ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম কে “সবুজ বাংলা” সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন

হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম কে “সবুজ বাংলা” সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন

বিশেষ প্রতিনিধি >
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানে বীর বিক্রম খেতাবধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিনকে সামাজিক সংগঠন “সবুজ বাংলা”র পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার মিরপুরে তাঁর বাসভবনে গিয়ে এ শ্রদ্ধা জানান সংগঠনের উদ্যোক্তার। সবুজ বাংলা পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংগঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা সবুজ রাসেল হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রমের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে বীর সন্তানকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন মোঃ নূরুল আমিন রাসেল, মুহাম্মাদ সাদিকুর রহমান, ইসলামিক আইন অনুষদ (ফিকাহ), আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর ও মঠবাড়িয়া সরকারী কলেজের ছাত্র এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান চৌধুরী শাকিল বাবু।14699815_659743354206575_574555154_n

এসময় হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম সবুজ বাংলা সংগঠনের উপকূলে পরিবেশ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি সবুজ বাংলার উপকূল জুড়ে এক লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগকে মহতি উদ্যোগ উল্লেখ করে জানান, বর্তমানে তিনি শারীরিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ। সুস্থ হয়ে তিনি মঠবাড়িয়াতে গিয়ে সবুজ বাংলা সংগঠনের সাথে মিলে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচিতে অংশগ্রহনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।14627758_659756154205295_1871883280_n

হেমায়েত উদ্দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর নেতৃত্বে বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হেমায়েত বাহিনী পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে অংশ নেয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।
হেমায়েত উদ্দিন ১৯৪১ সালের ৩ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার টুপুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ আবদুল করিম এবং মা সখিনা বেগম। কর্মজীবন হেমায়েত উদ্দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালের মার্চের মাঝামাঝি থেকে ছুটিতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি বিভিন্ন বাহিনীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকজনকে নিয়ে একটি ছোট দল গঠন করেন। তাঁদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদান ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের রাতের পর ২৯শে মার্চ তারিখে ঢাকার জয়দেবপুর সেনানিবাসে অবস্থানরত পাঞ্জাবি সৈন্যদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী সৈন্য এবং কর্মকর্তাগণ মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পরেন। বিদ্রোহী সৈন্যদের অন্যতম ব্যান্ডপার্টির হাবিলদার হেমায়েত উদ্দিন কয়েকজন সৈন্যকে নিয়ে ফরিদপুরে আসেন। এ সময় ফরিদপুরের স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় তিনি পাকিস্তান সৈন্যদের প্রতিহত করলে বেশ কিছুদিন ফরিদপুর পাক সৈন্য মুক্ত থাকে। কিন্তু ঢাকা থেকে আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রসহ পাকিস্তান সৈন্য ফরিদপুর গেলে হেমায়েত উদ্দিন সঙ্গীদের নিয়ে ২৮ শে এপ্রিল নিজ গ্রাম কোটালিপাড়ার টুপুরিয়ায় সরে আসেন। এ সময় স্থানীয় রাজাকারেরা তাকে আত্মসমর্পন না করলে তার ছেলে এবং স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার হুকমী প্রদান করে। হুমকীর খবর শুনে হেমায়েতের স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। হেমায়েত সেখান থেকে সরে গিয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহায়তায় মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি এবং তার সঙ্গীরা কোটালিপাড়া থানা আক্রমণ করে প্রচুর অস্ত্র নিজেদের দখলে নেয়। হেমায়েত বাহিনী কিছুদিনের মধ্যেই হেমায়েতের মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি একটি বিরাট বাহিনীতে রূপ নেয়। এ বাহিনীতে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল সর্বমোট ৫,৫৫৮ জন। এ বাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্র বরিশালের উত্তরাঞ্চল, খুলনা-বাগেরহাট ও যশোরের কালিয়া সহ গোপালগঞ্জ এবং মাদারীপুরের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। হেমায়েত বাহিনী পরিচালনার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ বাহিনী ৪২টি দলে বিভক্ত ছিল। প্রতিটি দলে কমান্ডার, সহকারী কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়েছিল। তবে কেন্দ্রীয় ভাবে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালিত হত। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে কোটালিপাড়ার জহরেরকান্দি হাই স্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। হেমায়েত বাহিনীর মধ্যে বিচার বিভাগও ছিল। নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ২ জন গ্রুপ কমান্ডার সহ মোট ৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল । তাঁর নেতৃত্বে ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে হেমায়েত বাহিনী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রায় ৫০০ পাকিস্তানি সেনাকে পরাস্ত করে এই এলাকা শত্রুমুক্ত করে। ২ ডিসেম্বর রাতে ২৪ জন সাব কমান্ডার নিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন চূড়ান্ত আক্রমণের।
তাঁর একটি সাক্ষাতকারে তিনি উল্লেখ করেন, ১৪ জুলাই পাকিস্তানি বাহিনীর তিনটি শক্তিশালী দল ব্যাপক ফায়ার কভারের সাহায্যে মাদারীপুর, টেকেরহাট হয়ে আমাদের চলবিলের ক্যাম্পের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। ওদের একটি দল রামশীলে ঢুকে পড়ে। এ খবর পেয়ে আমরা পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নিই। মাত্র ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আমি আক্রমণ করি এবং আশপাশের দলগুলোকে খবর দিই। হানাদার বাহিনী যেদিক থেকে আসছিল সেদিকে নিজে পজিশন নিয়ে থাকি। ২৫-৩০ গজের মধ্যে এলে আমি মেশিনগান থেকে গুলি ছুড়তে থাকি। শুরু হয় উভয়পক্ষের তুমুল গোলাগুলি। পাকিস্তান বাহিনীর একটি গুলি হেমায়েত বাহিনীর এক নায়েক যোদ্ধা মকবুলের মাথার খুলি ভেদ করে চলে গেল। তাঁর লাশ টানতে গিয়ে শত্রুর অন্য একটি গুলি আমার মুখের চোয়াল ভেদ করে ১১টি দাঁত ও জিহ্বার এক টুকরো মাংস নিয়ে বেরিয়ে যায়। কাউকে কিছু না বলে মকবুলের হাতের মেশিনগানটি অন্যকে চালাতে দিয়ে এবং নিজে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে আবার যুদ্ধ শুরু করি। এরই মধ্যে প্রায় এক হাজার মুক্তিযোদ্ধা আশপাশের ক্যাম্প থেকে এসে অংশ নেয় এবং পাকিস্তানি বাহিনীকেচারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলি। প্রায় ৪৫ মিনিট গোলাগুলির পর শত্রু বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি হয়। হেমায়েত বাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনীর ১৫৮ জন হতাহত হয়। পরে আমি আরোঅসুস্থ হয়ে পড়ি এবং ডা. সুরেন্দ্রনাথ,ডা. বেলায়েত ও ডা. রণজিৎ বাবুর চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠি।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...