ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - উপকূলের ছবিওয়ালা খ্যাত সাংবাদিক দেবদাস মজুমদারের জন্মদিন আজ।

উপকূলের ছবিওয়ালা খ্যাত সাংবাদিক দেবদাস মজুমদারের জন্মদিন আজ।

মেহেদী হাসান বাবু : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উত্তর মিঠাখালী গ্রামে সাংবাদিক ও আলোচিত্রী দেবদাস মজুমদার ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তবে স্ত্রীর চাকুরীরর সুবাদে এখন থাকেন বরগুনা জেলার বামনা উপজেলায়। সাদামাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত এই মানুষের অন্তরচোখে যেন দিব্যজ্যোতি। সহজ সরল জীবনবোধের মানুষ তিনি উপকূলের প্রাণ ও প্রকৃতির দৃশ্যকাব্যের কারিগর। সাংবাদিক আর সেই সাথে তিনি ছবিয়াল। দীর্ঘ ৩৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে তিনি পেয়েছেন উপকূলীয় জনমানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা। সরকারী বা বেসরকারীভাবে বড় কোন সম্মানের অধিকারী না হলেও তিনি দক্ষিন উপকূলের একজন মোনাজাত উদ্দিনের উত্তরসূরী হয়ে অবিরত লিখেছেন অধিকার বঞ্চিত উপকুলের জীবনযাত্রা নিয়ে। মঠবাড়িয়ার মিঠাখালী গ্রামের সম্ভ্রান্ত মিস্ত্রী বাড়ির শরৎ চন্দ্র মজুমদার ও প্রভাষিনী মজুমদারের মেঝ ছেলে। দেবদাস মজুমদার তিনবছর বয়সী এক ছেলে সন্তানের জনক। স্ত্রী একটি বেসরকারী কলেজের শিক্ষিকা। স্নাতক ডিগ্রী ধারী দেবদাস মজুমদার গ্রাম সাংবাদিকতাকে পেশায় পরিনত করেছেন। শত সংকটে টিকে থাকার মত দৃষ্টান্ত এই মানুষ দুর্যোগে জন মানুষের পাশে দাড়াবার মত সৎ ও সাহসী।

উপকূলের প্রাণ ও প্রকৃতির সাথে যিনি নিয়ত মিশে থাকেন। প্রান্তিক মানুষ,সবুজ প্রকৃতি, প্রজাপতি, ফুল,পাখি, পোকা মাকড় বর্ণিল পতঙ্গ তাঁর জীবধারায় একাকার। প্রাণ ও প্রকৃতির অনুসঙ্গ হয়েই তিনি যেন বাঁচেন। পথের ধারে অযত্নে পড়ে থাকা গাছের কচি শোভন পাতা কিংবা বিবর্ণ পাতায় ক্ষয়িষ্ণু জীবন কিছুই তাঁর দৃষ্টির আড়ালে নয়। প্রাণ ও প্রকৃতি টিকে থাকা ও তার পর্যায় কর্তণের নানা আবহ ক্যামেরার ফ্রেম বন্দী করে চলেছেন। আর এসব ছবি নিয়ে নিয়মিত দৃশ্যকাব্য লেখেন। প্রাণ বৈচিত্র্য বাঁচানোর দায় থেকে তিনি উপকূলের পথে পথে হাটেন। সাথে তাঁর সঙ্গী হয় ক্যামেরা। পেশায় পুরোদস্তুর একজন মফস্বল সাংবাদিক। তিনি উপকূলের মোনাজাত উদ্দিনের যেন উত্তরসূরি। মফস্বল সাংবাদিকতায় আছেন আড়াই যুগেরও বেশী সময়কাল ধরে। উপকূলের জন জীবনের সুখ দু:খ আর প্রাণ বৈচিত্র্য নিয়ে অবিরাম লিখে চলেছেন।তবে ছবি তোলা তাঁর সেই পেশাকে যেন ছাড়িয়ে গেছে। কোন স্বীকৃতির আশায় নয় । ছবি তোলা ও দৃশ্যকাব্য লেখা মানুষ হিসেবে দায়বদ্ধতারই অংশ। প্রতিদিন নিত্য নতুন প্রাণ প্রকৃতির ছবি যেন তাকে আপনা আপনিই ধরা দেয়। আর প্রতিদিন নতুন নতুন ছবি নিয়ে ফেসবুকে লেখেন দৃশ্য কাব্য। তিনি পেশায় নিমগ্ন একজন চারণ মফস্বল সাংবাদিক। উপকূলের আলোর মানুষ দেবদাস মজুমদার।

