ব্রেকিং নিউজ
Home - খোলা কলাম - মঠবাড়িয়ায় একটি আধুনিক পাঠাগার স্থাপন জরুরী

মঠবাড়িয়ায় একটি আধুনিক পাঠাগার স্থাপন জরুরী

মো. মেহেদী হাসান: আমাদের সমাজের মানুষের মেধা মননের উন্মুক্ত কারখানা পাঠাগার। এটি আমাদের মনে সেচ্ছায় জ্ঞান অর্জনে মানুষিকতার উদ্রেক ঘটায়। একটি পাঠাগার থাকা অথবা না থাকার উপরে সমাজের ভবিষ্যত অনেকটা নির্ভরশীল।পাঠাগারকে গণ-বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়, এর মাধ্যমে জ্ঞান আহরণ করে আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সমাজকে অধপতনের হাত থেকে রক্ষা কিংবা সমাজ সংস্কারের জন্য পাঠাগারের গুরুত্ব সর্বজন স্বীকৃত। আমাদের উঠতি যুব সমাজ বর্তমান সময়ে ব্যাপকভাবে মাদক ও নানাবিধ অসামাজিক অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। যার ফলাফল আমরা প্রতিদিনই ভোগ করি, খবরের কাগজের পাতায় চোখ বুলিয়ে অনুধাবন করি। এর পেছনে মূলত কারণ হিসাবে দেখা যায় তাদের নিজেকে প্রকাশ,মেধা বিকাশ এবং পর্যাপ্ত স্বাধীন জ্ঞান অর্জন মাধ্যমের অভাব ।সে ক্ষেত্রে একটি পাঠাগার ব্যপার ভূমিকা রাখতে পারে। মূলত আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে অধপতনের হাত থেকে বাঁচাতে পাঠাগারের ভূমিকা অপরীশিম। আমাদের মঠবাড়িয়া উপজেলা শহরের শহীদ মোস্তফা খেলার মাঠের পাশে ১৯৮৪ সালে স্থাপিত হয় শেরে বাংলা সাধারণ পাঠাগার। এই পাঠাগারের কথা জানতে পেয়ে আমরা পাঠাগারটি পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে রওনা হই।এই এলাকার অনেকের কাছে এ সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য জানতে চাই কিন্তু কারও কাছ থেকো নির্দিষ্ট কোন তথ্য পাইনি এবং তাদের কাছে এই পাঠাগারের নাম বলার পরে তারা অনেকে এর অবস্থান সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞতা স্বীকার করে। পাঠাগারটি প্রি-ক্যাডেট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের সম্যুখ ভাগের একটি কক্ষে অবস্থিত। সামনে ঝোলানো সাইনবোর্ডের মাধ্যমে জানতে পারি এটি মঠবাড়িয়া পৌরসভা কতৃক পরিচালনা করা হয় এবং শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৪টা হতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। অবশেষে সেখানে পৌঁছে দেখতে পেলাম ধুলো বালি জর্জরিত সম্পূর্ণ কক্ষটির কোন সেল্ফের উপরে মাকড়সা জাল বুনে আছে। এখানে আসার পর বুঝতে অসুবিধা হবে না যে এটি অনেক দিন পাঠক শূন্য রয়েছে। এখনে অনেক দূর্লভ বইয়ের সংগ্রহ চোখে পড়লো। যথেষ্ট পরিমাণ বই থাকা সত্বেও মনে হল এখানে কেউ বই পড়ার জন্য আসেনা। পরিবেশ পাঠ উপযোগী নয় , প্রায় সব বইয়ের উপড়েই ধুলোর আস্তরণ পরে আছে । দায়ীত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম মাঝে মাঝে দু-একজন পাঠক আসেন বই পড়তে। তিনি অনেক অভিযোগ জানালেন- বৃষ্টি হলে ছাঁদ বেয়ে পানি পড়ে, জানালা দরজার মাধ্যমে রাস্তার ধুলো আসে, নতুন কোন বই যোগ না হওয়া সহ নানাবিধ অসংগতির কথা তিনি আমাদেরকে জানালেন। আধুনিকতার এ যুগে মানুষ যখন প্রযুক্তির উপড় নির্ভরশীল তখন এখানে প্রযুক্তির কোন ছোয়া লাগেনি। বর্তমানে জ্ঞানের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন কিন্তু ইন্টারনেটের পাতা কখনোই ছাঁপা অক্ষরের বিকল্প হতে পারেনা। তাই আমাদের পাঠাগার প্রয়োজন কিন্তু তা যুগপযোগী আধুনিক মান সম্পন্ন। মানুষ সর্বদা জ্ঞান অন্বেষণ করে- জ্ঞান অর্জনের জন্য অনেক কিছুই করে । প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, সমাজে পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা হাসপাতাল সমতুল্য এবং স্কুল-কলেজের চেয়ে একটু বেশী। সমাজ,দেশ ও জাতির উন্নতিতে পাঠাগারের ভূমিকা সর্বজন স্বীকৃত। মৌমাছি যেমন মধুর স্বাদ জেনে মৌচাকে বাসা বাঁধে তেমনি অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ জ্ঞান অন্বেষণে পাঠাগারে আসবেই। কিন্তু সেই স্থান তাদের জন্য উপযুক্ত করে তৈরী করার দায়িত্ব আমাদের রাষ্ট্রের,আমাদের সমাজ কর্তাদের। পাঠাগার প্রতিষ্ঠা পেলে জাতি শিক্ষিত হবে-আর জাতি শিক্ষিত হলে দেশ উন্নত হবে। আমরা বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দাড়াব। পরিশেষে আমার প্রাণের মঠবাড়িয়া পৌরসভায় একটি আধুনিক পাঠাগার স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি ।

Leave a Reply

x

Check Also

লাইটার জাহাজের ধাক্কায় চরখালী ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে বিধ্বস্ত 🔴 যানবাহন চলাচল বন্ধ

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার কঁচা নদীর চরখালী-টগরা ফেরিঘাটের চরখালী ঘাটে একটি জাহাজের ধাক্কায় ফেরির ...