মানুষের মানচিত্র 🔻 তারুণ্যের জয়গান

0
84


🌿
আমার কমিউনিটিতে কিছু বুদ্ধিবাদি মহতী তারুণ্য আমায় বিস্মিত করে। মাঝে মাঝে আমি তাদের কর্মে নতজানু হই। আমি তাই তারুণ্যের জয়গান গাই। কারও কারও জীবন বোধ আমাকে নাড়িয়ে দেয়। আমার আপন শহরে কিছু সম্ভাবনাময় তরুণ কবি বেড়ে উঠছে। এদের বেশীরভাগ তরুণই আমায় ভিষণ ভালোবাসেন বলে আমি হয়তো আজও তারুণ্যের চোখে সমাজ সভ্যতা দেখি। আর তারুণ্যের পায়ে হেঁটে আমার বাঁচতেও ভালো লাগে।

তরুণের নাম আহাদ আহসান। আহাদ আমার ভক্ত মুখ। অনেকদিন দেখা হয়না। আহাদের কবিতা লেখার বাতিক আছে সেতো আমার জানা। আমরা যখন কিছু তরুণকে নিয়ে শহরে পাঠাগার আন্দোলনটা শুরু করেছিলাম তখন থেকে আহাদ আহসানও সহযাত্রী হিসেবেই আছে।তবে আহাদের সাথে আমার ব্যস্ততায় অনেক দিন ধরে দেখা নেই।
আহাদ আজ সন্ধ্যা বেলায় অনেকদিন পর হঠাৎ করে আমায় ফোন করেন।
দাদা, আমি আহাদ চিনতে পারছেন। বলি ঠিক না ভাই। দাদা আমি আহাদ আহসান। এইবার বলি,উদীয়মান কবি আহাদ আহসান। এরপর আহাদ বলতে থাকেন, দাদা আপনাকে একটা বিষয় ইনবক্সে দিয়েছি। একটু অনুগ্রহ করে পড়বেন। ভাবি এই করোনা সংকট সময়ে নানা জনে কত কি ভিডিও পাঠায় সবটা দেখা হয়না। অনেকে নানা সমস্যার কথা জানায় । ভাবি আহাদ হয়তো কোনও সমস্যায় পড়েছেন । ফোনে বলতে চাইছেনা লাজুক তরুণ।
এই মধ্য রাতে আহাদের ইনবক্সে আসা বিষয়টা খুঁজে বেরে করে আমি তো অবাক ! আহাদ আমায় লিখেছে –

দাদা, আপনার সাথে আমার খুব ভালোভাবে পরিচয় সতেরোর শেষে। আপনি বই পড়তে বলতেন, লিখতে আর মানুষের পাশে দাড়ানোর কথা বলতেন। পাঠাগার আন্দোলন আর শুভসংঘ নামে সামাজিক সংগঠন করেছিলেন। আমি আপনাকে অনুসরণ করে চলেছি । অনেক সামাজিক উদ্যোগে আপনার সাথে ছিলাম।
দাদা মূল কথায় আসি, করোনা পরিস্থিতিতে সবাই যার যার দিক থেকে মানুষকে সাহায্য করে আসছে। আমার সাহায্য করার তেমন সামার্থ্য নেই। ভাবলাম লেখালিখি করি, ভিন্ন কনসেপ্টে কিছু আনা যায় কিনা যাতে করে একজন মানুষের উপকার হলেও হবে। দাদা, আপনি আমার কবিতা প্রকাশ করেছিলেন । আপনি আমায় নিয়মিত লিখতেও বলেছিলেন।
তাই সাহস করে আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতাটা আমি নিলামে তুলেছিলাম আমার ফেসবুকে। কবিতার নাম ছিলো প্রিয় মানুষ। একটা কবিতা নিলামে তোলার পর বেশ সাড়া পেলাম আপনার দোয়ায়। মিশর প্রবাসী নুর নবী হোসেন নামে মঠবাড়িয়ার এক বড় ভাই কবিতাটি চার হাজার টাকায় কিনে নেন। তিনি টাকাও আমাকে পাঠিয়েছেন। আজ টাকাটা পেয়ে আমি করোনা দুর্গত কয়েকজন মানুষকে উপহার সামগ্রী কিনে পৌঁছে দিয়েছি।
লেখার নিচে তরুণ কবি আহাদ দুর্গত মানুষকে সহায়তার বেশ কিছু ছবিও পাঠিয়েছে।
আমি আহাদের কাণ্ডটা বিস্ময়ে নিয়ে ভাবছি অনেকক্ষণ। একটা কবিতা নিলামে বিক্রির ভাবনাটা কি করে আসে ! আবার সেই টাকায় করোনা দুর্গত মানুষের সহায়তার মহতী ভাবনাটাও । আর ভাবছি একটা কবিতা কেউ নিলামে কেনে !
আহাদ আসলে আমার কাছে এখন বিস্ময় মুখ। আর বিস্ময় মানুষ সেই প্রবাসি যে এরকম অখ্যাত এক তরুণ কবির কবিতা নিলামে কিনে করোনায় দুর্গত মানুষের জন্য হাত বাড়িয়েছেন।
আহাদের নিলামের কবিতার আখ্যান সত্যি আমাকে অবাক করে দিয়েছে।
আমি এইসব তারুণ্যের কেবল জয়গান গেয়ে যেতে চাই।
আমাদের তারুণ্য বেঁচে থাক মহতী কর্মে।

দেবদাস মজুমদার
উপদেষ্টা সম্পাদক
আজকের মঠবাড়িয়া

About The Author