ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূল - করোনা সংকটকালে মঠবাড়িয়াবাসির কাছে খোলাচিঠি

করোনা সংকটকালে মঠবাড়িয়াবাসির কাছে খোলাচিঠি


প্রিয় মঠবাড়িয়াবাসি,

আশা করছি আপনারা সকলে নিরাপদে আছেন। তবে একথা ঠিক আমরা হয়তো নানা শংকার ভেতরে আছি । কেননা আমরা সবাই গত একমাসের অধিকাল ধরে করোনা সংকটে লড়াই করছি। নানা উৎকণ্ঠা গৃহবন্দী জীবনে দুর্গত এক সময় অতিক্রম করছি আমরা। মঠবাড়িয়ায় করোনা সংকটের শুরুতে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শিক্ষক, সাংবাদিক আর অগনিত তরুণ আর কিছু মানবিক সংগঠন যেভাবে অসহায় আর সংকটে থাকা মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন তা সত্যি বিস্ময়কর। দুর্গত আর বিপন্ন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে অবিরাম এ লড়াইটা আমি মহতী বলেই সম্মান করি।

আপনাদের সম্মিলিত উদ্যোগে আমরা করোনা সংকটে প্রায় ঘুরে দাড়িয়েছিলাম। সর্বশেষ আমাদের একজন করোনা আক্রান্ত রোগি আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিবেদিত চিকিৎসকদের সেবায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আমরা ভাইরাস আক্রান্তের আর কোনও খবর পাইনি। জনমনে স্বস্তিও ফিরছিলো। যদিও আমরা অনেকেই অসচেতনভাবে লকডাউন উপেক্ষা করেছি। হাটবাজার আর খাদ্য সহায়তা বিতরণে অনেকেই সামাজিক দূরত্ব মানিনি। প্রশাসন আর স্বেচ্ছাসেবকদের জনসচেতনার প্রচার প্রচারণাও মেনে চলিনি। সংকট সময়ে অনেকেই শৃংখলা ভঙ্গ করেছি। তার পরও আমরা কিছুটা ঘুরে দাড়িয়ে ছিলাম।
কিন্তু আমাদের শংকা আসলে কাটছেনা। কেননা বিশ্বজুড়ে আর আপনদেশে করোনার সংকট এখনও কাটেনি। প্রতিদিন মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্তর তালিকাও।
মঠবাড়িয়ায় নতুন করে আক্রান্ত না থাকায় মানুষই লকডাউন ঢিলেঢালা করে দেন। এমন অবস্থায় হাটবাজারে সামাজিক দূরত্ব বিঘ্নিত হতে থাকে।
এই সুযোগে ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ,চট্রগ্রাম,খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মরত অগণনিত মানুষ এরাকায় ফিরতে শুরু করে। তারা তথ্য গোপন করে এলাকায় এসে আর সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখেননি। আমরা এলাকাবাসির মাধ্যমে যতগুলো খবর পেয়েছি তা প্রশাসনের নজরে গেছে। মানুষকে নিরাপদে রাখতে প্রশাসন ব্যবস্থাও নিয়েছেন। সব তথ্য হয়তো উন্মোচন করা যায়নি। তবু আমরা স্বস্তিতে ছিলাম। ঢাকা ফেরত একজন আক্রান্ত মানুষ যখন চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এরপর স্বস্তি এসেছিল জনপদে।

কিন্তু সমস্যা কিন্তু গভীরে রয়ে গেছে। আমি আপনি হয়তো টের পাচ্ছিনা। লকডাউন সীমিত আকারের শিথিলের ফলে বাইরে অবস্থানরত মানুষ গোপনে এলাকায় ফিরেছেন । গত সাতদিনের সঠিক হিসেবও আপনার আমার হাতে নেই। এলাকার জনপ্রতিনিধি,চৌকিদাররা যখন জানেন না তখন সংকট গভীর ভাবনায় আনা জরুরী। হিসেবটা নাই কিন্তু সমযের সংকটে এটা খুব জরুরী। কেননা মঠবাড়িয়ায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা হয় ঢাকা নয় নারায়ণগঞ্জ অথবা দেশের অন্য কোন শহরথেকে এলাকায় এসেছেন। নানা কৌশলে এসেছেন এইসব মানুষ। কখনও মাইক্রোবাসে আবার এম্বুলেন্স ব্যবহার করে এরা কৌশলে এলাকায় এসেছেন । ফলে মঠবাড়িয়া জনপদ এখনও শংকামুক্ত ভাবার কোনও কারন আর নেই।
গত শুক্রবারের ঘটনা নতুন করে আতংকের জন্ম দিয়েছে। তিনজন আক্রান্ত হওয়ার খবর । এরা সবাই এসেছেন ঢাকা থেকে। একজন শিক্ষার্থী ঢাকায় পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ আসার পর আতংকে বাড়ি ফিরেছেন। আর দুই বোন ঢাকা থেকে নিকট আত্মীয়র বাড়িতে এসে পরীক্ষার পর করোনা পজেটিভ ধরা পড়ার পর জনমনে নতুন করে শংকা দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত দুইবোন হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন। যতদুর জেনেছি তাদের সুচিকিৎসা চলছে। আর আক্রান্ত শিক্ষার্থী যুবকের চিকিৎসা চলছে গ্রামের বাড়ি লকডাউন অবস্থায়। আমি মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। নিশ্চয়ই বিধাতা আক্রান্তদের দ্রুত সুস্থ করে তুলবেন।

