দেবদাস মজুমদারঃ বয়স ১১৯। এখনো সুস্থ। হাঁটতে পারেন। খালি চোখে কোরআন শরিফ পড়েন। টিউবওয়েল চেপে গোসল করেন। তবে কণ্ঠ কিছুটা আড়ষ্ট পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার গুলিসাখালী গ্রামের মো. আব্দুর রশীদ ফরাজির।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, ১৯০১ সালের ২৩ জুন তাঁর জন্ম। বাবা তুজাহার আলী ফরাজি ও মা লাল শোন বিবি মৃত। তাঁদের ছয় সন্তানের পাচজনই পরলোকে। শুধু বেঁচে আছেন কনিষ্ঠ আব্দুর রশীদ। তাঁর স্ত্রী জবুনা খাতুনও মারা গেছেন ১৫ বছর আগে। তাঁর চার ছেলে ও তিন মেয়ে। বর্তমানে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে বেঁচে আছেন।
বাবার দেখাশোনা করেন ছেলে মো. নূর হোসেন বাদল ফরাজি। তিনি জানান, তাঁর বাবা খুব অল্প বয়সে বাবা হারান। ব্রিটিশ আমলে তিন-চার গায়ে কোনো স্কুল ছিল না। মক্তবে পড়েছেন। খেলাধুলায় ভালো ছিলেন। যৌবনে ফুটবল খেলে একটি লাল ঘোড়া উপহার পেয়েছিলেন। ফুটবল খেলতে গিয়ে প্রেমে পড়েন জবুনা খাতুনের । সেই প্রেম বিয়ে অবধি গড়ায়। গোলাভরা ধান আর পুকুরভরা মাছ, গোয়ালে দুুধেল গাই আর উর্বরা জমিতে কৃষির ফলে জীবন-সংসার ছিল ভরপুর। তিনি মাছ খেতে ভীষণ পছন্দ করতেন। শ্বশুরবাড়িতে একটা পুকুরে মাছ তাঁর জন্য রেখে দেওয়া হতো।
আব্দুর রশীদ সংসারের পাশাপাশি এলাকায় যাত্রা, নাটক, মেলা বসাতেন। এ ছাড়া মানুষের বিরোধ মেটাতে সালিস করতেন। এ কারণে গাঁয়ের মানুষ তাঁকে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ সওগাতুল আলম সগীরের সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল। মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে নেপথ্যে থেকে এলাকার মানুষকে সুরক্ষা করেছেন। সেজো ছেলে মজিবর রহমান আলমকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। সেই সন্তান এখন আর বেঁচে নেই। তাঁর ঘরের বারান্দায় ঝুলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ফ্রেমের একটি ছবি।
তাঁর নাতি সৌদিপ্রবাসী মেহেদী হাসান বাবু বলেন, ‘দাদু ভীষণ আমুদে মানুষ ছিলেন। এখন বয়সের ভারে নতজানু। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসন দেখেছেন। বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি দেখেছেন।’
প্রবীণ আব্দুর রশীদের কাছে প্রশ্ন ছিল, জীবনে কিছু না পাওয়ার আছে? বেশ আড়ষ্ট কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বাড়ির উত্তর পাশের রাস্তাটা টিয়ারখালী হাটের সঙ্গে যুক্ত। আমি মেম্বার থাকতে মাটি ভরাট করে বানাইছিলাম। রাস্তাটা আজও কাঁচা।’ তার বিষয়ে গুলিসাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম ঝনোর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১১৯ বছর সুস্থভাবে বেঁচে থাকা একটা বড় ঘটনা।’