ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূল - মঠবাড়িয়া উপকূলের অনাবাদি জমিতে সূর্যমুখী সম্ভাবনা

মঠবাড়িয়া উপকূলের অনাবাদি জমিতে সূর্যমুখী সম্ভাবনা

দেবদাস মজুমদার :

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উত্তর সোনাখালী গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মো. বেলায়েত খাঁ(৬৫) ৩০ শতাংশ জমিতে এবার প্রথম সূর্যমূখী আবাদ করেছেন। গ্রামের অনেক কৃষকই এবার সূর্যমূখী আবাদ করে সফল হয়েছেন। শুধু কৃষক বেলায়েতই নন উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের কচুবাড়িয়া গ্রামের মো. সিদ্দিকুর রহমান ও আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের হোগলপাতি গ্রামের মো. আবু জাফর সফল দুই সূর্যমূখী চাষী।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবার মঠবাড়িয়ায় গত মৌসুমের চেয়ে দ্বিগুনের বেশী সূর্যমুখী আবাদ করেছেন কৃষকরা। মঠবাড়িয়ার বলেশ্বর নদী তীরের সাপলেজা ও বেতমোড় ইউনিয়নে গড়ে উঠছে কৃষি প্রযুক্তি গ্রাম। উপজেলার ১১ ইউনিয়নে প্রায় ২৬২ হেক্টর জমিতে এবার সূর্যমুখীর আবাদ সম্প্রসারিত হয়েছে। যা গত মৌসুমে ছিলো ১৮০ হেক্টর। এবছর দ্বীগুনেরও বেশী সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। এয়াড়া ১১টি ইউনিয়নে ৫০ শতক করে ৮০টি সূর্যমুখী প্রদর্শণী প্লট গড়ে তোলা হয়েছে। সেই সাথে গড়ে উঠছে দুই ইউনিয়নে সূর্যমুখী প্রযুক্তি গ্রাম।

উপকূলে কৃষি ও অকৃষি জমির যেদিকে চোখ যায় কেবল হলুদ রঙের আভায় বর্ণিল। মাঠ জুড়ে সূর্যমুখীর সম্প্রসারিত আবাদ দৃষ্টিতে প্রশান্তি এনে দিচ্ছে। সূর্যমূখী একটি অধিক অর্থকারী ফসল হওয়ায় এ এলাকার চাষীরা ধান চাষের পাশাপাশি এ মৌসুমে এখন সূর্যমুখী আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

কৃষকরা জানিয়েছেন, উপকূলীয় কৃষকের কিছু জমি সারা বছর জুড়েই পতিত থাকে। সেচ সংকট সেই সাথে জমিতে লবণের আগ্রাসনের কারনে এ মৌসুমে কিছু জমি অনাবাদি থাকে। অনিবার্য কারনে এসব পতিত জমি কৃষি উৎপাদনে কোন সহায়ক হয়না। কৃষি জমির উর্বরতার ওপর নির্ভর করে ফসল আবাদের ধরন। পিরোজপুর ও বরগুনা উপকূলের জীবন ধারার সাথে মানানসই কৃষিতে ধানের আবাদ সম্প্রসারিত। তবে অঞ্চলভেদে ধান আবাদের পাশাপাশি অন্য শষ্যবীজের আবাদ চলে আসছে। কেননা কেবল ধানের ওপর নির্ভর করে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা সম্ভব নয়। সে কারনে নানা মৌসুমী ফসল আবাদের দিকে ঝুঁকছে কৃষক। কৃষকের লোকায়ত জ্ঞানের পাশাপাশি কৃষি ব্যবস্থাপনায় আসছে পরিকর্তন। সে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে উপকূলে। অনাবাদি জমির নিবিঢ় ব্যবহার বাড়ছে। খাদ্য শষ্যের পাশাপাশি তেল ফসল আবাদের সম্প্রসারণ কৃষিতে নতুন গতি নিয়ে আসছে উপকূলের কৃষকরা। গত দুই বছর ধরে সূর্যমূখি আবাদের সম্প্রসারণ ঘটেছে পিরোজপুর ও বরগুনার কিছু এলাকায় । কৃষি বিভাগের মতে কিছুটা লবন সহিষ্ণু ফসল সূর্যমূখি। তবে এ অঞ্চলের কৃষকরা গত দুই বছর আগেও সূর্যমূখি আবাদে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। তবে প্রত্যন্ত গ্রামের দিকে এখন খুব সহজেই চোখে মাঠজুড়ে এখন সূর্যমূখির হাসি। প্রান্তের অনাবাদি জমির কৃষকের কাছে সূর্যমূখি এখন নতুন এক সম্ভাবনার ফসল।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উত্তর সোনাখালী গ্রামের কৃষক বেলায়েত খাঁ জানান, তিনি এবারই প্রথম অনাবাদি ৩০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করে সফল হয়েছেন। গ্রামের অনেক কৃষকই সূর্যমুখী আবাদ করায় তিনি উদ্বুদ্ধ হয়ে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হন। তার মত বহু কৃষকের অনাবাদি রুক্ষ্ম মাঠে এখন শোভন সূর্যমুখির সমারোহ। মাঠের সূর্যমূখি ফুলে ফুলে এখন নতুন সম্ভাবনার শষ্য দানা । আর পক্ষকাল পরেই সূর্যমূখি ফসল সংগ্রহের পালা শুরু হবে।

উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের কচুবাড়িয়া গ্রামের মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাগো এলাকায় সূর্যমূখি কেউ চাষ করতনা । গত কয়েকবছর ধরে কৃষিবিভাগ সার বীজ দিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিছে। বহু কৃষক এবার সূর্যমূখি চাষ করছে। সূর্যমূখি বীজে তৈল হয় আবার এতে জমির উর্বরতা বাড়ে।

মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার ১১ ইউনিয়নে প্রায় ২৬২ হেক্টর জমিতে এবার সূর্যমুখীর আবাদ সম্প্রসারিত হয়েছে। যা গত মৌসুমে ছিলো ১৮০ হেক্টর। এবছর দ্বীগুনেরও বেশী সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। এয়াড়া ১১টি ইউনিয়নে ৫০ শতক করে ৮০টি সূর্যমুখী প্রদর্শণী প্লট গড়ে তোলা হয়েছে। সেই সাথে গড়ে উঠছে দুই ইউনিয়নে সূর্যমুখী প্রযুক্তি গ্রাম।কৃষি বিভাগ ৮০টি প্রদর্শনী প্লটে বীজ ও সার বিনামূল্যে দিয়েছে। এর বাইরে স্ব উদ্যোগে আরও সহস্রাধিক কৃষক তাদের অনাবাদি জমিতে এবার সূর্যমুখি আবাদ করেছেন। এটা এ উপকূলে নতুন ধরনের ফসল। ফলন ভাল ও লাভজনক হওয়ায় এলাকার কৃষকদের সূর্যমুখি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। হেক্টর প্রতি ৩ থেকে সাড়ে ৩ টন সূর্যমুখি ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার গুলিসাখালী ইউনিয়নের কবুতরখালী গ্রামের কৃষক নিরঞ্জন কীর্তুনীয়া, পঙ্কজ হালদার ও নির্মল হালদার জানান, সূর্যমুখি একটি লাভজনক ফসল। এ মৌসুমে অনেকেই এবার সূর্যমুখি আবাদ করে লাভের আশা দেখছেন। অনাবাদি জমিতে খুব সহজেই সূর্যমুখির আবাদ করা সম্ভব। সূর্যমুখি চাষে জমির উর্বরতাও বাড়ে। সূর্যমুখি এ মৌসুমে কৃষকের বাড়তি আয় বর্ধক ফসল।

তুষখালী কৃষি ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র কর্মকার বলেন, অনবাদি জমিতে এবার কৃষকরা সূর্যমুখি আবাদ করে এ ফসলের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছেন। অনেক কৃষক আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এলাকায় সেচ সংকট থাকায় চাষে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়। তবে এবার মৌমুমে আগাম বৃষ্টির কারনে সেচ সংকট কম। এবার আশাতীত ফলনের সম্ভানা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মনিরুজ্জামান জানান, সরকারি নির্দেশ মোতাবেক তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনের ৪০% আবাদ বাড়ানোর প্ররিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের নানা ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সূর্যমুখি উপকুলে নতুন সম্ভাবনার ফসল। এ ফসলের আবাদে অনাবাদি জমি আবাদি হয়ে উঠছে। এ ছাড়া সূর্যমুখি আবাদের সাথে আন্ত:ফসল হিসেবে চীনাবাদাম ও সয়াবীন চাষ করা যায়। ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে সক্ষম তেল ফসল সূর্যমুখি চাষ করে এলাকার অনেক কৃষক সফলতার মুখ দেখছেন। ফলে চাষীরাও আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

 

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...