ব্রেকিং নিউজ
Home - জাতীয় - কমবে মনোনয়ন বাণিজ্য, আছে ছিটকে পড়ার শঙ্কাও

কমবে মনোনয়ন বাণিজ্য, আছে ছিটকে পড়ার শঙ্কাও

ঢাকা : আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে নিবন্ধিত প্রতিটি রাজনৈতিক দল একজন চূড়ান্ত মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সুযোগ পাবে। একাধিক ব্যক্তি দলের পক্ষে মনোনয়ন জমা দিলে তাদের সবারই মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য করা হবে। পৌরসভার নতুন নির্বাচন বিধিতে এমন সিদ্ধান্তই নেয়া হয়েছে। যার ফলে মনোনয়ন বাণিজ্য কমবে বলে মনে করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। তবে মনোনয়ন বাতিল হলে নির্বাচন থেকে দলগুলোর ঝরে পড়ার আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।

এদিকে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলকে পাঁচদিনের মধ্যে মেয়র পদে মনোনয়ন দিতে দলগুলোর ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির তালিকা চেয়ে একটি পত্র রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব রাজীব আহসান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি নিবন্ধিত ৪০ দলকে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, মেয়র প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন থাকতে হবে। সেখানে লেখা থাকবে- ‘দল থেকে তাকে মনোয়নপত্র দেয়া হয়েছে’। কোনো দল পৌরসভার মেয়র পদে
একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারবে না। একাধিক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র জমা দিলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।

এজন্যে তফসিল ঘোষণার পাঁচদিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে মনোনয়ন দিতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবী ও নমুনা স্বাক্ষর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে বলে চিঠিতে নির্দেশ দেয়া হয়।

এ বিষয়ে ইসির যুগ্মসচিব জেসমিন টুলী বলেন, ‘নতুন নির্বাচন বিধি ও আচরণবিধির বিষয়টি উল্লেখ নিবন্ধিত ৪০টি দলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শনিবারের মধ্যে মেয়র পদে দলের মনোনয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ইসিতে পাঠানোর জন্য চিঠিতে বলা হয়েছে।’

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের পক্ষে একাধিক ব্যক্তির মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সুযোগ থাকলেও পৌর নির্বাচনে তা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে দলের পক্ষ থেকে মাত্র একজনই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবে।

এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে নানা ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ পৌরসভা নির্বাচনে এ ধরনের আইনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। অনেকেই মনে করছেন, একজন প্রার্থী চূড়ান্ত করার ফলে দলের মধ্যে মনোনয়ন বাণিজ্যে কম হবে। অন্যদিকে বিএনপি এ ধরনের নিয়মকে হঠকারিতা বলে মনে করছে। কারণ মনোনয়ন জমা দেয়া একমাত্র প্রার্থী যাছাই-বাছাইয়ে বাদ পড়লে সেখানে আর প্রার্থী দেয়ার সুযোগ থাকবে না। সেক্ষেত্রে নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়তে হবে অনেক দলকেই।

পৌর নির্বাচনে এমন বিধান রাখায় কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সংসদে তো একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন দিতে পারতো, তখন বাছাইয়ে অন্তত একজন টিকে থাকলে দলের হয়ে লড়তে পারতো। কিন্তু পৌর নির্বাচনে মাত্র একজনকেই মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সুযোগ দেয়ায় ভোটে থাকার শঙ্কা বেড়ে গেল। বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করবো।’

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের আশ্বাস পেলে আমাদের দল স্থানীয় নির্বাচনে যাবে।’ এ বিধানের বিষয়ে বিএনপির পক্ষে নোটিশ করা হবে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে নির্বাচনের সংশোধিত এ বিধিকে স্বাগত জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ বিয়য়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের দল প্রথম থেকে দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনকে সমর্থন দিচ্ছে। একজন চূড়ান্ত প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেয়ার বিধান খুব ভালো উদ্যোগ। এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই আমাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হবে।’ এ ধরনের আইন দলগুলোর জন্যও ভালো হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

পৌর নির্বাচনে এ বিধান থাকায় মনোনয়ন বাণিজ্য কমবে কি না, প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দল থেকে কখনই মনোনয়ন বাণিজ্য হয় না। অবশ্য এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কথা আমরা শুনে থাকি। কোনো দল করে থাকলে এবার তা করতে পারবে না।’

অন্যদিকে ইসি কর্মকর্তারা মনে করেন, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত হলে মনোনয়ন বাণিজ্য কমবে। এতে দলের মনোনয়ন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে দলের চূড়ান্ত করা প্রার্থীর মনোনয়ন কোনো কারণে বাতিল হলে সমস্যার মধ্যে পরতে হবে দলগুলোকে। নিজেদের দলীয় প্রতীকে আর কাউকেই সেখানে অংশ নেয়াতে পারবে না।

এ বিষয়ে ইসির একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘এ ধরনের বিধি নির্বাচনে যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন ও বাছাইয়ে ঝরে যাবে এমন ঋণখেলাপি বা অভিযুক্ত কাউকে মনোনয়ন না দিতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি তিনজনকে মনোনয়ন দেয়ার নামে বাণিজ্য করার সুযোগও থাকবে না।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এ বিষয়ে বলেন, ‘একক প্রার্থী মনোনয়নের সিদ্ধান্ত কমিশনের ভালো উদ্যোগ। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত দলগুলো একজনকেই চূড়ান্ত করে। এখন সময় বেশি না নিয়ে আগেই চূড়ান্ত করতে হবে। এতে করে নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য কমে আসবে।’

এদিকে স্থানীয় সরকারে প্রথমবারের মতো পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয়ভাবে ভোট হচ্ছে। অবশ্য সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে আগের মতো নির্দলীয়ভাবে ভোট হবে। দলীয় মনোনয়নের বাইরে ১০০ ভোটারের সমর্থনসূচক তালিকা দিয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হতে পারবে আগ্রহীরা। তবে সাবেক মেয়রদের স্বতন্ত্র মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিতে সমর্থন তালিকা দেয়ার প্রয়োজন নেই।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ৩ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাছাই-বাছাই ৫ ও ৬ ডিসেম্বর এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৩ ডিসেম্বর। আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে ২৩৪ পৌরসভায় ভোট হবে।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় চারবারের সাংসদ ডা. ফরাজিকে বিপুল ভোটে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম শাহনেওয়াজ বিজয়ী

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া একক আসনে কোনও অপ্রীকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে ...