ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - মানবিক ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম / অালোর মশাল হাতে ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম।

মানবিক ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম / অালোর মশাল হাতে ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম।


হেলেনা আক্তার। চার বছর যাবৎ ভুগছেন রক্তনালীর প্রদাহ জনিত রোগে। পচন ধরেছে শরীরের নানা অংশে। রোগের অভিঘাতে ইতোমধ্যে কয়েকটি অাঙুল খসে পড়েছে। তবে অর্থের অভাবে হচ্ছেনা সঠিক চিকিৎসা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে হেলেনার দুর্ভোগের বিষয়টি নজরে অাসে মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অাবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ফেরদৌস ইসলামের। পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারেন তিনি রক্তনালির প্রদাহজনিত রোগে (ভাসকুলাইটিস) অাক্তান্ত। প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে উন্নত চিকিৎসার ব্যাবস্থা করে দেন ঢাকা মেডিকেলে। পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে শনাক্ত হয় systemic lupas erythematosus (SLE) নামক রোগ। সঠিক চিকিৎসার জন্য ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম যোগাযোগ করেন তার সেখানকার পরিচিত চিকিৎসকদের সাথে এবং উন্নত চিকিৎসার ব্যাবস্থা করে দেন। দীর্ঘদিন চিকিৎসার ফলে হেলেনা অাক্তারের অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল। হাসপাতাল ছেড়ে ফিরেছেন স্বজনদের কাছে।
হেলেনা ফিরেছেন কিন্তু ডাক্তার ফেরদৌস ইসলামের মানবিক সহায়তাকর্মের গতি পরিবর্তন হয়নি। হেলেনার মতো অারো অনেকেই রয়েছেন যারা ডাক্তার ফেরদৌস ইসলামের সহযোগিতায় সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। এদের মধ্যে কাউকে দিয়েছেন বিনামূল্যে চিকিৎসা, কাউকে হেলেনার মতো উন্নত চিকিৎসার ব্যাবস্থা করে দেয়া, কাউকে বিনামূল্যে পরিক্ষা-নিরীক্ষা বা ওষুধ-পথ্যের ব্যাবস্থা করে দেয়া কিংবা শত ব্যাস্ততার মধ্যেও মাথায় ভরসার হাত বুলিয়ে বলা ‘ভয় কি বন্ধু, অামি তো অাছি’। দুর্বিষহ এ সময়ে একজন চিকিৎসক-ই যে হতে পারেন ‘দেবতা প্যানাসিয়া’ ( যিনি সর্বরোগের সমাধান করেন) সেটি তিনি করে দেখিয়েছেন।

কলরিজের কবিতার সেই নাবিকের কথা মনে পড়ে, যিনি মাঝ সমুদ্রে থেকেও একফোঁটা জল পাননি। বর্তমানে চিকিৎসকদের প্রাচুর্য থাকলেও সহায়হীন দরিদ্র রোগীদের হাতের নাগালে পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। সেই মুহূর্তে উদয়াস্ত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম। মহামারীকালিন সময়ে জীবনের ঝুকি সত্ত্বেও রোগীদের-ই প্রাধান্য দিচ্ছেন তিনি।বিত্তহীন দরিদ্র রোগীর থেকে পয়সা নেয়া তার ধাতে নেই। রোগীদের জন্য সর্বদাই অান্তপ্রান এই চিকিৎসক।
মহামারী কালিন এ সময়ে তিনি গঠন করেছেন ‘ইয়াং ডক্টরস ফোরাম অব মঠবাড়িয়া’ নামক একটি সেবামূলক সংগঠন। যার মাধ্যমে স্থানীয় সকল তরুন চিকিৎসকদের একত্রিত করে বিত্ত ও সহায়হীন মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অন্ধকারে অাবৃত এ সময়ে অালো ছড়িয়েছে তার টেলিমেডিসিন সেবা। রোগী ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে কল করে তার থেকে চিকিৎসা গ্রহন করতে পারেন। এজন্য রোগীকে অালাদা কোনো ফি গুনতে হয়না। স্ব প্রনোদিত হয়েই তিনি এসব করছেন। করোনাকালিন সময়ে রোগীদের বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে ‘স্টে হোম, স্টে সেফ’ নীতির প্রয়োগ করতেই এ উদযোগ বলে তিনি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘ এ সময়ে অামি বেশ কয়েকবার ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম ভাইয়ের থেকে ফোনে চিকিৎসাপত্র নিয়েছি,এতে হাসপাতালের রোগীর ভিড় অার সিরিয়ালের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছি’
অনেকেই তার এমন মানবিক কর্মকান্ডের জন্য তাকে ‘মানবিক ডাক্তার’ হিসেবে অাখ্যা দিয়েছেন।
ডাক্তার ফেরদৌস ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ দু’টি তাড়না থেকে অামি মানুষকে সেবা করি,
প্রথমত,’ যেহেতু অামার মানুষকে সহায়তা করার সুযোগ রয়েছে সুতরাং অামার অল্প সহযোগিতায়ও রোগীর বড় উপকার হতে পারে। সেটি-ই অামার অর্জন বলে মনে করি’
দ্বিতীয়ত,’রোগীর জায়গায় নিজেকে স্থাপন করি এবং ভাবি এ মুহূর্তে একজন চিকিৎসকের কাছে অামি কতটা সহযোগিতা চাইতাম।সেভাবেই তাদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করি’

ঘোর অন্ধকারে অালোর মশাল হাতে অাবির্ভূত হয়েছেন ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম। সহযোগিতা,চিকিৎসা অার সেবা দিয়ে প্রান্তিক এ অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের ভরসার স্থল হয়ে ঠায় দাড়িয়ে রয়েছেন তিনি। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে একজন করে হলেও এমন ডাক্তার চাই যারা শুধু চিকিৎসকই নয় বরং রোগীর ভরসার স্থলে পরিণত হবে ।

____অারিফুল ইসলাম।
(শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
০১৭৭৯৮১৮৯৯৯.
[email protected]

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...