার্চ বেলা ১টায় বেতার ভাষণে প্রেসিডেনন্ট ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন পুনরায় আহবান করেন। তবে তিনি হুশিয়ার করে বলেন, যে কোন মূল্যে পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষা করা হবে। ৭ মার্চ বিকেলে হাজির হন পূর্ব পাকিস্তানের নয়া গভর্নর লেঃ জেনারেল টিক্কা খান। তিনি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে সামরিক দ্বন্দ্বে পরিনত করেন। বেলুচ হত্যাকারি হিসেবে এর পূর্বে পশ্চিম পাকিস্তানেই তাঁর কুখ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। অতঃপর রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল জনসভায় ঘোষণা করেন, “ প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পতিষ্ঠান গড়ে তুলুন এবং আমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। এ বারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এ বারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। তিনি আরও ঘোষণা করেন, যে পর্যন্ত আমার এই দেশ মুক্তি না হচ্ছে ততদিন কোর্ট-কাচারি, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিল-কারখানা বন্ধ থাকবে। সকল প্রকার ট্যাক্স বন্ধ থাকবে। বঙ্গবন্ধু এদিন স্বাধীনতা ঘোষনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তুু ৪টি কারনে স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি ১। স্বাধীনতা ঘোষণা করলে পাকিস্তান সরকার তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে বৃহৎ শক্তিবর্গের সাহায্যে বাঙ্গালীদেরকে কঠোর হস্তে দমন করবেন। ১৯৬৭-৭০ সাল পর্যন্ত নাইজেরিয়ার বায়াফ্রা প্রদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতা হিসেবে চিহ্নিত করে সরকার বৃহৎ শক্তিবর্গের সাহায্যে কিভাবে দমন করেছেন বঙ্গবন্ধু তা দেখেছেন। তিনি জাতীয় পরিষদের মেজরিটি দলের নেতা হিসেবে অপেক্ষা করেন, মাইনরিটি পশ্চিম পাকিস্তান কি করে? প্রেসিডেন্ট বিষয়টি রাজনৈতিক সমাধান না করে কঠোর হস্তে দমন করতে চাইলে তিনি স্বাধীনতা ঘোষনা করবেন। ২. ঢাকার জিওসি মেজর জেনারেল থাদেম হোসেন রাজা বঙ্গবন্ধুকে হুশিয়ারি বার্তা পাঠান যে, ৭ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এ সময় ঢাকায় অবস্থানরত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রিন্সিপাল ষ্টাফ অফিসার লেঃ জেনারেল জি, এম. পীরজাদার সহকারী বাঙ্গালী সিনিয়র অফিসার চট্টগ্রামের সন্তান ব্রিগেডিয়ার এম,আই, করিম এবং সেনা বাহিনীর কোর কমান্ডার অফিসের জেনারেল স্টাফ বাঙ্গালী মেজর গোপালগঞ্জের সন্তান মসিহ উদ দৌলা গোপনে সাক্ষাত করে বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দেন যে,স্বাধীনতা ঘোষণা করলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভয়ংকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এমনকি রেসকোর্স ময়দানে ট্যাংক, মেশিন গান, বিমান হামলা ও কামান দিয়ে গোলা বর্ষণ করে ঢাকাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে। ফলে শাসণ করার জন্য কেউ থাকবে না, শাসিত হবার জন্যেও কেউ থাকবে না। ৩। ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনীর গন সংযোগ অফিসার মেজর সিদ্দিক সালেক বলেন, ৬ মার্চ রাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান টেলিফোনে শেখ মুজিবকে স্বাধীনতা ঘোষণা না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন যে, আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি আপনার আকাঙ্খা এবং জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতির পুরোপুরি মর্যাদা দেয়া হবে । ৪্ . ৭ মার্চ সকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জোসেফ থারলল্যান্ট বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাত করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের বার্তা পৌঁছে দেন যে, যুক্তরাষ্ট্র কোন প্রকার বিচ্ছিন্নতাবাদি আন্দোলন সমর্থন করবে না।

তাই বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে একদিকে স্বাধীনতা অন্যদিকে সমঝোতার কথা বলেন। তাঁর এই ঘোষণা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাংঙ্গালী অফিসারবৃন্দ গ্রীণ সিগন্যাল হিসেবে গ্রহণ করেন। ৮মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন কঠোরভাবে পলিত হয় এবং ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেশ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনা বাহিনী এবং জনতার মধ্যে বিছিন্নভাবে সংঘর্ষ চলতে থাকে। এতে অসংখ্যক লোক হতাহত হয়। ৯মার্চ বিকেলে পল্টন ময়দানে এক জনসভায় মাওলানা ভাসানী পাকিস্তান ভাগ করে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব বাংলা নামে স্বতন্ত্র ২টি রাষ্ট্র করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহবান জানান। তিনি আরও বলেন যে, ২৫মার্চের মধ্যে এ দবি মেনে না নিলে তিনি শেখ মুজিবের সাথে মিলিত হয়ে স্বাধীনতার আন্দোলন করবেন।

লেখক > অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক

মোবাইল : ০১৭৩০৯৩৫৮৮৭

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...