ব্রেকিং নিউজ
Home - খোলা কলাম - মঠবাড়িয়া হাসপাতাল কোমায় ! কার কাছে সমাধান ?

মঠবাড়িয়া হাসপাতাল কোমায় ! কার কাছে সমাধান ?

মো. গোলাম মোস্তফা >
মঠবাড়িয়ার ৫০ শয্যা হাসপাতালটির চিকিৎসা প্রয়োজন! খুব দুঃখের সাথে লেখাটি লিখতে হচ্ছে । খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান,শিক্ষা ও চিকিৎসা এই ৫টি মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সরকার প্রাণবন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । কিন্তু কেন্দ্র থেকে প্রান্তে পৌঁছাতে পারছে কি, এই চেষ্টার সবটুকু ?
একসময়ে যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যাবস্থা অনুন্নত ছিল, টরেটক্কার মাধ্যমে টেলিগ্রাম করে জরুরী যোগাযোগ করা হতো, মালামাল আনা নেওয়া ও আমাদের যাতায়াতেও অনেক সময় লাগতো এবং কষ্ট হতো, তা আজ হয়ত আমরা ভুলে গেছি ডিজিটাল যুগে এসে । এখন দিন বদলে গেছে, আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হতে চলেছি, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের খাতায় নাম লেখাবার আশা করছি । কিন্তু একি দেখছি ! মঠবাড়িয়ার ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে দুই বৎসরের অধিক সময় এক্সরে মেশিন অচল, জীবাণু মুক্তকরণ মেশিনটিও দীর্ঘদিন ধরে খারাপ। আল্ট্রাসনোগ্রাফ মেশিনটি কয়েক মাস হল এসেছে কিন্ত এখনো পর্যন্ত সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান বুঝিয়ে দিতে পারেনি । যন্ত্রটি শুনেছি খারাপ তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুঝে নিচ্ছেন না । অকেজো ইসিজি মেশিনটি সরবরাহ করেছেন একটি প্রতিষ্ঠান । জরুরী বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৪টি জেনারেটরের মধ্যে একটি কোন রকমে চলছে । এতো গেলো যন্ত্রপাতির কথা ।
জনবল ঘাটতির কথা লিখে শেষ করা যাবে কি ? ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি হলেও হাসপাতালের জনবল নিয়োগে কোন উন্নয়ন হয়নি । ৩২ জন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৯ জন, তাও আবার ৪ জন অন্যত্র এবং ১ জন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে । ১৮ জন নার্সের মধ্যে কর্মরত ১০ জন । পদ থাকলেও নেই সার্জারি, নাক কান গলা ও চক্ষু কনসালটেন্ট । নেই পর্যাপ্ত পরিমান ৪র্থ শ্রেণির কর্মরচারি, যে কারণে হাসপাতালটি অপরিচ্ছন্ন, টয়লেটগুলো ব্যবহারে অনুপযুক্ত ।
মঠবাড়িয়া উপজেলা ১১টি উনিয়ন ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত, প্রায় ৪ লক্ষ লোকের বসবাস । একমাত্র সরকারী স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের এই বেহাল দশায় এলাকার চরম দরিদ্র লোকদের দর্ভোগের কথা ভাবতেই আঁতকে উঠতে হয় । আর এই সুযোগে এক শ্রেণির আসাধু লোকের পোয়া বারো । প্রাইভেট ক্লিনিক,ডায়গনেস্টিক, প্যাথলজি যত্রতত্র । এদের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে! দেখভাল করার কেউ আছে কি ?
গ্রামের অতি দরিদ্র জনগনের দোরগোড়ায় সাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আর তাই ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক । কেন্দ্রে প্রচেস্টার অভাব নেই, কিন্তু প্রান্তে একি দৃশ্য ! অনেক লেখালেখির পর গত ১৩ আগস্ট মঠবাড়িয়ার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ক্লিনিকগুলো পরিদর্শন করেন, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ফকরুল আলম। ফেইস বুকের বদৌলতে দেখতে পেলাম পিরোজপুরের ডিসি মহোদয়ের পদধূলি পরড়ছিল মঠবাড়িয়ার হাসপাতালের সামনের ভাঙ্গা সেতুটি পরিদর্শনে লক্ষে । আমার প্রশ্ন আমাদের জন প্রতিনিধিরা এ দায় এড়াতে পারেন কী ? মঠবাড়িয়ার এম.পি মহোদয় নিজে একজন ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালটির এই করুণ অবস্থা! কি করে জনগন মেনে নেবে ! নতুন উদ্যমী সর্বোচ্চবিদ্যাপিঠ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী, আগামী দিনের মঠবাড়িয়ার অহংকার বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকেই বা এর দায়ভার থেকে বাদ দেই কি করে ! এ ছাড়াও অনেক নেতা নেত্রী এবং উচ্চ পদস্থ আমলা আছেন এই মঠবাড়িয়ার সন্তান, দয়া করে তারাও এগিয়ে আসতে পারেন, হাসপাতালটির বর্তমান সমস্যা উত্তরনে। উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়কে অনুরোধ করব আপনি হাত লাগালে মঠবাড়িয়ার জনগনের বিশ্বাস হাসপাতলটি তার যৌবন ফিরে পেতে পারে, তাতে ভবিষ্যতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইবার দরকার হবে বলে মনে হয় না । আর হয়ত গরিব দুঃখী জনগনের দোয়ার বদৌলতে বহুদূর যেতে পারবেন বলে আশা করা যায় । মহা সমূদ্র পারি দিতে হলে এই দুঃখীদেরই লাগবে একদিন ।
একটি ঐতিহাসিক সত্য ঘটনা দিয়ে শেষ কোরতে চাই আজকের লেখাঃ হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকের (রঃ) ওফাতের পর হযরত ওমর (রঃ) খলিফা নিযুক্ত হলে তিনি খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন । সন্ধ্যার পর নেমে পড়লেন প্রজাদের দুর্দশা দেখতে, হাটতে হাটতে মরুভূমির এক প্রান্তে দেখতে পেলেন একটি কুঠুরিতে প্রদীপ জ্বলছে। তিনি সেই কুঠুরিতে গিয়ে দেখলেন এক অসুস্থ অন্ধ বৃদ্ধ বিছানায় কাতরাচ্ছেন আর বলছেন, মনে হয় আবু বক্কর সিদ্দিক(রাঃ) দুনিয়ায় নেই, ওমর জিজ্ঞাসা করলেন, বাবা তুমি কেন আবু বক্কর সিদ্দিকের (রাঃ)কথা বলছ । বৃদ্ধ বললেন, বাবা আমি আসুস্থ হওয়ার পর অবধি কোনদিন ক্ষুধার যন্ত্রণায় কষ্ট পাইনি কিন্তু আজ আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি। ওমর(রাঃ) বললেন, তুমি অপেক্ষা কর আমি খাবার নিয়ে আসছি । কিছুক্ষণ পর ওমর(রাঃ) খাবার নিয়ে এলেন এবং নিজ হাতে বৃদ্ধকে খাওয়াতে লাগলেন, এবার বৃদ্ধ চিৎকার দিয়ে বলতে থাকলেন, আবু বক্কর সিদ্দিক(রাঃ) সত্যি সত্যিই দুনিয়াতে নেই । তখন ওমর(রাঃ) বললেন, তুমি কি ভাবে বুঝলে আবু বক্কর সিদ্দিক(রঃ) দুনিয়াতে নেই, বৃদ্ধ বললেন আমাকে যখন আবু বক্কর সিদ্দিক (রাঃ)খাইয়ে দিতেন তখন আমি কোন কষ্ট পেতাম না । ওমর(রঃ)এবার জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কিভাবে খাইয়ে দিতেন এবার বৃদ্ধ বললেন তিনিতো তাঁর জিহবা দিয়ে খাইয়ে দিতেন কারন আমার জিহবা এবং মুখে ঘা । ওমর(রঃ) এবার তাঁর জিহবা দিয়ে বৃদ্ধকে খাইয়ে দিলেন এবং মনে মনে বলতে থাকলেন এখানেও আমি আবু বক্কর সিদ্দিকের(রাঃ) কাছে হেরে গেলাম !

# লেখকঃ মানব সম্পদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা, মাছরাঙ্গা টেলিভিশন ।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...