আশার কথা মঠবাড়িয়ায় নতুন করে করোনা সংকট দেখা দেওয়ায় আজ রবিবার( ১০ মে) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঊর্মী ভৌমিক এর সভাপতিত্বে করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সাম্প্রতিক সংকট মোকাবেলা ও লকডাউন সফল করতে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত গুলো ইতিমধ্যে স্থানীয় সামাজিক সাইটে ছড়িয়েছে। যা জনস্বার্থে আশা জাগানিয়া। সেই সাথে সিদ্ধান্তগুলো আগামীকাল সকাল থেকে যথাযথ কার্যকর দেখতে চায় করোনা শংকিত এলাকাবাসি। আমি আশাবাদি প্রশাসন যথাযথ উদ্যোগ নেবেন।
একটু আগে মঠবাড়িয়ার নবাগত ইউ্এনও মহোদয় এর মাধ্যমে অবগত হলাম কাল সকালে দিনভর মঠবাড়িয়া সদর সহ ১১ ইউনিয়নে মাইকিং করে জনসাধারণকে নতুন করে সতর্ক ও সচেতন করা হবে।

আসুন মঠবাড়িয়ায় করোনা সমস্যার গভীরে ভেবে দেখি। কেউ কি জানেন লকডাউন সীমিত শিথিলের ফলে গত ১৫ দিনে কত মানুষ মঠবাড়িয়ার প্রত্যন্ত এলাকায় এসেছেন ? আসলে তার হিসেবেটা কারও কাছে সঠিক নাই। কিন্তু হিসেবটা তো জরুরী। বাইরে থেকে এলাকায় আসা মানুষের তালিকাটা থাকা জরুরী। ১১ ইউনিয়নের প্রতিটা ওয়ার্ড ধরে যদি ভাবেন স্থানীয় ইউপি সদস্য, নারী ইউপি সদস্য কিংবা চোকিদার আর এলাকার শিক্ষক কেউ কি বলতে পারবেন দায়িত্ব নিয়ে কারা বাইরে থেকে আপনার এলাকায় এসেছেন। পারবেন না। কারন তথ্য গোপন করা হচ্ছে। আমার ম্যাসেজ ইনবক্সে এলাকা থেকে তথ্য দিচ্ছে কিছু তরুণ। তারা অনেকেই চেয়ারম্যান কিংবা প্রশাসনের কাছে দিচ্ছেনা। সেটা হয়তো সাংবাদিক বলে ভরসা যে আমি তথ্যটা জনস্বার্থে প্রশাসনের নজরে দ্রুত আনতে পারছি । অনেকে ঝামেলায় জড়াতে পারেন এ ভয়েও তথ্য গোপন করছেন। তবে মানুষের জীবন সুরক্ষার স্বার্থে তথ্য গোপন করে আর লাভ নেই।

যাই হোক কোনও না কোনও ভাবে হয়তো তথ্য বের হবেই। তথ্য বের হলে প্রশাসন ও করোনা প্রতিরোধ কমিটির তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী এখন। বাজারগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে যা করণীয় তাই করতে হবে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন শহর থেকে যারা মঠবাড়িযায় এসেছেন তাদের তালিকা করে লকডাউন করা জরুরী। প্রয়োজনে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা জরুরী।
শুরুতে পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তরুণরা যেভাবে মহতী উদ্যোগগুলো নিয়েছেন নতুন করে তা জোরদার করা জরুরী। দুর্গত মানুষের খাদ্য সহায়তা বিতরণের সময় সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা বোধ করি ভুলে গেছি। আমরা ভুলে গেছি জীবন ও পরিবেশ সুরক্ষায় নানা কর্মসূচি।
আমাদের মনে রাখা উচিত ঝড় কিংবা জলোচ্ছাসের মতোন দুর্যোগ পরবর্তী যে সংকট আর করোনা সংকটের দুর্যোগ এক বিষয় নয়। করোনা বিশ্বময় এক নতুন মহামারি দুর্যোগ । ফলে এ দুর্যোগ মোকাবেলার কৌশল একদম নতুন।

আমাদের জনবান্ধব প্রশাসন , জনবান্ধব জনপ্রতিনিধি, সমাজহিতৈষী রাজনীতিক, শিক্ষক আর নিবেদিত সাংবাদিক আর অগণনিত দেশপ্রেমী বুদ্ধিবাদি তারুণ্যকে নতুন করে এগিয়ে আসা জরুরী। আমাদের মনে রাখা দরকার সম্মিলিত মানুষের উদ্যোগ ছাড়া একটা কমিউনিটির দুর্গত ও সংকটময় জীবন নিরাপদ রাখা অনেক কঠিন।
আসুন সংকটে শৃংখলা মেনে মানুষের জীবন ও পরিবেশ নিরাপদ রাখি।
বিধাতা নিশ্চয়ই মহতী মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগে মানুষের জীবন বাঁচানোর লড়াইটা জিতিয়ে দেবেন।

লেখক ঃ দেবদাস মজুমদার, সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...