ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - শিক্ষার মান উন্নয়ন ও কিছু ভাবনা 📖🕯️

শিক্ষার মান উন্নয়ন ও কিছু ভাবনা 📖🕯️

অধ্যক্ষ মো. আলমগীর হোসেন খান▶️

“শিক্ষা হল মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের বিকাশ” সক্রেটিস একটি দেশ কতটুকু উন্নত হবে অথবা তার ভবিষ্যৎ কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে তা বোঝা যায় তার শিক্ষা সংক্রান্ত পরিকল্পনার ভিতর দিয়ে । সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণরূপে শিক্ষা ক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থা দেখে উপলব্ধি করা যায় । প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের সরকার নানা ভাবেই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রতিটি নাগরিকের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক প্রয়াস চালাচ্ছে ।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশাল সাফল্য । যা প্রণয়ন করেছেন । বাস্তবায়ন করতে হবে । এক সময় আমাদের দেশে যে পদ্ধতিতে ফলাফল প্রকাশ করা হত তার কিছু ত্রুটি ছিল । শুধু ফার্স্ট ডিভিশন বা স্টার মার্কস পেলেই চলতনা । শিক্ষার্থীরা বোর্ড পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ইত্যাদি হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করত । এতে শিক্ষার্থীদের শরীর ও মনের উপর প্রচন্ড চাপ পরত । গত সাত বছর ধরে চালু হয়েছে সৃজনশীল প্রশ্ন । শিক্ষার্থীরাও একে খুব সহজে গ্রহণ করেছে । কারণ তারা দেখছে এতে ভালো জিপিএ পাওয়া যাচ্ছে । সৃজনশীলতার কারনে শিক্ষার্থীদের চিন্তাশীলতার বিকাশ হয় । সৃজনশীল প্রশ্নের সৃজনশীল উত্তর দেয়া হচ্ছে কিনা এটা শিক্ষকদের যাচাই করা জরুরী ।

যেহেতু এর মাধ্যমে আমরা মেধার মূল্যায়ন করছি তার মাপার যন্ত্রটি ঠিক থাকতে হবে । সৃজনশীল প্রশ্নকে কোন কাঠামোতে বন্দী করা যাবে না । সৃজনশীল প্রশ্ন করার জন্য শিক্ষকদের দক্ষতাও খুব জরুরী একটি বিষয় । আমাদের শিক্ষার্থীরা যত সহজে এ পদ্ধতির সংগে খাপ খাইয়ে নিয়েছে শিক্ষকরা সেভাবে পারছেন না । এখানে দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে । সে কারনে কিছু সংখ্যক শিক্ষকরা নেতিবাচক কথাও বলছেন । তবে এর কারন রয়েছে । শিক্ষকদের বেতন ভাতায় অনেক বৈষম্য রয়েছে । যার জন্য মেধাবীরা এ পেশায় এগিয়ে আসতে চান না । একজন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী অর্জনকারী মেধাবী ব্যক্তি পেশা হিসেবে কখনোই শিক্ষকতাকে বেছে নিতে চান না । শিক্ষকতাকে খাটো করে দেখা হয় । বিশ্বের অনেক দেশেই এখন শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বেশি । আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতও শিক্ষকরা ভাল বেতন পাচ্ছেন । একেবারে প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষকদের বেতন ভাতা ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি হলে এ পেশায় সামাজিক মর্যাদা বাড়বে । মেধাবীরা আকৃষ্ট হবে । যে পর্যায়ে শিক্ষকতা করুকনা কেন শিক্ষাগত যোগ্যতার উপর বেতন স্কেল নির্ধারিত হবে ।

শিক্ষা জাতীয়করণ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রানের দাবী । শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার । আমাদের এখন তিনটি কাজ করতে হবে । প্রথমত, শিক্ষকদের বেতন কাঠামো আকর্ষনীয় ও সন্তোষজনক করতে হবে । দ্বিতীয়ত, নিয়োগ প্রক্রিয়া NTRCA এর মাধ্যমে সততার সাথে । তৃতীয়ত, শিক্ষক প্রশিক্ষণের বর্তমান ধারার সংস্কার । প্রতিবছর প্রায় চার কোটি বই সরকার ছাপিয়ে বিনামূল্যে পৌছে দিচ্ছে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে । প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও পড়ার বইটি নববর্ষের দিনে যথা সময়ে পেয়ে যাচ্ছে । এ ছাড়া তথ্য প্রযুক্তিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নটিও নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় । NCTB-এর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে সকল শ্রেণীর সকল বিষয়ের বইয়ের সফটকপি । আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আরেকটি সমস্যা হল, আমরা পাবলিক পরীক্ষা বাড়াচ্ছি । অথচ দুনিয়ার সব দেশে কমানো হচ্ছে । অন্যান্য দেশে যিনি পড়াবেন তিনিই পরীক্ষা নেবেন এটাই হচ্ছে পরীক্ষা পদ্ধতি । আমাদের দেশে আগে দুটো পাবলিক পরীক্ষা ছিল । এখন হয়েছে চারটি । শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ঠ কেউ একে সমর্থন করবেন না । পরীক্ষায় নকল প্রবনতা দূর করতে হবে । শিক্ষকদের বলা, অভিভাবকদের দৌড়া দৌড়ি বন্ধ করতে হবে । একজন শিক্ষকের সঠিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মাধ্যমেই সুশৃংখল ও প্রানবন্ত হয়ে উঠে ঐ শ্রেণির কার্যক্রম । শিক্ষক তার নিজস্ব চিন্তা চেতনা, ব্যক্তিত্ব, মেধা-যোগ্যতা, মননশীলতা আর আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করবেন । একজন শিক্ষককে হতে হবে দৃঢ়চেতা, উত্তম নৈতিক চরিত্রের অধিকারী, নিরপেক্ষ, অকুতোভয়, সত্যবাদী । তিনি তার অনুপম চরিত্র মাধুর্য দিয়ে শিক্ষার্থীর মন জয় করবেন। এক কথায় তিনি হবেন তার নিজস্ব স্বকীয়তায় অভিনেতা-শিক্ষক, শিক্ষার্থীর নিকট এক অনুস্মরনীয় আদর্শ ।

