ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি শুধু নয়, মারণব্যধির মতো আমাদের সমাজে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে

যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি শুধু নয়, মারণব্যধির মতো আমাদের সমাজে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে


বিবাহের এই পবিত্র বন্ধনকে কলঙ্কিত করছে যৌতুক প্রথা। এই যৌতুক প্রথা সমাজে এখন এতটাই প্রতিষ্ঠিত যে, যৌতুক ছাড়া বিয়ের কল্পনা করাও যেন বৃথা। সমাজ এটাকে ভীষণভাবে গ্রহণ করেছে। কিন্তু কেন? মেয়ের জন্মলগ্ন থেকেই গরিব বাবা–মাকে যৌতুক নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয়। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়তই যৌতুকের দাবিতে নারী নির্যাতনের অসংখ্য সংবাদ ছাপা হয়। নারী নির্যাতনের অন্যতম একটি কারণ সমাজে প্রতিষ্ঠিত ‘যৌতুক প্রথা’।
নারী নির্যাতনকারী যৌতুকলোভী স্বামীর আইনি বিচারে জেল, জরিমানা কিংবা ফাঁসি হয়। এই রায় নারী নির্যাতন দমানোর ক্ষেত্রে কতটা মাইলফলক হবে, তা জানি না। এটা সাংস্কৃতিক ও মানসিক ব্যাপার। ফলে চিন্তা-চেতনা ও মননের পরিবর্তন না হলে এই প্রথা বিলুপ্ত হবে না। ফলে যৌতুক প্রথা বন্ধ করতে সমাজকে সচেতন করতে হবে। এ জন্য দরকার সরকারি ও নাগরিক উদ্যোগ।
পরিসংখ্যান কী বলছে?
নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালে যৌতুকের জন্য নারী নির্যাতনের কারণে সারা দেশে ৬ হাজার ৬০৭টি মামলা হয়েছে৷ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ‘আমরাই পারি’ পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের-২০১৫ সালের বছরজুড়ে নারী নির্যাতনের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে ১৯২ জনকে, যৌতুকের কারণে নির্যাতিত হয়েছেন ১৭৩, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৭৪ জন৷ দেশের আদালতে যেসব নালিশি মামলা দায়ের হয় তার অন্তত ৫০ শতাংশ যৌতুক নিরোধ আইনের মামলা৷
এছাড়া ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ বা ইউএনডিপি পরিচালিত ‘সিস্টেম অফ ডাওরি ইন বাংলাদেশ’ বা বাংলাদেশের যৌতুক প্রথার ওপর ১০ বছরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে শতকরা ৫০ শতাংশ বিবাহিত নারী যৌতুকের কারণে শারীরিক অথবা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ তাহলে বোঝাই যাচ্ছে সাদা চোখে আমরা হয়ত কেবল দরিদ্র পরিবারগুলোকেই যৌতুক নিতে দেখছি৷ কিন্তু অন্যান্য পরিবারগুলোও যে এই মানসিকতা থেকে বাইরে নয়,
কী আছে যৌতুক বিরোধী আইনে?
যৌতুক বন্ধে ১৯৮০ সালে ন’টি ধারা নিয়ে হয় যৌতুক নিরোধ আইন৷ এটাতে কাজ হলো না৷ এরপর ১৯৯৫ সালে হলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ বিধান আইন করা হলো৷ এ আইনে কঠিন শাস্তির বিধান রাখা হলো৷ শেষ পর্যন্ত এটাও ব্যর্থ হলো৷ সর্বশেষ ২০০০ সালে হলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন৷ এরপর এ বছর ‘যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৭’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিসভায়৷ এর আওতায় কোনো নারীর স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষের অন্য যেকোনো ব্যক্তি যৌতুকের জন্য কোনো নারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷ যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা (প্ররোচিত করে) করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, মারাত্মক জখমের জন্য যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড বা ন্যূনতম ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে৷
কী কী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন?
যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি শুধু নয়, মারণব্যধির মতো আমাদের সমাজে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে৷ যৌতুক যে দেয় এবং যৌতুক যে নেয় দু’জনেই সমান অপরাধী-এই আইনের মূল মন্ত্র জানলেও ক’জন তা মানে? তাই শুধু আইন করে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়৷ এজন্য প্রয়োজন ঘর থেকে ঘরে আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়া৷ এ ব্যাপারে সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর আরও নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত৷ ধর্মীয় ও সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যৌতুক বিরোধী প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে৷ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷ পাঠ্যপুস্তকে যৌতুক বিরোধী বিষয় এবং যৌতুক সংক্রান্ত আইনগুলো অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে৷ মানবাধিকার সংগঠন ও এনজিওগুলো যৌতুক বিরোধী প্রচারণা চালাতে পারে৷ গণমাধ্যমে যৌতুক বিরোধী প্রচারাভিযানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷
নারীরা কেন যৌতুকের বলি হবে? কেন তাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে? এ সমস্যার সমাধান রয়েছে প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি ব্যক্তির সচেতন হয়ে ওঠার মধ্যেই৷ সবার মধ্যে যদি এই বোধ জন্ম নেয় যে যৌতুক এক ধরনের ভিক্ষাবৃত্তি, এর মাধ্যমে কোন সম্মান প্রাপ্তি হয় না, বরং নিজের সম্মানহানিই ঘটে-তাহলে হয়ত আমাদের সমাজ থেকে একদিন এই ভয়াবহ অভিশাপ দূর হবে৷

সুমাইয়া আক্তার (ছোট্ট)
আলিম ১ম বর্ষ
বান্ধবপাড়া ছাঃ সিঃ মাদ্রাসা

Leave a Reply

x

Check Also

লাইটার জাহাজের ধাক্কায় চরখালী ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে বিধ্বস্ত 🔴 যানবাহন চলাচল বন্ধ

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার কঁচা নদীর চরখালী-টগরা ফেরিঘাটের চরখালী ঘাটে একটি জাহাজের ধাক্কায় ফেরির ...