ব্রেকিং নিউজ
Home - অপরাধ - মুসলিম মেয়ের সঙ্গে প্রেমের অপরাধে জয়দেবের চোখ তুলে পিটিয়ে হত্যা !

মুসলিম মেয়ের সঙ্গে প্রেমের অপরাধে জয়দেবের চোখ তুলে পিটিয়ে হত্যা !

দেবদাস মজুমদার >

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার দক্ষিণ পূর্ব ভান্ডারিয়া গ্রামের চায়ের দোকানী বাবুল চন্দ্র পাইকের ছেলে বরিশাল বিএম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত জয়দেব কুমার পাইকের সাথে পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার ছোনাউটা গ্রামের শাহেদ আলী খানের মেয়ে খাদিজা আক্তারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এই অসম সম্পর্কের অপরাধে স্থানীয় একটি মহল পরিকল্পিতভাবে মেধাবী ছাত্র জয়দেবের চোখ তুলে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে তাকে গ্রামবাসির হাতে ডাকাত আটকের পর গণ পিটুনীতে নিহত বলে প্রচারণা চালানো হত্যাকারীরা । কাঁঠালিয়া উপজেলার ছোনাউটা গ্রামের গ্রামপুলিশ সোহেল খলিফা বাদি হয়ে গত ৭ অক্টোবর কাঁঠালিয়া থানায় এমন একটি এজাহার দায়ের করে। এতে অজ্ঞাত ৭০/৮০জন গ্রামবাসিকে আসামী করা হয়।
তবে নিহত জয়দেবের পরিবারের দাবি, জয়দেব পাইকের সাথে মাদ্রাসা ছাত্রী খাদিজা আক্তারের হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক গড়ে ওঠার অপরাধে গত ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় তাকে ডেকে নিয়ে গভীর রাতে তার চোখ তুলে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর গ্রামবাসির হাতে ডাকাত নিহত হওয়ার মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয় । স্থানীয় গ্রামপুলিশ সোহেল খলিফা, খাদিজার পরিবাবের সদস্যসহ স্থানীয় কয়েকজন মিলে পরিকল্পিতভাবে এ নৃশংস হত্যাকা- চালায় বলে নিহত জয়দেবের পরিবার অভিযোগ। এ ঘটনায় নিহত জয়দেবের বাবা চায়ের দোকানী বাবুল চন্দ্র পাইক বাদি হয়ে ছেলে হত্যার অভিযোগে ১৬জনকে অভিযুক্ত করে গত ২৭ অক্টোবর ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ।

এদিকে শুক্রবাবার সকালে নিহত জয়দেবের পরিবার ভান্ডারিয়া প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, জয়দেব মেধাবী শিক্ষার্থী সে কখনই ডাকাত নয়। তার ছেলে জয়দেব পাইক বরিশাল বিএম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্র বিভাগন বিভাগে এমএ শ্রেণীতে লেখা পড়া করছিল। লেখা পড়ার পাশাপাশি সে ভা-ারিয়ায় গ্রাম আদালতের মাঠকর্মী ও আরএফএল কোম্পানীতে পার্টটাইম চাকুরীও করত। এমন অবস্থায় খাদিজা আক্তার নামে একটি মুসলিম মেয়ের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই অসম প্রেমের অপরাধে পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে জয়দেবের চোখ তুলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর অভিযুক্ত আসামীরা এ হত্যাকান্ড গণপিটুণীতে ডাকাত নিহত বলে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। তবে কাঁঠালিয়া থানা পুলিশ এ নির্মমতার ঘটনাটি তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনেনও গড় একমাসেও চেষ্টা চালায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত জয়দেবের বাবা লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, জয়দেবের সাথে পার্শ্ববর্তী সোনাউটা গ্রামের মো. শাহেদ আলী খানের ছেলে ফোরকান খানের সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কের সুবাদে জয়দেব ও ফোরকান উভয়ই একে অপরের বাড়িতে যাতায়ত করত। এ কারনে জয়দেবের সাথে ফোরকানের ছোটবোন খাদিজা আক্তারের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তা প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয়। এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে খাদিজার পরিবার স্থানীয় গ্রামপুলিশসহ পাড়া প্রতিবেশী মানুষের চাপের মধ্যে পড়েন। এরপর গ্রামপুলিশ সোহেল খলিফা,রহিম খান, সিদ্দিক খান ও শাহজাহান মিলে খাদিজার ভাই ফোরকানকে ডেকে নিয়ে গালমন্দ করে। এসময় তারা ফোরকানকে হিন্দু ছেলের সাথে খাদিজার প্রেমের সর্ম্প কেন হল, এতে সমাজে মুসলমানের ধর্ম ও সম্মানহানী হয়েছে এ মর্মে ফোরকানকে শাসানো হয়।