দশম শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় লেখালেখি শুরু করেন। প্রথমে লিটল ম্যাগাজিন দিয়ে শুরু। এরপর পিরোজপুর থেকে প্রকাশিত অনধুনা লুপ্ত পিরোজপুর দর্পণ ও উপকূল সমাচারে মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। এরপর কাজ করেন সাপ্তাহিক মুক্তিবাণী, সচিত্র সন্ধানী। দৈনিক ভোরের কাগজ প্রকাশের শুর থেকে মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি পরে তিনি ওই পত্রিকার পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভোরের কাগজে তিনি টানা আটবছর কাজ করেন। পরে দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশের শুরু থেকে তিনি মঠবাড়িয়া প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম আলোতে তিনি টানা দশ বছর কাজ করেন। এসময় তিনি উপকূলের জন জীবন নিয়ে আলোচিত প্রতিবেদন লেখেন। ঘূর্ণিঝড় সিডরে বিপন্ন উপকূলের দুর্গত মানুষের অসংখ্য খবর ও প্রতিবেদন লিখে বেশ আলোচিত হন। পরে দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আঞ্চলিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুর করেন। এর আগে মঠবাড়িয়া থেকে প্রকাশিত অধূনালুপ্ত সাপ্তাহিক মঠবাড়িয়া সমাচারে সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি আজকের মঠবাড়িয়া নামে একটি নিউজ পোর্টালের উপদেষ্টা সম্পাদক ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত কৃষি ও পরিবেশ বিষয়ক অনলাইন পোর্টাল বারসিক নিউজ ডট কম-এ বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূল অঞ্চল হিসেবে নিয়মিত কাজ করছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি একজন সাংস্কৃতিক কর্মী, পরিবেশ কর্মী। তিনি বহুধা প্রতিভার অধিকারী। তিনি লেখালেখি ও ছবি তোলার পাশাপাশি একজন মঞ্চ অভিনেতা আবৃত্তিকার ও অংকন শিল্পী। তিনি উপকূলে দুই হাজারেরও অধিক লিটল ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ একেছেন। সর্বপরি তিনি একজন পেশাদার আলোকচিত্রী । ১৫ হাজারেরও অধিক ছবির ভা-ার তাঁর কাছে। রাত পোহালেই তিনি ছবি তোলেন। এসব ছবি উপকূলের প্রাণ ও প্রকৃতির শিল্পরূপ পায় তাঁর ফ্রেমে। তাঁর ছবি সরল ও সাধারণ হলেও আছে নান্দনিতকতার ছোঁয়া। ফটোগ্রাফী কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাঁর। তিনি আসলে স্বশিক্ষিত আলোকচিত্রী। কোন পুরস্কার কিংবা স্বীকৃতির আশায় নয়। মানুষ হিসেবে দায়বোধ থেকে তিনি এসব করেন। তিনি সাংবাদিকতায় বাউলতরী ফাউ-েশন পুরস্কার ও শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ হতে সম্মাননা পেয়েছেন। শিল্পকলা একাডেমী দেশে প্রথমবারের মত প্রজাপতি নিয়ে ‘বাটারফ্লাই বাংলাদেশ ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন-২০১৫’ প্রদর্শনীতে তাঁর চারটি ছবি স্থান পেয়েছে। এর আগে প্রাণ প্রকৃতির ছবি নিয়ে নোয়াখালীর ফটোগ্রাফী সংগঠন আয়না বাংলা ফটোগ্রাফি প্রদর্শণীতে তার ছবি প্রদর্শিত হয়। উপকূলের দৃশ্যকাব্যের কারিগর নদী ও নৌকার দেশের মানুষ দেবদাস মজুমদার নির্মোহ জীবনের শেষ অবধি দৃশ্যকাব্যের ছবিয়াল হয়ে উপকূলেই থাকতে চান।আজ এই গুনী সাদা মনের মানুষটির জন্ম দিন আমার ব্যক্তিগত ও আজকের মঠবাড়িয়া পরিবারের পক্ষে থেকে শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।

Leave a Reply

x

Check Also

লাইটার জাহাজের ধাক্কায় চরখালী ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে বিধ্বস্ত 🔴 যানবাহন চলাচল বন্ধ

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার কঁচা নদীর চরখালী-টগরা ফেরিঘাটের চরখালী ঘাটে একটি জাহাজের ধাক্কায় ফেরির ...