শিক্ষার মান উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে সরকারকে-

১। একটি পূর্ণাঙ্গ ও দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষানীতি প্রনয়ন করতে হবে ।

২। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের অবকাঠামোগত কাজগুলো ফেলে না রেখে যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে ।

৩। শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষনীয় করে তুলতে শিক্ষা জাতীয়করণ করতে হবে ।

৪। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রাধান্য দিয়ে কোচিং বানিজ্য বন্ধ করতে হবে ।

৫। শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষামূলক বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে ।

৬। ম্যানেজিং কমিটি/ গভর্ণিং বডির দৌড়াত্ম কমায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ রাখতে হবে ।

৭। ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ ২ বছর থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ৩ বছর করতে হবে ।

৮। কমিটির সভাপতি সহ সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সন্তোষজনক নির্ধারণ করতে হবে ।

৯। প্রশ্নফাঁস, নকল এবং অভিভাবক ও শিক্ষকদের দৌড়া-দৌড়ি শক্ত হাতে বন্ধ করতে হবে ।

১০। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে ।

১১। এইচএসসি পাশের পূর্বে মোবাইল ব্যবহারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান থাকতে হবে ।

১২। পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার এবং নম্বর বেশী পাওয়ার অসুস্থ্য প্রতিযোগীতাকে নিরুৎসাহিত করতে হবে ।

শিক্ষার মান উন্নয়নে অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকের করনীয়ঃ

১। শিক্ষার্থীদের বাধ্য না করে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করে তোলা।

২। মোবাইল সহ বিভিন্ন অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করা ।

৩। শিক্ষা সংক্রান্ত দূর্ণীতিকে প্রশ্রয় না দেয়া ।

৪। নিজের সন্তান বা আশে পাশের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার পাশা পাশি সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করা, বই পড়ার প্রতি আকৃষ্ট করানো নিশ্চিত করতে হবে ।

৫। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে । তার সন্তান কোথায় যায়, কি করে, কাদের সাথে চলে সে দিকে সু দৃষ্টি থাকতে হবে ।

৬। শিক্ষার্থীদেরকে মাদকাসক্ত থেকে বিরত রাখতে হবে ।

শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন করতে হবে ।

১। শিক্ষকতা একটি মহান পেশা ।

এই পেশায় তিনি শিক্ষক সুলভ আচরনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজেকে মহান শিক্ষক হিসেবে মেনে নেয়ার আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হবেন ।

২। গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে শ্রেণি পরিচালনা করতে হবে ।

৩। “আমি পারব” শিক্ষার্থীদেরকে অনুপ্রানিত করতে হবে ।

৪।শিক্ষার্থীর পেশাগত জীবনের লক্ষ্য জেনে মনোবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে আচরণ করতে হবে ।

৫। মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে Digital Content তৈরী করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা যোগ্যতা অবশ্যই অর্জন করতে হবে ।

৬। শিক্ষক পেশাগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, নিজ প্রতিষ্ঠানে আয়োজিত In House Training এ অংশগ্রহনের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে ।

৭। Global Village বা বিশ্বগ্রাম এর মাধ্যমে সফল শিক্ষক হিসেবে শ্রেণিতে কার্যকরী পাঠদান করতে হবে । ৮।অটিস্টিক/অসুস্থ্য/রোগাক্রান্ত শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের আলাদা সুদৃষ্টি রাখতে হবে ।

৯। শিক্ষার্থীদেরকে বাজে আড্ডা, মোবাইল ব্যবহার, মাদক থেকে বিরত রাখতে অভিভাবকদের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিতে হবে ।

১০।শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষার প্রতি প্রেষণা সৃষ্টি করতে হবে ।

১১। শিক্ষককে তার পাঠদানের বিষয়টি সম্পর্কে সু স্পষ্ঠ জ্ঞান থাকতে হবে ।

১২। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এ তিন পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ উন্নয়নে শিক্ষককে ভূমিকা রাখতে হবে ।

লেখকঃ অধ্যক্ষ মোঃ আলমগীর হোসেন খান, মিরুখালী স্কুল এন্ড কলেজ, মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর ।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...