নিহত জয়দেবের বাবা অভিযোগ করেন, গত ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় বরিশাল থেকে জয়দেব পাইক ভা-ারিয়ার বাড়িতে আসে। সন্ধ্যায় সে ভান্ডারিয়া শহরের ভূবনেশ্বর সেতুর কাছে বাবার চায়ের দোকানে বসে । এসময় রাত আটটার দিকে গ্রামপুলিশ সোহেল খলিফা , খাদিজার ভাই ফোরকান ও নিকট আত্মীয় টিভি মেকানিক আব্দুল কাদের দুইট ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলযোগে ওই দোকানে আসে। তারা জয়দেবকে কথা আছে বলে ডেকে নিয়ে যায়। আব্দুল কাদের জয়দেবকে তার মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। এরপর জয়দেব আর বাড়িতে ফেরেনি। পরদিন সকাল অনুমান সাতটার দিকে জয়দেবের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে তার মা আলো রানীর মোবাইলে একজন কলদিয়ে জানায় জয়দেব অসুস্থ হয়ে কাঁঠালিয়া হাসপাতালে ভর্তি আছে। এর কিছুক্ষণ পর কাঁঠালিয়া থানা থেকে মোবাইল করে জয়দেবের পরিবারকে জানানো হয় জয়দেব থানায় আটক আছে। এরপর তার পরিবারের সদস্য কাঁঠালিয়া থানায় গিয়ে পুলিশের হেফাজতে তার লাশ দেখতে পায়। এসময় পরিবারকে জানানো হয় জয়দেব ডাকাত । সে পালানোর সময় বিক্ষুব্দ গ্রামবাসির গণপিটুনিতে মারা গেছে। এরপর নিহত জয়দেবের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
নিহত জয়দেবের বাবা বাবুল চন্দ্র পাইক অভিযোগ করেন, তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছেলে ডাকাত নন। তাকে পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে চোখ তুলে নৃশংসভাবে হত্যা করে ডাকাত বলে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হযেছে। তিনি আরও দাবি করেন, মুসলিম মেয়ে সাথে প্রেমের সম্পর্কের কারনেই তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। খাদিজার নিকট আত্মীয় আব্দুল কাদের চাকু দিয়ে জয়দেবের চোখ উপড়ে ফেলে এরপর অভিযুক্তরা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তাকে হত্যা করে । পরে লাশের গলায় রশি লাগিয়ে টেনে হিচড়ে ছোনাউটা গ্রামের একটি মাদ্রাসার সামনে লাশ ফেলে রেখে গ্রামবাসির হাতের ডাকাত নিহত বলে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল হতে জয়দেবের লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনার পরদিন স্থানীয় গ্রাম পুলিশ সোহেল খলিফা পরিকল্পিত হত্যা- ধামাচাপা দিতে কাঁঠালিয়া থানায় একটি মিথ্যা সাজানো এজাহার দায়ের করে।

এদিকে নিহত জয়দেবের বাবা বাবুল চন্দ্র পাইক ছেলে হত্যার বিচার দাবি করে গত ২৭ অক্টোবর ঝালকাঠি জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। (মালা নম্বর- জিআর-১৩৪/১৬) । মামলায় ১৬জনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলায় খাদিজার নিকট আত্মীয় কাঁঠালিয়ার ছোনাউটা গ্রামের টিভি মেকানিক আব্দুল কাদের হাওলাদার,খাদিজার ভাই ফোরকান খান ও গ্রাম পুলিশ সোহেল খলিফাসহ ১৬ জনকে আসামী করা হয়েছে।
আদালত মামলাটি কাঁঠালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

এ ব্যাপারে কাঁঠালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাহিদ হোসেন বলেন, জয়দেব নিহত হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে নিহতর বাবা আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে আদালতে জয়দেবের বাবার দায়ের করা মামলার কাগজপত্র আমার দপ্তরে এখনও আসেনি। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক দুই মামলাই তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...