ব্রেকিং নিউজ
Home - অন্যান্য - ধর্ম ও জীবন - ইসলাম এবং লিঙ্গ বৈষম্য

ইসলাম এবং লিঙ্গ বৈষম্য


মানুষ সম্পর্কে ইসলামের প্রথম বাণী হচ্ছে -জন্মগতভাবে সব মানুষ সমান। পবিত্র কুরআনের সুরা আল হুজরাতের ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ রব্বুল আল আমীন ঘোষণা করেন, হে মানব সম্প্রদায়! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও নারী থেকে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ বলেছেন যে, সব মানুষই একই স্বভাব ও প্রকৃতির ওপর জন্ম গ্রহণ করে। পরবর্তীতে পরিবেশের কারণে ভেদাভেদ সৃষ্টি হয়। ইসলামে সব ধরণের বৈষম্য নিষিদ্ধ। লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ,জাতি ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের স্হান ইসলামে নেই। যেমনটি দেখা যায় খৃষ্টান আর হিন্দু ধর্মে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,
সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ -রমনী কোন ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,অর্ধেক নর।
বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারী।কিন্তু তারা তাদের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। নারী ও পুরুষের অধিকার সমান। কিন্তু কর্ম ক্ষেত্র একটু ভিন্ন।
লিঙ্গ বৈষম্য হচ্ছে মানবতার শত্রু।মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যে নারী ও পুরুষ উভয়ই অপরিহার্য। তবে নারীর অপরিহার্যতা একটু বেশী। পারিবারিক শান্তি -শৃঙ্খলা বিধানে নারীর অবদান বেশী। তারপরও নারীরা পারিবারিক, সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার। বিভিন্ন ধর্মে ও সভ্যতায় নারীর স্থান নিন্মে বর্নিত হলোঃ
খৃষ্টান ধর্ম- নারী পাপের উৎস। এদের কোন আত্মা নেই।
হিন্দু ধর্ম- নারী অপবিত্র ও কলুষিত বস্তু। সতীদাহ না হলে তার স্বর্গ লাভ হবে না।ধন- সম্পদের ওপর নারীর অধিকার নেই। এ কারণে বিধবা বিবাহ ও পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নেই। কৈশোরে এরা পিতার, যৌবনে স্বামীর আর বৃদ্ধ বয়সে পুএের ওপর নির্ভরশীল।
বৌদ্ধ ধর্ম – নারী সঙ্গ লাভে কোন দিন নির্বান লাভ করা যায় না।কারণ, নারী সম্পর্ক যৌনতার দিকে টানে।এ ধর্মে নারীকে শুধু যৌনতার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, মানুষ হিসেবে নয়।
ইহুদী ধর্ম- নারী চিরন্তন অভিশপ্ত। নারী পাপের প্রসবন।নারী মৃত্যু অপেক্ষাও তিক্ত বস্তু। নারীর পূন্যজনক কোন কাজ করার অধিকার নেই। তালাকপ্রাপ্তা নারীকে দ্বিতীয়বার আর কেউ বিয়ে করার অধিকার রাখে না
গ্রীক ধর্ম – নারী জগতের যাবতীয় অনর্থ ও সর্বনাশের মূল।
চৈনিক ধর্ম – নারী পুরুষ সমাজের পন্যবস্তু মাএ।
জাহিলিয়াত যুগ – নারী ভোগের সামগ্রী। কন্যাসন্তান অভিশাপ।
আধুনিক ইউরোপ, আমেরিকা ও দূরপ্রাচ্য – নারী বিঞ্জাপনের মডেল।যৌন প্রদর্শনীর সামগ্রী।
ইসলাম ধর্মে নারী ও পুরুষের অধিকার সমান। একে অপরের আবরণ স্বরুপ। উভয়ই সমান মর্যাদা ও কৃতিত্বের অধিকারী। পবিএ কুরআনের সুরা আল বাকারার ১৮৭ নংআয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, নারীগণ পুরুষদের ভূষণ আর পুরুষগণ নারীদের ভূষণ। নারী তার পিতা- মাতার সম্পত্তি লাভের অধিকার সংরক্ষণ করে। নারীরা পবিত্র। তারা বিবাহ ও তালাকের ক্ষমতাপ্রাপ্ত।নারী যৌনতার প্রতীক নয়।তাই তাদেরকে হিজাব পরিধান করে শালীনভাবে চলাফেরা করতে হয়। নারী ভোগ্যপন্য নয়। নারীরা মর্যাদার দিক দিয়ে পুরুষের এক ধাপ উর্ধ্বে। কারণ, সন্তানের বেহেশত মায়ের পদতলে।ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ বলেছেন যে, ” মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। ” ( মুসনাদে শিহাব আল কাযায়ি) ।
পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলামী আদর্শে জন্মগত,জাতিগত,বর্ণগত,গোষ্ঠীগত,অঞ্চলগত,ভাষাগত এবং পেশাগত কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্ব শুধু পরিশীলনতার মধ্যে। শুধু অন্তর দ্বারা নারীর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা দেখালেই চলবে না,বরং নিজ কাজ -কর্ম ও আচার-আচরণের দ্বারা প্রমাণ দিতে হবে।

নূর হোসাইন মোল্লা
লেখক ও গবেষক,
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক,গুলিশাখালী জি,কে ইউনিয়ন মাধ্যমিক৷ বিদ্যালয়

সম্পাদক, মঠবাড়িয়া শেরে বাংলা পাঠাগার

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...