ব্রেকিং নিউজ
Home - খোলা কলাম - স্বাধীনতার যুদ্ধ শেষ হলেও মুক্তির সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি : খোন্দকার আতাউল হক

স্বাধীনতার যুদ্ধ শেষ হলেও মুক্তির সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি : খোন্দকার আতাউল হক

বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও দার্শনিক হ্যারল্ড লাস্কির শিক্ষক হেনরী ডব্লিউ নেভিনসন বলেছেন, ‘ভালোবাসার মতো স্বাধীনতার জন্যও আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়; ভালোবাসার মতো স্বাধীনতাকেও প্রতিদিন নতুন করে জয় করে নিতে হয়। তিনি আরো বলেছেন, আমরা সর্বদা ভালোবাসার মতো স্বাধীনতাকেও হারাচ্ছি’। কারণ প্রত্যেক বিজয়ের পর আমরা ভাবি আর কোন সংগ্রাম ছাড়াই বিজয়ের ফল স্থিরচিত্তে উপভোগ করা যাবে। স্বাধীনতার যুদ্ধ কখনো শেষ হয় না, কেননা এ হলো এক নিরন্তর সংগ্রাম।’

আমিও হেনরী ডব্লিউ নেভিনসনের ভাষায় বলতে চাই, স্বাধীনতার যুদ্ধের মতো মুক্তিযুদ্ধও কখনো শেষ হয় না। কারণ এ হলো এক আজন্ম সংগ্রাম।
‘স্বাধীনতার যুদ্ধ’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধ’ একে অপরের পরিপূরক। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের মানুষ না পেয়েছে স্বাধীনতার পরিপূর্ণ স্বাদ, না পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। নাগরিক জীবন ব্যবস্থায় স্বাধীন জাতি হিসেবে গণতান্ত্রিক অধিকারসহ স্বাধীন সত্তা নিয়ে মুক্ত জীবন যাপনের নিশ্চয়তা পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক চেতনা ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবতস্থাপনায় পাকিস্তান-ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আইন ও শাসনব্যবস্থার সংশোধন, সংস্কার, বিলুপ সাধন হয়নি এবং অর্থনৈতিক, গণতান্ত্রিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এখনো মুক্তি লাভ করেনি।

বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তক সিরাজুল আলম খান-এর কটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করতেই হয়। তিনি বলেছেন, যে আইন ও বিধির দ্বারা বিদেশি শাসকেরা শাসন করে, সে আইন ও বিধিকে বদলিয়ে নিজেদের উপযোগী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই হলো স্বাধীনতার মূলকথা। বিদেশী শাসক বদলিয়ে দেশীয় শাসকদের ক্ষমতায় বসিয়ে ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং শাসনব্যবস্থা দিয়ে দেশ পরিচালনা করা জনগণের জন্য এক ধরণের পরাধীনতা; যাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ’। সিরাজুল আলম খান-এর উক্তি থেকে এটা স্পষ্ট যে ৭১-সালে বাঙালি জাতির যে চেতনা নিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন; বিদেশি শাসক বদল করলো অথচ সেই স্বাধীন দেশটি ব্রিটিশ-পাকিস্তানিদের রেখে যাওয়া ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার উপর নির্ভর করে দেশ পরিচালনা ও শাসন করা হচ্ছে তা এক ধরণের ‘অভ্যন্তরীণ পরাধীনতা ছাড়া বৈ কিছু না। এ থেকে বাঙালি জাতিকে পরিত্রাণ দিতে হলে প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে সমন্বয়ের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্র-কাঠামো ও শাসনব্যবস্থা আমূল সংশোধন করা। কেবল শাসক বদলের জন্যে প্রতি পাঁচ বছর পর নির্বাচনের রাজনীতি দিয়ে জনগণের কল্যাণ এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশ বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ার রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে অবস্থান করছে।

সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশের জনগণকে শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী হিসেবে বিভক্ত করে একটি ‘রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক’ মডেল ১৪ দফা জাতি সম্মুখে উপস্থাপন করেছেন। চিরাচরিত পার্লামেন্টারি ধাঁচের অঞ্চল ভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি শ্রম, কর্ম, পেশায় নিয়োজিত সমাজশক্তিসমূহের ‘বিষয় ভিত্তিক’ প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা সংবলিত ‘দুইকক্ষ’ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট, ‘ফেডারেল পদ্ধতির কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, প্রয়োজনীয় ৯টি প্রদেশ গঠন করে প্রাদেশিক সরকার গঠন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্ব-শাসিত স্থানীয় সরকার চালুর মধ্যদিয়ে ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক আইন ব্যবস্থা ও শাসন কাঠামোর পরিবর্তে স্বাধীন দেশের উপযোগী শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতেই হবে। এই মডেলের মূল বিষয়বস্তু এবং লক্ষ।

বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হেনরী ডব্লিউ নেভিনসন এর রাষ্ট্রচিন্তক ও ‘নিউক্লিয়াস’র প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খান-এর উল্লেখিত দুটি উদ্ধৃত উক্তি থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এ কথা বলা যায় যে, ৭১ সালে আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধে জয় লাভ করেছি। তাই স্বাধীনতার যুদ্ধ শেষ হলেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। কারণ বাঙালি জাতি এখন পর্যন্ত অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং গণতান্ত্রিকভাবে মুক্তি লাভ করেনি।

স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও রাজনীতিতে ও সংসদে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়নি। দেশের কোটি কোটি যুবকের কর্মসংস্থান হয়নি। নারীর ক্ষমতায়ন লোক দেখানো মাত্র। প্রশাসন ও রাজনীতি হয়ে গেছে আমলা নির্ভর। রাজনীতিকদের দূর্নীতির কারণে জনগণ তাদের উপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে পারছে না। যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই দূর্নীতি আর দূর্নীতি। মন্ত্রি-এমনকি দলের নেতাকর্মীরাও এই দূর্নীতি থেকে বাদ পড়েনি। যতদিন এ জাতির অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং গণতান্ত্রিক মুক্তি না আসবে ততদিন মুক্তিযুদ্ধ চলতে থাকবে। এই মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি বাঙালি স্ব-স্ব উদ্যোগে স্ব-স্ব অঞ্চল থেকে শুরু করবে।

প্রতিশ্রুতি হোক প্রত্যাশিত চুক্তি:
অঘ্রানের শুরুতে প্রমত্ত নদী তিস্তাতে পানির অভাব দেখা দিয়েছে। অথচ এ সময় এই নদীতে পানি থাকার কথা ৪ হাজার কিউসেক পানি। কিন্তু বর্তমানে আছে ২ হাজার কিউসেক পানি। বর্তমানে যে পরিমাণ পানি রয়েছে তা দিয়ে সেচ কার্যক্রমও চালানো সম্ভব হবে না বলে স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ প্রকাশ। অথচ এখনই সময় ইরি-বোরো এবং রবিশস্য আবাদের। পানির অভাবে তিস্তা নদীতে যে সংকট দেখা দিচ্ছে তার জন্য দায়ী ভারতে উজানের পানি প্রত্যাহার। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়ে ছিল। কিন্তু পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বিরোধীতা করার কারণে তা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমান মোদির সরকার তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমরা আশা করবো প্রতিশ্রুতি হোক প্রত্যাশিত চুক্তি।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় বিএনপির নির্বাচন বিরোধী প্রচারপত্র বিলি

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আওয়ামীলীগের একতরফা নির্বাচন বন্ধের দাবী ও ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না ...