ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - মানব কল্যাণ বা সেবা কি?

মানব কল্যাণ বা সেবা কি?


নূর হোসাইন মোল্লাঃ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ কোন না কোন কাজে একজনকে অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। শৈশবে মাতা-পিতার আর বৃদ্ধ বয়সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। মানব কল্যাণ বা সেবা বলতে আমরা বুঝি, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধরণের মানুষকে ভালোবাসা,সেবা করা, দয়া করা, সাহায্য করা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করাই মানব কল্যাণ বা সেবা। মানুষ সৃষ্টির সেরা। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, তা মানুষের জন্যেই সৃষ্টি করেছেন। যে ব্যক্তি মানুষের কল্যাণ সাধন করেন, তিনিই মহৎ ব্যক্তি।সমাজে তিনি বিশেষ মর্যাদার অকিকারী। যিনি মানুষের কল্যাণ করেন,আল্লাহ তাকে সাহায্য ও দয়া করেন।বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ বলেছেন যে “,যদি তোমরা মানুষের প্রতি দয়া করো,তাহলে আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন “।(তিরমিজি শরীফ)। তিনি আরও বলেন, “মানুষের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ যিনি মানুষের সেবা করেন।” অধ্যাপক রাসকিন বলেন, মানুষের তিনটি দায়িত্ব আছে- সৃষ্টিকর্তা,মাতা-পিতা আর মানুষের প্রতি। ইরানের কবি শেখ সাদী বলেন,
“সেজদা আর তসবিহ দেখে
খোদা এলাহী ভুলবে না,
মানব সেবার কুঞ্জি ছাড়া
স্বর্গ দ্বার খুলবে না।”
সকল ধর্মে মানব সেবার কথা বলা হয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, “জীবে প্রেম করে যেইজন,
সেইজন সেবিছে ঈশ্বর। ” সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনই মানুষের মূখ্য উদ্দেশ্য। মানব সেবার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই।তাই মানব সেবার মাধ্যমে মানব জীবনের কল্যাণ নিহিত।
মানব কল্যাণের জন্যে আজ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মানব কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে রেড ক্রস , রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ইউনিসেফ, ইউনেস্কো , কেয়ার, বিশ্বব্যাংক, ফোর্ড ফাউন্ডেশন, অক্সফাম, কানাডিয়ান আন্তর্জাতিক সংস্হা (সিডা), নরওয়ে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্হা (নোরাড), সুইডেন শিশুরক্ষা ফেডারেশন , রাবেতা আল আলম আল ইসলাম, আনজুমানে মফিদুল ইসলাম, আনজুমানে ইত্তেহাদ,মানবসেবা ফাউন্ডেশন প্রভৃতি। সম্প্রতি বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে আদর্শ মানব কল্যাণ সোসাইটি, এবং আরও অনেক প্রতিষ্ঠান।
প্রশ্ন হচ্ছে মানব কল্যাণ বা সেবা কিভাবে করা যায়? নানাভাবে মানুষের কল্যাণ করা যায়। ক্ষুধার্তকে অন্নদান, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান,অসহায়কে আশ্রয় দান, রোগীকে সেবা করা, নিঃস্ব ও দুঃস্হকে আর্থিক সাহায্য করার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করা যায়। মানুষের কল্যাণের প্রতিদান অপরিসীম। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সঃ বলেছেন যে, কোন মুসলমান অন্য মুসলমানকে বস্ত্র দান করলে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের বস্ত্র দান করবেন, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করলে,আল্লাহ তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন,কোন তৃষ্ণার্তকে পানি পান করালে,আল্লাহ তাকে জান্নাতের পবিত্র পানি পান করাবেন ( আবু দাউদ)। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন যে, অন্ধজনে দেহো আলো, মৃতজনে দেহো প্রাণ। আত্মসুখ বা আত্মভোগে কোন মহত্ত্ব নেই। তাই কবি বলেছেনঃ
“পরের কারণে স্বার্থ দিয়ে বলি
এ জীবন মন সকলি দাও।
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও। ”
মানব কল্যাণের মাধ্যমেই জীবনের প্রকৃত সফলতা অর্জন করা সম্ভব। মানুষের সেবাই মানুষের ধর্ম। তাই আমাদেরকে মানবসেবায় ব্রতী হওয়া উচিত।বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ মানব সেবায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন।তিনি ছোট – বড়,গরীব-ধনী, মুসলিম – অমুসলিম সবাইকে সাহায্য – সহযোগিতা করতেন এবং খোঁজ – খবর নিতেন। তিনি বিপন্ন মানুষকে সাহায্য -সহযোগিতা করতেন। তাঁর সাহায্য – সহযোগিতা থেকে তাঁর চরম শত্রুও বঞ্চিত হয় নি।আমরা মহানবী হজরত মুহাম্মদ সঃ এর জীবনী পাঠ করে জেনেছি যে,তাঁকে কষ্টদানকারী এক অমুসলিম বৃদ্ধ নারীর ঘটনা। বৃদ্ধ নারী রাসুল সঃ এর চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত। এতে তাঁর কষ্ট হত।তিনি বৃদ্ধ নারীকে কিছুই বলতেন না।একদিন তিনি পথে কাঁটা দেখলেন না। তিনি মনে করলেন,বৃদ্ধা হয়তো অসুস্থ। তিনি বৃদ্ধার বাড়িতে গেলেন। দেখলেন বৃদ্ধা অসুস্থ। তাকে সেবা করার কেউ নেই। তিনি বৃদ্ধাকে সেবা-যত্ন করে সুস্হ করেন।বৃদ্ধা লজ্জিত হল।সে আর কখনো পথে কাঁটা দেয় নি।
আসুন, আমরা সবাই সাধ্যমত মানুষের কল্যাণ করি। হে আল্লাহ, আমাদেরকে মানুষের কল্যাণ করার তাওফিক দান করুন।

লেখক
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ,
গুলিশাখালী ইউনিয়ন জিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়
ও ইতিহাস গবেষক

Leave a Reply

x

Check Also

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক আলমগীর হোসেন আটক

পিরোজপুর প্রতিনিধি : বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনকে আটক করেছে ...