ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - ফিনল্যাণ্ডে আমার ঈদ

ফিনল্যাণ্ডে আমার ঈদ

মাইনুল ইসলাম >
১৫ কোটি মানুষের প্রিয় বাংলাদেশ ছেড়ে মাত্র ৫৩ লাখ জনসংখ্যার দেশ ফিনল্যাণ্ডে এসেছি। আছি টানা ১৭ বছর ধরে। এক জীবনে এটা দীর্ঘ সময় । প্রিয় মঠবাড়িয়ার ঘর বসতি পরিবার আত্মীয় স্বজন প্রিয় বন্ধুদের মুখগুলো ভিষণভাবে টানছে। সব সময়ই মাতৃভূমির টান যেমন থাকে সকল প্রবাসির আমারও তা ব্যাতিক্রম নয় । ঈদ কিংবা কোরবানীর সময়গুলোতে নাড়ির টান আরও গভীরভাবে অনুভব করি। মানুষের এক জীবনে এ যেন এক অন্যরকম বেঁচে থাকা। আলাদা সংস্কৃতি আর জীবনাচারে জীবনকে মানিয়ে নিতেও হয়। অভ্যস্ত হতে হয় । মাত্র ৫০ খেকে ৬০ হাজার মুসলিম যাদের বেশীরভাগই সোমালিয়ান,তুর্কী,কুরদিস,বাংলাদেশী, মরোক্কোসহ আরও কয়েকটি দেশের নাগরিক। সেখানে আমি বাঙালী মুসলিম।
প্রতিবছর এখানেও ঈদ আসে । কোনভাবে আসে । ঠিক দেশের মত করে নয়। যেন লবন ছাড়া তরকারীর মতোন । আমি অবশ্য ফরমাল সবকিছুই দেশের মানুষের মত করে করি । কিন্ত সব সময়ই মনে হয় কি যেন নেই । ঈদের দিন এখানে নামাজ পড়ি। কাছের মানুষদের বাসায়ও যাই। আমার বাসায়ও কিছু মানুষ আসে । আমার স্ত্রী ঈদের আগের দিন ও মধ্যরাত পর্যন্ত সেমাই,জর্দা,পায়েশ, চটপটি ও অন্যান্য খাবার দাবারও তৈরি করেন। নিজের পরিবার ও সন্তান নিয়ে প্রবাসে আছি বলে আপন ঘর ছেড়ে আসার কিছুটা কষ্ট ভুলে থাকি।14331098_10205350322397593_108574430_n
কোরবানী দেই কিন্ত গরু কখনও দেখিনা । কারণ এখানে সরকার অনুমোদিত কসাইখানা ছাড়া অন্য কোথাও জবাই করা যায়না । এটা ফিনল্যাণ্ডের নিয়ম। এটা সকলের মানতে হয়। রাষ্ট্রের এই নীতিমালা-আইন মানতেই হয়। আজ সোমবার ঈদ,। নিজ দেশের সকলেই যেভাবে কোরবানী দিয়েছে সেভাবে ফিনলাণ্ডে হবার নয়। কোরবানীর দিনের মাংশ পাব আগামীকাল মঙ্গলবার । এখানে ১৭ বছর ধরে প্রতিবছরের মত কোরবানীতে ৭ ভাগে কোরবানী দিয়েছি। এক ভাগে ৫০ কেজি মাংস পাব।এবারের গরুর ওজন ২৮০ কেজি কেজি প্রতি দাম পড়েছে ৬ ইউরো । যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫২২টাকা।14331096_10205350323197613_1729738011_n

আমার মত ৪ থেকে ৫ হাজার বাঙালী জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ফিনল্যাণ্ডে বসবাস করছে । এই দেশে বাঙালী মুসলিমদের ২ টা ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মজার বিষয় ঈদের জামাতের জন্য এখানে ইন্ডোর স্পোর্টস ময়দান ভাড়া করতে হয় । বাংলাদেশে যারা আজ কোরবানী দিয়েছেন ঈদের নামাজ পড়েছেন তাঁরা নিশ্চয়ই তফাত অনুমান করতে পারবেন । আমি টানা ১৭ বছরে ফিনল্যান্ডে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা মিলিয়ে ২৮টি ঈদ কাটিয়েছি এভাবে। ভিষণ মিস করি ..ভিষণ অভাব বোধ করি..বাংলাদেশ…আমার মঠবাড়িয়া…আমার দক্ষিণ সোনাখালী গ্রাম..জনপদ । স্বজন আর প্রিয় বন্ধুদের নিয়ে একসাথে ঈদের আনন্দময় মূহুর্ত গুলো। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক নূরুল ইসলাম বিএসসি( নূরু বিএসসি)কে মিস করছি।14341744_10205350322757602_70661339_n

কোরবানীর ঈদে গ্রামের বাড়ির সবকিছুই এখানে মিস করি। বিশেষ করে কোরবানীর ঈদ তো আমাদের বাড়িতে ঘটে এক মহামিলন। আমরা ১৭ ভাই (চাচাত ভাই নিয়ে) যাদের বেশিরভাগই পরিবার নিয়ে বাড়িতে আসে । ভাইসতা, ভাইগনা নিয়া প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জনের উপস্থিতিতে বাড়ি সব সময় গম গম করে । বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে ঈদের পরের দিন আমরা ভাইরা বনাম ভাইপো আর ভাইগনাদের নিয়ে ফুটবল খেলা । ঈদের দিন সেলামী পর্বটাও খুব মজার হত । গত ঈদে দেশে ছিলাম । শামীম( চাচাত ভাই) আমার থেকে ৮ -৯ মাসের বড় হবে ওকেও আমাকে সেলামী দিতে হয়েছিল। এখানে এই দুর প্রবাসে ফিনল্যাণ্ডে আমি কাকে সেলামী দেব ! কাদের সঙ্গে ঈদের পরের দিনে ফুটবল খেলা হবে ? আমি টানা ১৭ বছর স্বজনের সঙ্গে নয় ঈদের কোলাকুলি করছি ফিনল্যাণ্ডে বসবাসরত বাংলাদেশী মুসলিম ভাইদের সাথে। এও এক অন্য মায়ার জীবন। অন্য অনুভূতি । তবু আমার দেশ, আমার মঠবাড়িয়া জনপদ…শুধু ঈদ কোরবানী নয় প্রতি মূহুর্ত প্রতিক্ষণ টানছে। ভাবি ঘরের খোঁজে আপন ঘর ছেঁড়ে আহা কত দুরে চলে এসেছি ।
এই দুর প্রবাস থেকে তাই সকলকে জানাতে ইচ্ছে করছে ঈদ মোবারক।

লেখক : মাইনুল ইসলাম, ফিনল্যাণ্ড প্রবাসি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ।

Leave a Reply

x

Check Also

ভাণ্ডারিয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে নব নির্বাচিত সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ এর মতবিনিময়

ভাণ্ডারিয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে পিরোজপুর ২ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. ...