ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী

ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী

মিলন বিশ্বাস (চিত্র শিল্পী) >

প্রথমেই সবাইকে জন্মাষ্টমীর অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ জন্ম গ্রহণ করেন বলে জন্মদিনকে জন্মাষ্টমী বলে পালন করা হয়। জন্মাষ্টমী বা কৃষ্ণজন্মাষ্টমী একটি হিন্দু ধর্মীয় উৎসব। এটি বিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণের জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়। এর অপর নাম কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তী ইত্যাদি । হিন্দু পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। উৎসবটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্টার অনুসারে, প্রতি বছর মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনও একসময়ে।
জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণ ভগবানের জন্মদিন আনন্দ উৎসবের সাথে পালন করা হয়। এটি ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টম দিনে পালিত হয়। এবার ২৫ আগস্ট বৃহঃবার জন্মাষ্টমী। এইদিনে অনেকেই উপবাস থাকেন। কিন্তু ভগবান কৃষ্ণের জন্ম। কেও কেও বিশেষ নিয়মে পুজার্চ্চনা করতে আগ্রহী থাকেন। এই পূজা মন কে শান্তি দেয় এবং নিজের মধ্যে আত্মনিয়োগ করতে সাহায্য করে। প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছর আগে দ্বাপর যুগের ৩২২৮ সালে ভাদ্র মাসে কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। তিনি মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বসুদেব ও দেবকীর অষ্টম পুত্র। দেবকীর দাদা কংস, তাদের পিতা উগ্রসেনকে বন্দী করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। একটি দৈববাণীর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতে তার মৃত্যু হবে। এই কথা শুনে তিনি দেবকী ও বসুদেবকে কারারুদ্ধ করেন এবং তাদের প্রথম ছয় পুত্রকে হত্যা করেন। কৃষ্ণের জীবন বিপন্ন জেনে জন্মরাত্রেই দৈবসহায়তায় কারাগার থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে বসুদেব তাকে গোকুলে তার পালক মাতাপিতা যশোদা ও নন্দের কাছে রেখে আসেন। শ্রীকৃষ্ণ ঘোর অমানিশার অন্ধকারে জন্মগ্রহণ করায় কৃষ্ণের গায়ের রং শ্যামল, অন্য অর্থে ধূসর, পীত, কিংবা কালো। সংস্কৃত কৃষ্ণ শব্দটির অর্থ কালো, ঘন বা ঘন-নীল। কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণের মূর্তিগুলিতে তার গায়ের রং সাধারণত কালো এবং ছবিগুলিতে নীল দেখানো হয়ে থাকে। তার রেশমি ধুতিটি সাধারণত হলুদ রঙের এবং মাথার মুকুটে একটি ময়ূরপুচ্ছ শোভা পায়। কৃষ্ণের প্রচলিত মূর্তিগুলিতে সাধারণত তাকে বংশীবাদনরত এক বালক বা যুবকের বেশে দেখা যায়। এই বেশে তার একটি পা অপর পায়ের উপর ঈষৎ বঙ্কিম অবস্থায় থাকে এবং বাঁশিটি তাঁর ঠোঁট পর্যন্ত ওঠানো থাকে। তাকে ঘিরে থাকে গোরুর দল এটি তার দিব্য গোপালক সত্তার প্রতীক। কোনো কোনো চিত্রে তাঁকে গোপী-পরিবৃত অবস্থাতেও দেখা যায়।
নিচে মহাভারত, হরিবংশ, ভাগবত পুরাণ ও বিষ্ণু পুরাণ গ্রন্থের ভিত্তিতে কৃষ্ণের জীবনের একটি বিবরণ দেওয়া হল। পিতা বসুদেব যমুনা পেরিয়ে কৃষ্ণকে বৃন্দাবনে নিয়ে যাচ্ছেন; মধ্য অষ্টাদশ শতাব্দীর চিত্রকলাজন্মাষ্টমী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রাচীন ধর্মীয় উৎসব। এক সময় ঢাকাবাসী এ জন্মাষ্টমী উৎসব অথবা জন্মাষ্টমীর মিছিলের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন। বর্তমানে এর ছোঁয়া থাকলেও আগের সেই জৌলুস আর নেই। জন্মাষ্টমী এ অঞ্চলের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী উৎসব ছিল, যে উৎসবে অংশগ্রহণ করতেন স্থানীয় হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজন। শুধু তাই নয়, এক সময় ঢাকা শহরে জন্মাষ্টমীর যে মিছিল বের হতো তা সারা উপমহাদেশে বিখ্যাত ছিল। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে এ দিনে শুধু উপাবাসেও সপ্ত জন্মকৃত পাপ বিনষ্ট হয়। আর তাই এ দিনটিতে তারা উপবাস করে লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করে থাকে। এর সঙ্গে সঙ্গে
কালের স্রোতে ধীরে ধীরে যুক্ত হয় মিছিল ও শোভাযাত্রা। ক্রমেই জন্মাষ্টমী পালনের প্রধান অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায় মিছিল ও শোভাযাত্রা। কিন্তু ঠিক কবে থেকে এবং কেন জন্মাষ্টমী উৎসবে মিছিলের শুরু তার নির্দিষ্ট কোনও ইতিহাস জানা যায়নি। মিছিলের পুরনো ইতিহাস লেখক ভুবন মোহন বসাক এবং যদুনাথ বসাকের দুটি বইয়ের তথ্যানুসারে জন্মাষ্টমী উৎসবে মিছিলের শুরু হয়েছিল ষোড়শ শতকে। ভুবন মোহনের লেখা বই অনুসারে ইসলাম খাঁর ঢাকা নগরের পত্তনের (১৬১০ সাল) আগে বংশালের কাছে এক সাধু বাস করতেন। ১৫৫৫ সালে (ভাদ্র ৯৬২ বাংলা) তিনি শ্রী শ্রী রাধাষ্টমী উপলক্ষে বালক ও ভক্তদের হলুদ পোশাক পরিয়ে একটি মিছিল বের করেছিলেন। এর প্রায় ১০-১২ বছর পর সেই সাধু ও বালকদের উৎসাহে রাধাষ্টমীর কীর্তনের পরিবর্তে শ্রী কৃষ্ণের জন্মোপলক্ষে জন্মাষ্টমীর অপেক্ষাকৃত জাঁকজমকপূর্ণ একটি মিছিল বের করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছিল। সে উদ্যোগেই ১৫৬৫ সালে প্রথম জন্মাষ্টমীর মিছিল ও শোভাযাত্রা বের হয়। পরবর্তীতে এ মিছিলের দায়ভার এসে বর্তায় ঢাকার নবাবপুরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাস বসাকের পরিবারের ওপর। কালক্রমে জন্মাষ্টমীর মিছিল একটি সাংগঠনিক রূপ ধারণ করে এবং প্রতি বছর জন্মাষ্টমী উৎসবের নিয়মিত অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উদযাপনে বিশ্বের হিন্দু সম্প্রদায় বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাপন করবে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সরকার এই দিনকে ছুটির ঘোষণা করে থাকেন। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে।
শুভ জন্মাষ্টমীতে সকলের শুভ হোক ।

লেখক পরিচিতি > মিলন বিশ্বাস, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক,খুলনা আর্ট একাডেমী
৩০৮, আমেনা মঞ্জিল, শের-বাংলা রোড, খুলনা।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...