ব্রেকিং নিউজ
Home - অন্যান্য - ধর্ম ও জীবন - ইসলামের দৃষ্টিতে হিজরা এবং দাস প্রথা

ইসলামের দৃষ্টিতে হিজরা এবং দাস প্রথা


আমাদের সমাজে হিজরা বা তৃতীয় লিঙ্গের লোকেরা অবহেলিত। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাদের কোন অধিকার বা ভূমিকা নেই। এমনকি উত্তরাধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম হিজরা তথা তৃতীয় লিঙ্গের লোকেরা তাদের পিতা মাতার পরিত্যক্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। আমাদের সমাজে তাদের ন্যায্য প্রাপ্য দেয়া হয় না বিধায় তারা ভবঘুরে জীবন যাপন করে।রাসুল সঃ বলেছেন যে, ” তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে ইনসাফ কায়েম করো,যেমন তোমরা তোমাদের সাথে আচরণেও ইনসাফ কামনা করে থাকো।( আবু দাউদ শরীফ) । হিজরাদের উন্নয়ন করা উচিৎ। তাদের উন্নয়ন করে মানব সম্পদে পরিনত করে তাদের যোগ্যতানুসারে সমাজ ও দেশের কাজে নিযুক্ত করতে হবে।আমাদের সরকার হিজরাদের উন্নয়নে এপর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত সরকার হিজরাদের উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।আমাদের সরকারের উচিত, হিজরাদের উন্নয়নে আইন প্রনয়ণ করা।
দাস প্রথাঃ
দাস প্রথা প্রাক ইসলামী আরবের একটি উল্লেখযোগ্য সামাজিক ব্যবস্হা।সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে এর প্রয়োজনীতা ছিল। তৎকালীন গ্রীক, রোমান,ইহুদী, খৃষ্টান ও জার্মানদের মধ্যে দাস প্রথা চালু ছিল। তারা দাসদের সাথে অমানুষিক অত্যাচার করত। নাগরিক আইনে দাসরা ছিল অস্হাবর সম্পত্তির মত। দাসদের অবস্থা উন্নয়ন করে ইসলাম বিশ্ব ইতিহাসে এক নতুন আদর্শ স্হাপন করেছে।ইসলাম দুই ধরনের দাস ব্যবস্হা গ্রহণ করেছে- ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে যারা মুসলমানদের অধীনে ছিল এবং যারা যুদ্ধ বন্দী হয়েছিল। ইসলামের উদ্দেশ্য ছিল দাসদের সার্বিক উন্নয়ন করতঃ মুক্ত করা।আরবে হঠাৎ করে দাস প্রথা উচ্ছেদ করা ছিল বিপদজনক। উচ্ছেদ করা হলে মালিক এবং দাসদের ক্ষতিকর হতো। এজন্যে ইসলাম দাস এবং মালিকের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্হাপন করেছে, যাতে দাস প্রথার দোষগুলো দূর করা সম্ভব হয়। এবিষয়ে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের সুরা নুর এর ৩৩ নং আয়াতে বলেছেন, ” এবং তোমাদের যেসব দাস মুক্তি চায়, তাদেরকে মুক্তি দেয়,যদি তোমরা তাদেরকে ভালো মনে করো। তবে আল্লাহ তাআলা তোমাকে যে সম্পদ দান করেছেন তার কিছু অংশ তাকে দান করো।”
মহান আল্লাহ তাআলার এ বাণীতে দাস মুক্তির দুটি শর্ত আরোপিত হয়েছে – প্রথমত,যে দাস মুক্তি পেতে চায়,তাকে মুক্তি দিবে।তার মুক্তি যদি তার নিজের এবং সমাজের জন্যে ক্ষতিকর হয়,তাহলে কোন উপযুক্ত স্হানে কাজ করতে দিবে।
দ্বিতীয়ত,কোন দাসকে সম্পদহীন অবস্থায় মুক্তি দিবে না। সে যাতে সম্মানজনক জীবন যাপন করতে পারে সেজন্যে তাকে কিছু অর্থ দিবে।এদুটি শর্ত পূরণ না হলে দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভের ফলে কল্যাণ অপেক্ষা অকল্যাণের সম্ভবনা অধিক।
পবিত্র কুরআন ও হাদীসে দাসদের ক্রমান্বয়ে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে। রাসুল সঃ বলেছেন, ” যতক্ষণ না আমি অনুভব করেছি যে, কোন মানুষকে দাস হিসেবে গ্রহণ করা উচিৎ নয়, ততক্ষণ হযরত জিব্রাইল আঃ দাসদের দয়া প্রদর্শন করার জন্যে আমাকে বারবার তাগিদ দিয়েছেন। ” দাস মুক্তি একটি ধর্মীয় বিধি এবং রাসুল সঃ এর সাহাবীগণ একাজ নিষ্ঠার সাথে সম্পন্ন করতেন।দাস মুক্তির জন্যে তাঁরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন।দাস মুক্তি রাষ্ট্রের একটি কর্তব্য। রাসুল সঃ দাসদের সামাজিক জীবনে পূর্ণ পরিবর্তন আনয়ন করেন। তিনি সাহাবীগণকে বলেন, ” তোমরা যেরুপ খাদ্য গ্রহণ করবে, তাদেরকে অনুরুপ খাদ্য দান করবে,তোমরা যেরুপ বস্ত্র পরিধান করবে, তাদেরকেও অনুরুপ বস্ত্র পরিধান করতে দিবে।”
ইসলামে মালিক এবং দাসের মধ্যে পার্থক্য নেই। ইসলাম বলে যে, যোগ্যতাসম্পন্ন হলে আজ যে দাস কাল সে দেশের প্রধান হতে পারবে। ভারতীয় উপমহাদেশের দাস বংশের ইতিহাস এর সুস্পষ্ট প্রমান।সবুক্তগিন,কুতুবউদ্দিন আইবক,ইলতুৎমিশ ও গিয়াসউদ্দিন বলবান প্রথম জীবনে দাস ছিলেন। প্রতিভা,বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা বলে সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদে সমাসীন হয়েছিলেন এবং রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

নূর হোসাইন মোল্লা
অবসরপ্রাপ্তপ্রধানশিক্ষক
গুলিশাখালীজিকেমাধ্যমিকবিদ্যালয়

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...