ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - গণতন্ত্রের প্রতীক শহীদ নূর হোসেনের জন্মস্থানে নূর হোসেনের স্মৃতিস্তম্ভ নেই

গণতন্ত্রের প্রতীক শহীদ নূর হোসেনের জন্মস্থানে নূর হোসেনের স্মৃতিস্তম্ভ নেই


১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পুলিশের গুলিতে নিহত হন নূর হোসেন। জাতীয় বীর হওয়া স্বত্তেও গণতন্ত্রের প্রতীক শহীদ নূর হোসেনের জন্মস্থানে গড়ে ওঠেনি এখনও কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার হতদরিদ্র কৃষক মুজিবুর রহমান ও গৃহিণী মরিয়ম বিবির ঘরে ১৯৬১ সালে জন্ম নেন নূর হোসেন। জন্মস্থান মঠবাড়িয়ার সাপলাজে ইউনিয়নের ঝাটিবুনিয়া গ্রামে নূর হোসেনের নিজ বাড়িতে ১৯৯২সালে ‘শহীদ নূর হোসেন ইবতেদায়ী মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পর সরেজমিনে দেখা যায় সেখানে মাদ্রাসার কোন অস্তিত্ব
নেই। নূর হোসেনের নামে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটি এখন
পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। শহীদ নূর হোসেনের নামে তার গ্রামের একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানটি যাতে চালু হয় তাতে এলাকায় গড়ে ওঠা সংগঠন “শহীদ নূর হোসেন স্মৃতি পরিষদ” দাবি করে আসছে। সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন ও বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও আজও নুর হোসেনের নামে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি এই এলাকায়। উপজেলায় ‘জাগো লক্ষ নূর হোসেন’ নামে সংগঠনটি ২০১৩ সাল থেকে মঠবাড়িয়া টু সাপলেজা বাজার পর্যন্ত সড়কটি শহীদ নূর হোসেনের
নামে নামকরণ করা, শহীদ নূর হোসেন স্মৃতিস্তম্ভ , নুর হোসেন এর নামে মঠবাড়িয়া আধুনিক পাঠাগার ও হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবি করে আসছেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান রাস্তাটির নামকরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি তা রাখেননি। নুর হোসেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। দিবসটি আসলে সবাই সব সময়ই বলে কাজের কাজ কিছুই হয় না। এখানে যদি স্মৃতিস্তম্ভ বা তার নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি হয় তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবে গণতন্ত্রের প্রতীক তার এলাকার সন্তান। শহীদ নুর হোসেন জীবনীমূলক ‘শহীদ নুর হোসেন এক জীবন্ত পোস্টার’শীর্ষক বই লিখছেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান আকন্দ। তিনি তার বইতে উল্লেখ করেছেন, ‘যে স্লোগান বুকে পিঠে লিখে গণতন্ত্রের আন্দোলনে জীবন্ত পোস্টার হয়ে ইতিহাস হয়ে আছেন, সেই স্লোগান নূরের গায়ে সাদা রঙ দিয়ে লিখে দিয়েছিলেন তারই বন্ধু মোঃ ইকরাম হোসেন। লেখার সময় নূর হোসেনকে বলেছিলেন,‘এভাবে বুকে
পিঠে লিখলে পুলিশ যদি তোকে গুলি করে? প্রতিউত্তরে নূর বলেছিলেন,‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের
জন্য প্রায় সারাজীবন জেল খেটেছেন,অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। আমি কেন পারবো না। আমি গণতন্ত্রের জন্য শহীদ হতে প্রস্তুত।’ বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা বলেছেন, ‘সেদিন আমরা যখন মিছিল শুরু করেছিলাম তখন নূর হোসেন আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।আমি তাকে কাছে ডাকলাম এবং বললাম তার গায়ের এই লেখাগুলোর কারণে তাকে পুলিশ গুলি করবে। তখন সে তার মাথা আমার গাড়ির কাছে এনে বলল, ‘আপা আপনি আমাকে দোয়া করুন, আমি গণতন্ত্র রক্ষায় আমায় জীবন দিতে প্রস্তুত।”

১৯৯৬ সালে এরশাদ জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নূর হোসেনের পরিবারের সাথে দেখা করে তাদের খরচের জন্য মাসিক৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও মজিবুর রহমান এক সভায় এরশাদকে স্বৈরাচার বলায় টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা (১৯৯৬-২০০১) প্রধানমন্ত্রী হলে নূর হোসেনের পরিবার ১৯৯৭ সালে সরকারের কাছ থেকে মিরপুর মাজার রোডে পাঁচ
কাঠা পরিমাণ একটি জমি পায়। পরে ১৯৯৮ সালে কোনরকমে টিনশেড বাসা তৈরি করে নূর হোসেনের পরিবারের সবাই বনগ্রাম রোডের বাসা ছেড়ে ওই বাসায় গিয়ে ওঠেন যদিও সেখানে এখন তারা ভালোই আছেন। শহীদ নূর হোসেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবচেয়ে স্মরণীয় নাম। আমাদের মঠবাড়ীয়ার গর্বিত সন্তান। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্যি মঠবাড়িয়ার মানুষ, বিশেষ করে তরুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই নূর হোসেন আজো অচেনা। তাই শহীদ নূর হোসেনের অবদানকে স্বিকৃতি প্রদানে ও জন্মস্থানে স্মৃতি ধরে রাখতে আমাদের সকলের উচিৎ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণে উদ্যোগী হওয়া।

মেহেদী হাসান বাবু ফরাজী
সদস্য সচিব, জাগো লক্ষ নূরহোসেন।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...