ব্রেকিং নিউজ
Home - খোলা কলাম - ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন

১৯৭২ সালের ১২ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশ- ভারত যৌথবাহিনীর নিকট ঢাকায় সারেন্ডার করে। স্বাধীনতার পর ভারতীয় বাহিনীর একটি অংশ আমাদের দেশে অবস্হান করেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন। আওয়ামী লীগের নেতারা বঙ্গবন্ধুকে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেন।বঙ্গবন্ধু চিন্তা করতে থাকেন। নেতারা ভিন্ন ভিন্ন কথা বলার কারণ কি? বঙ্গবন্ধু আরও চিন্তা করতে থাকেন যে, কিভাবে এদেশ থেকে ভারতীয় সৈন সরানো যায়। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু জানতে পারেন যে, ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে ভারত সরকারের সাথে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার তথা মুজিব নগর সরকার এক লিখিত চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এ চুক্তি অনুসারে দুই সরকার কিছু প্রশাসনিক,সামরিক ও বানিজ্যিক সমঝোতায় স্বাক্ষর করেছেন। সামরিক সমঝোতা হল,বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভারতীয় সৈন্য এ দেশে অবস্হান করবে। বাংলাদেশের নিজস্ব কোন সেনাবাহিনী থাকবে না।অভ্যন্তরীণ আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যে মুক্তি বাহিনীকে কেন্দ্র করে একটি প্যারা মিলিশিয়া বাহিনী থাকবে।
বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে চিন্তা করতে থাকেন যে, কিভাবে এ দেশ থেকে ভারতীয় সৈন সরানো যায়? বিষয়েটি জটিল। একদিকে, দুই দেশের মধ্যে লিখিত চুক্তি। অন্যদিকে,আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদেরকে নানাভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছে।ভারত তার সাতটি রাজ্যে ৮২৫ টি শরণার্থী শিবিরে ৯৮,৯৯,৩০৫ জন মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। আমাদের ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ট্রেইনিং, অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত ৫০ হাজার সৈন্য দিয়েছে। যুদ্ধে ১৬৬১ জন সৈন্য নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ৫০২৫ জন সৈন্য।
এদেশ থেকে ভারতীয় সৈন সরানো সুযোগ এসে গেল।১৯৭২ সালের প্রথম ভাগে ভারতের জাতীয় নির্বাচন। পশ্চিম বঙ্গে কমিউনিস্ট সরকার। পশ্চিম বঙ্গে বঙ্গবন্ধুর যথেষ্ট ইমেজ আছে। ভারতের প্রধান মন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ইমেজ কংগ্রেসের পক্ষে নিতে চাইলেন এবং তাঁকে কলকাতা সফরে আমন্ত্রণ জানালেন।বঙ্গবন্ধু ৬ ফেব্রুয়ারী বিকালে কলকাতা পৌঁছেন। ৭ ফেব্রুয়ারী বিকালে কলকাতা ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড ময়দানে স্মরণকালের বৃহওম এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধান মন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধু লাখ লাখ জনতার সামনে মিসেস ইন্দিরা গান্ধীকে দৃঢ়কণ্ঠে বলেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী , আপনি পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর কন্যা এবং মতিলাল নেহেরুর নাতনী। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আপনি, আপনার সরকার এবং ভারতের জনগণ যে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন,সেজন্যে আমি এবং আমার দেশের জনগণ আপনার সরকার এবং ভারতের জনগণের নিকট চিরকৃতজ্ঞ। আগামী ১৭ মার্চ আমার জন্ম দিবস। সম্পূর্ণ স্বাধীন বাংলাদেশে আমি আমার জন্ম দিবস পালন করতে চাই।আমার দেশে আপনার সেনাবাহিনী। দয়া করে আমার দেশ থেকে আপনার সেনাবাহিনী দ্রুত সরিয়ে আনুন। জনসভা শেষে রাতে মিসেস গান্ধী ১৭ মার্চের পূর্বে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন প্রত্যাহার করার জন্যে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল শ্যাম মানেকশকে নির্দেশ প্রদান করেন। রাতে কলকাতায় বঙ্গবন্ধু এবং মিসেস গান্ধী দুই দেশের পারস্পারিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। ৮ ফেব্রুয়ারী সকালে বঙ্গবন্ধু ঢাকায় ফিরে আসেন।১২ মার্চ ভারতীয় সেনাবাহিনীর শেষ দলটি ঢাকা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধুকে বিদায়ী গার্ড অব অনার প্রদান করে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পাকিস্তানী সৈন্য মুক্ত হয়।কিন্তু ভারতীয় সৈন্য ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ বাংলাদেশ ত্যাগ করলে আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করি।আমি দৃঢ়প্রত্যয়ের সাথে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না।

Leave a Reply

x

Check Also

প্রতিবেশীর যখন করোনা পজিটিভ

মঠবাড়িয়ায় করোনা এখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে আছে। অর্থাৎ ব্যাপক হারে ছড়াচ্ছে। তাই আমাদের অতিরিক্ত সাবধানতা ...