ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - শহীদ নূর হোসেন মঠবাড়িয়ার মাটির সন্তান

শহীদ নূর হোসেন মঠবাড়িয়ার মাটির সন্তান

নূর হোসাইন মোল্লা <>

‘‘স্বৈরাচার নিপাত যাক; গণতন্ত্র মুক্তিপাক’’ এ শ্লোগানটি সম্পর্কে আমরা সবাই পরিচিত। এ শ্লোগানটি যিনি বুকে ও পিঠে ধারণ করে লেঃ জেনারেল হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর পুলিশের গুলিতে শহীদ হন, তিনি হচ্ছেন নূর হোসেন। নূর হোসেনের পুরো পরিচয় আমরা অনেকেই জানি না। তাঁর পৈত্রিক নিবাস পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলাধীন সাপলেজা ইউনিয়নের ঝাটিবুনিয়া গ্রাম। তাঁর পিতার নাম মজিবুর রহমান ওরফে কাঞ্চন মিয়া এবং মাতার নাম মরিয়ম বেগম। মজিবুর রহমান বাড়ির নিকটস্থ নলী ভীমচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে তাঁর পিতা হাছেন আলী হাওলাদারকে কৃষি কাজে সহায়তা করতে থাকেন। ৫ ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। মেঝো ভাই চান মিয়ার সাথ মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকায় আসেন। প্রথমে তিনি একটি হোটেলে কাজ করেন এবং মালিকের অনুমতি নিয়ে মাঝে মাঝে বেবী ট্যাক্সি ড্রাইভিং গ্রহণ করেণ। অতঃপর তিনি হোটেলের কাজ ছেড়ে দিয়ে ভাড়ায় বেবী ট্যাক্সি চালাতে শুরু করেন। কয়েক মাস পরে তিনি মালিকের কাছ থেকে বেবী ট্যাক্সিটি ক্রয় করেন। তিনি ১৯৬১ সালে মুন্সিগঞ্জের মেয়ে মরিয়ম বেগমকে বিয়ে করেন এবং নারিন্দায় ভাড়া করা বাসায় বসবাস করতে থাকেন। এ বাসায় ১৯৬৫ সালে নূর হোসেন জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে তাঁর পিতা নারিন্দার বাসা ছেড়ে দিয়ে বনগ্রাম রোডের মঠবাড়িয়া নিবাসী এ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ চৌধুরীর ৭৯/১নং বাড়ির একাংশ ভাড়া করেন। নূর হোসেন বনগ্রাম রাধাসুন্দরী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী পাশ করে বনগ্রাম গ্রাজুয়েট হাইস্কুলে ভর্তি হন। সেখানে ১০ম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে লেখপড়া ছেড়ে দিয়ে ড্রাইভিং ট্রেনিং গ্রহণ করতঃ একজন দক্ষ গাড়ী চালক হন। তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদক হন। তিনি তাঁর পিতার সাথে মাঝে মাঝে পৈত্রিক নিবাস মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামে আসতেন। নূর হোসেনের পিতা ২০০৫ সালের ৫ মার্চ ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন। নূর হোসেন ছিলেন ৫ ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তিনি স্বাধীনচেতা ছিলেন। জেনারেল এইচ.এম. এরশাদের স্বৈরশাসনের অবসান ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্যে ১৯৮৩ সালে ৫ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দল এবং বিএনপি’র নেতৃত্বে ৭ দল সমন্বয়ে ১৫ দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। আন্দোলনের ফলে জেনারেল এরশাদ ১৯৮৬ সালের ৭মে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ৮ দলীয় জোট এবং জামায়ত-ই-ইসলাম অংশ গ্রহণ করে। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হওয়ায় বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে ১৯৯০ সালের ১০ নভেম্বর ‘‘ঢাকা অবরোধ’’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ দিন নূর হোসেন তাঁর গায়ের জামা খুলে বুকে ও পিঠে সাদা রং দিয়ে ‘‘স্বৈরাচার নিপাত যাক; গণতন্ত্র মুক্তিপাক’’ লিখিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগের গণমিছিলের সামনে গিয়ে ধ্বনি তুলেন ‘‘স্বৈরাচার নিপাত যাক; গণতন্ত্র মুক্তিপাক’’। মিছিলটি পুলিশের বাঁধা অতিক্রম করে জিপিও এর সামনে আসলে পুলিশ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। ঘটনাস্থলে তিনি শহীন হন। অতঃপর তাঁর বুকে ও পিঠে লেখা শ্লোগানটি সারা দেশের জনতার শ্লোগনে পরিনত হয়। ফলে জেনারেল এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে অমর এ শহীদের নামানুসরে জিপিও-এর জিরো পয়েন্টের নাকরণ করা হয়েছে ‘নূর হোসেন স্কোয়ার’। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ১৯৯১ সালে তাঁর নামে স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ করেছে। নূর হোসেন বুকে ও পিঠে লেখা ‘‘ ‘‘স্বৈরাচার নিপাত যাক; গণতন্ত্র মুক্তিপাক’’ মানব পোষ্টার হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ৫ ভাই বোনের মধ্যে নূর হোসেন ছিলেন দ্বিতীয়। গণতন্ত্রের অমর সৈনিকের পরিবারকে আওয়ামী লীগ সরকার মিরপুর-২ মাজার রোডে ৫ কাঠা জমি দান করেন এবং সেখানে ‘‘শহীদ নূর হোসেন টাওয়ার’’ নির্মিত হচ্ছে।

শহীদ নূর হোসেন মঠবাড়িয়ার মাটির সন্তান। তাই এ বিপ্লবীর স্মৃতি ধরে রাখতে নিজ গ্রামের ঝাটিবুনিয়া সরকারী প্রাথমিকি বিদ্যালয়টি শহীদ নূর হোসেনের নামে এবং মঠবাড়িয়ার পৌরসভায় তাঁর নামে একটি চত্বর, ম্যুরাল আর একটি সড়কের নাম করণের জন্য কর্তৃপক্ষের সুুদৃষ্টি কামনা করছি।

লেখক : অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...