ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূল - আমাদের একটা ডিসেম্বর ছিলো

আমাদের একটা ডিসেম্বর ছিলো

 

সারাবছরে অন্তত একটা মাস বাচ্চাকাচ্চাদের ছুটি দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে ডিসেম্বর মাসটাই মোক্ষম। আমরাও ডিসেম্বর মাসটা প্রায় ছুটিই পেতাম। বার্ষিক পরীক্ষার মার্কশীট কেমন হবে- কিছুটা সে ভয় থাকতো। আবার সব কাজিনদের সাথে দেখা হবে, রিল্যাক্স থেকে ঘুরে বেড়াতে পারবো- একপ্রকার ভালোলাগা কাজ করতো। বলা চলে একটা মিশ্র ভালোলাগার ডিসেম্বর ছিলো আমাদের। মহল্লার তৎকালীন সিনিয়র ভাই কিংবা চাচা সমতুল্য ইয়াং ইয়ুথরা স্কুল মাঠে ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল ইত্যাদির আয়োজন করতেন। রাত অবধি ব্যাডমিন্টন চলতো পাড়া মহল্লায়। একটা জমজমাট আয়োজন ছিলো তখন। বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ প্রদর্শনের জন্য চলতো প্রস্তুতি। ১৫ ডিসেম্বর সারারাত মাইকে দেশের গান বাজতো। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। আমাদের শৈশবের ডিসেম্বরে তীব্র শীতেও একটা উষ্ণতা থাকতো। সে অন্যরকম আনন্দ।

নানাবাড়ি, দাদাবাড়ি বেড়ানোর একটা সময় পেতাম তখন। কাজিনরা সবাই একসাথে মিলে ছোটখাটো বনভাতের আয়োজন ভালোই হতো। পিঠাপুলির ধুম লেগে যেতো মেহমান আপ্যায়নে নানাবাড়িতে। পাটিসাপ্টা, পুলি, রসের নাস্তা, দুধচিতই ইত্যাদি বিবিধ বাহারি দেশীয় পিঠার পসরা বসে যেত। এখনও আয়োজন হয়। আন্তরিকতাও আছে। খাওয়া-দাওয়াও চলে ঠিকই। তবে আগের সেই আমেজ নেই। মানুষ কমে গেছে। নানাবাড়িতে একটা উঠোন ছিল। উঠোনে কাজিনদের ছুটোছুটি খেলাধুলা হত। ধান, মরিচ, হলুদ, আচার ইত্যাদি শুকানো হতো। উঠোন এখন বিরান পরে গেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন রেডিমেইড চাল পাওয়া যায়। আচার কিনতে পাওয়া যায়। শুকানোর জন্য উঠোন কিংবা টিনের চাল লাগে না। ঘরের চালে ছোট ছোট কবুতরের খোপ(ঘর) নেই এখন। আছে স্যাটালাইট টিভি চ্যানেল আকাশের ছাতা।

এখনকার বাচ্চাকাচ্চাদের ৩৬৫ দিনই পিঠে ব্যাগ থাকে। বেড়ানো কিংবা খোলা উঠোনে চিন্তাহীন দৌড়াবার ফুরসত পায় না তারা। আপনি খোজ নিয়ে দেখেন আশেপাশের বাচ্চাদের- দেখবেন এই ডিসেম্বরেও অনেকই পরীক্ষা, টিউশন, এডমিশন ইত্যাদি নিয়ে বিজি আছে। একটা শান্তির নিঃশ্বাস নেয়ার জো নাই। একটা ডিসেম্বর নেই তাদের। আমি যেমন মামাবাড়িতে মজা- আনন্দ করেছি, ডিসেম্বরটা উদযাপন করেছি- ঠিক তেমন করেই আমার ভাগ্না-ভাগ্নিদের একটা ফিল দিতে চাই। কিন্তু কেমন যেন রোবটিক একটা অবয়ব চলে আসে। সেই এন্টিক মুহুর্তটা কোনমতেই ক্রিয়েট করা যাচ্ছে না। আর ওরাও বুঝতে পারছেনা। ওদের শীতের খেলাগুলা এখন মোবাইলে। পিকনিক বলতে কয়লায় ঝলসানো মাংসপিন্ড(বার-বি-কিউ)।

অবাক করা বিষয় হলো এখনকার বাচ্চারা ছুটি কি জিনিস সেটাই বেমালুম ভুলে গেছে। ওদেরও জীবনে যে একটা ডিসেম্বর আছে, সেটা ওরা জানেই না। যে ডিসেম্বরে ওদের নানাবাড়ি পিঠা খাওয়ার কথা, সেই ডিসেম্বরেই ওরা নেক্সট ক্লাসের পড়া এগিয়ে রাখতে টিউশনে যায়। ওদের মা-বাবা শুধু মুখেই বলে “মানসিক বিকাশ”, অথচ সেই বিকাশের জন্য যে বাচ্চাদের একটা ডিসেম্বরও দরকার সেটা তাদের গোঁচরে আসে না। এক অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে দেয়া হচ্ছে কচিকাঁচা বাচ্চাদের। আমরা কিছুটা ভাগ্যবান যে আমাদের একটা সোনালী শৈশব ছিলো। আমরা যে দশকের শিশু ছিলাম, সে দশকে একটা আনন্দঘন ডিসেম্বর ছিল। শীত ছিল।

আলহামদুলিল্লাহ!

~সিফাত আহমেদ
২২ ডিসেম্বর, ২০২২

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...