ব্রেকিং নিউজ
Home - অপরাধ - ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা দিবস আজ

ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা দিবস আজ

আজকের মঠবাড়িয়া অনলাইন >>

আজ ২৫ মার্চ ভয়াল স্মৃতির কালরাত। ইতিহাসের বর্বরতম ‘গণহত্যা দিবস’ । নির্মম, নৃশংস ও ভয়াবহ এক হত্যাযজ্ঞের মর্মবেদনার দিন। এবারই প্রথম দিবসটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১১ই মার্চ জাতীয় সংসদে এ প্রস্তাব পাস হবার পর ২০শে মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে ২৫শে মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একাত্তরের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস ও বর্বর হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য জাতিসংঘে যোগাযোগ এবং এ বিষয়ে জাতিসংঘে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে ।

রথমবারের মতো ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনও নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সভা, সমাবেশ, র‌্যালি, প্রদীপ প্রজ্বলন, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোকচিত্র, তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচি। সারা দেশজুড়ে ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতিনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

১৯৭১ সালের এই রাতে মুক্তিকামী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছিল বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে এ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকা ব্যাপক গণহত্যা চালায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষদের ওপর চালায় গণহত্যা ও বর্বর নির্যাতন। তাদের হাত থেকে রেহায় পাননি শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, নারী, শিশু, দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। একটি মুক্তিকামী জাতির স্বাধীনতা ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে হায়েনার হিংস্র নখরে ক্ষতবিক্ষত হয় মানবতা। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে আলোচনার নামে গোপনে সামরিক প্রস্তুতি নিতে থাকে। কিন্তু ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলার মানুষ। বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) স্বাধীনতার দিক-নির্দেশনামূলক ঐতিহাসিক এক ভাষণ দেন। যা প্রকৃতপক্ষে ছিল বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের মূলমন্ত্র। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অসহযোগ আন্দোলন। এরই ধারাবাহিকতায় এই রাতে নৃশংস এক হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা করে হানাদার বাহিনী। এ রাতে ইয়াহিয়ার লেলিয়ে দেয়া বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, শিক্ষক কলোনি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) ব্যারাকসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকা এবং বস্তিবাসী, ঘুমন্ত মানুষের ওপর আক্রমণ চালিয়ে শুরু করেছিল বিশ্ব ইতিহাসের এক নজিরবিহীন গণহত্যা, নিপীড়ন ও অত্যাচার।
২৫শে মার্চ রাতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় হানাদার বাহিনীর অগ্নিসংযোগে চারদিকে আগুন জ্বলতে থাকে। চতুর্দিকে বিরামহীন গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে বিনিদ্র রাত কাটায় নগরবাসী। হঠাৎ করে হানাদার বাহিনীর আক্রমণ ও রাস্তায় রাস্তায় তাদের সশস্ত্র টহলে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ ঘরের কোণে আশ্রয় নিয়েও শেষরক্ষা করতে পারেনি। স্বাধীনতাকামী বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহা চিরতরে মুছে দেয়ার জন্য ঢাকার বাইরেও চলেছে গণহত্যা। এ হত্যাযজ্ঞে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল বিশ্ববিবেক। তবে, বর্বরতার বিপরীতে প্রতিরোধে জেগে ওঠতে বেশি সময় নেয়নি অদম্য বাঙালি। বাঙালি জাতির এগিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিসাৎ করতে হানাদার বাহিনী এ হত্যাযজ্ঞ শুরু করলেও নির্যাতিত মানুষের প্রতিরোধ স্পৃহার স্ফুলিঙ্গ এ রাত থেকেই দাউ দাউ করে জ্বেলে ওঠে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রতিরোধে এগিয়ে আসে সেনাবাহিনী ও পুলিশের বাঙালি সদস্যরা। শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। এরই ধারাবাহিকতায় নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত হয় স্বপ্ন সাধের স্বাধীনতা। বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো লাল সবুজের স্বাধীন ভূখণ্ড, স্বাধীন বাংলাদেশ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী অপারেশন সার্চলাইট শুরুর জন্য রাত সাড়ে ১১টায় ছাউনি থেকে বেরিয়ে আসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ফার্মগেটের মুখে হানাদার বাহিনী প্রথম প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। সেখানেই তারা চিৎকার করে পুরো ঢাকায় কারফিউ ঘোষণা করে। ছাত্র-জনতা বাধা দিলে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। ডিনামাইটের মাধ্যমে ব্যারিকেড উড়িয়ে দিয়ে শহরে প্রবেশ করে সেনারা। রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয় ব্যারিকেড। প্রতিরোধকারী বাঙালি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ট্যাংক, মর্টার, রকেট ব্যবহার করে সেনাবাহিনী। শুরু হয় চারদিকে গোলাগুলির বিস্ফোরণ, মানুষের আর্তচিৎকার। এরই মধ্যে হানাদাররা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে হানা দেয়। বাসভবনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। রাতেই বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। অবশ্য গ্রেপ্তারের আগেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের ঘোষণা দেন। মধ্যরাতে সেনাবাহিনী পিলখানা, রাজারবাগ ও নীলক্ষেত আক্রমণ করে। হানাদার বাহিনী পিলখানা ও নীলক্ষেতে প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। পাকিস্তানি সেনারা ট্যাংক, মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল করে ফেলে। প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর পিলখানার ইপিআর ব্যারাকের পতন হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধে নিহত হন অসংখ্য পুলিশ সদস্য। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাংক-মর্টারের গোলায় আগুনের লেলিহান শিখায় একদিকে নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়। অন্যদিকে এ রাতের বিসর্জিত রক্তের ওপর দিয়েই পরদিন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় নতুন প্রতিজ্ঞার ইতিহাস, শুরু হয় মুক্তির জন্য যুদ্ধ। নয় মাস বাঙালির মরণপণ যুদ্ধে অর্জিত হয় রক্তের পতাকা। স্বাধীনতাকামী মানুষের রক্তভেজা ২৫শে মার্চ তাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ একটি ক্ষণ। এ দিনে শুরু হওয়া রক্তের স্রোতে ভেসেই জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...