ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - চা পান মাটির কাপে

চা পান মাটির কাপে


☕️
লেখাটা শুরুর আগে একটা স্মৃতি হাতড়ে বলি, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ । আমার তখন সাড়ে চার বছর বয়স। তখন আমি পরিবারের সাথে দেশ ছেড়ে পালাই। মানে শরণার্থী। ভারতের বাকুরা ক্যাম্পের আশ্রয় শিবিরের তাঁবুতে আমি ছিলাম। তখন আমি দেশ ছেড়ে পরবাসি যুদ্ধ শিশু। তো আমার প্রয়াত বাবা শরৎ চন্দ্র মজুমদার প্রায়ই বিবরদা নামে একটা বাজারে যেতেন। আমি প্রায় কান্নাকাটি করতাম বাবার সাথে যেতে। যতদিন তাঁর সাথে গেছি ততদিন মাটির কাপে বাবাকে চা খেতে দেখতাম। একবার খেতে চাইছিলাম। কিন্ত অতটুকুন বয়সে বাবা আমার মুখে মাটির কাপের চা দেননি। শিশু তো। এটা আমার বোনেরা আজও বলেন, দেবদাস ছোট সময় কান্না করে বলতো, বাবা আমি বিবরদা যাবো মাটির কাপ খাবো।

চা নিয়ে আসলে বলার কিছু নেই। চা পান অবসাদ দুর করে। শরীর মনে প্রশান্তি আনে ,যেনো টনিক। চা খায়না কম মানুষে খায় বেশী মানুষে। চা বিশ্বময় এক বিশাল বাণিজ্য। কিন্তু করোনায় চা খাওয়া এখন বিপত্তি। ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। তার মূল কারন দোকানে এক চিনামাটির কাপে হাতবদল হয়ে হাজারো মানুষের মুখে তুলে দেয় দোকানী। করোনা আসার পর মঠবাড়িয়ায় দেখলাম কতিপয় দোকানে প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম কাপ চালু করেছেন। চলছে বেশ।
আমি আজ সকালে চায়ের দোকানে ওয়ানটাইম কাপ চালুর কথা বলেছিলাম এ সংকটকালের কথা ভেবে। কিন্তু আমার এক গুণি বন্ধু সাংবাদিক আমীন আল রশীদ জানালেন প্লাস্টিক পণ্যে অতিরিক্ত গরম খাবার বা পানীয় নাকি ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। ভাবনার বিষয় ।
তাহলে পানশালায় চা পানে নিরাপদ কাপ কি ? আমি গতবছর মাটির একটা কাপ আর প্রিচ ঢাকার ফুটপাত দিয়া কিনছিলাম। ওতে নিয়মিত চা খাবো বলে। বাসায় আনার পর তা গৃহকর্তৃ শোকেসে শোভাবর্ধনে আটকে দিয়েছে। ওই মাটির কাপ এখন দেখে সুখ।

বিকেল থেকে ভাবছি মাটির কাপে চা পান নিরাপদ। ভাবছি এইটা নিয়ে কি জনসচেতনামূলক কিছু লিখলে কেমন হয়। ওই ভেবে এই মধ্যরাতে লেখা। মাটি শব্দটাই কেমন মমতা লেপটে থাকা বিষয়। মাটির কাপ মানে মাটির ভাঁড়। ভাঁড় জিনিসটার নানা অর্থ হয়। ওটা গোপাল ভাঁড়ের সাথে মানায় ভালো। আমি তাহলে ওটারে মাটির কাপই বলি। তো মাটির গন্ধ মাখা চায়ের পেয়ালা বললেও তো শুনতে খারাপ লাগেনা। একটা শৈল্পিক আর কেমন যেনো মেঠেল ভাব আছে মাটির কাপে। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতে মাটির কাপে চা পানের রেওয়াজ বহু পুরানো। তবে আমার দেশের শহরের অভিজাত পাড়ায় অভিজাতদের শখ করে মাটির কাপে চা পান করতে আমি দেখেছি। আমি ঢাকার মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ মোড়ের এক মিষ্টি ঘরের দোকানে একবার ২০ টাকা দিয়া কি যেনো ক্ষীর চা পান করছিলাম। একটা অভিজাত ভাব আসছিলো মনে । ওই একবার অভিজাত সাজছিলাম আমি।
বিজ্ঞানীদের মতে মাটির কাপে চা খাওয়া শরীরের ক্ষতিকর নয়। কিন্তু প্লাস্টিকের কাপে গরম পানীয় খাওয়া একেবারেই চলবে না। কারণ গরমের সংস্পর্শে আসার পর প্লাস্টিকের শরীরে থাকা একাধিক কেমিকেল তার খেল দেখাতে শুরু করে। পানীয়তে মিশতে থাকা এইসব কেমিকাল শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়। কিছু ক্ষেত্রে তো এই সব রাসায়নিকের কারণে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।
তাই মাটির কাপে চা পান জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য একদমই ক্ষতিকারক নয়। মাটির কাপ পরিত্যাক্ত হলে পরিবেশের কোনও ক্ষতি হয়না। ওটা মাটিতেই মিশে যায়। আর প্লাস্টিক তো মাটির উর্বরতায় এক আগ্রাসন । এ নিয়ে দেশে বিদেশে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। প্লাস্টিকের কাপ পচনশীল না ফলে ওটা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে।
গবেষণা বলছে মাটির কাপ বা গ্লাস প্রকৃতিতে অ্যালকালাইন। অর্থাৎ এতে কিছু পান করলে তা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে শুরু করে। ফলে শরীর সার্বিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তাই যারা গ্যাস-অম্বলে খুব ভুগে থাকেন তাদের মাটির গ্লাসে জল খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তাহলে তাই যদি হয় মাটির কাপে চা পান স্বাস্থ্য সম্মত ।

আমি এটা নিয়ে লিখতে গিয়ে একটা জিনিস ভেবেছি আমাদের মাটির শিল্প দখল করেছে প্লাস্টিক। আর মাটির তৈজসপত্র কারিগর কুমারেরা দিনদিন তাদের মরা শিল্পটারে আজ অবধি টেনে টুনে টিকিয়ে রাখছেন। চাহিদা না থাকায় এ শিল্প বিপন্নতার দিকে। চা যখন শিল্প তার সাথে অন্তত মাটির কাপ শিল্পটা চালু হলে আমার দেশের মাটির কারিগরদের একটা বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আমি দেখছি।

আমার মনে হচ্ছে বর্তমান করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে নিরাপদ জীবনের জন্য মাটির কাপে চা পান উত্তম। একবার খেয়ে ফেলে দিব। আমার চায়ের কাপে আর কারও মুখ লাগানোর সম্ভাবনা নেই।
এটা ভাবতে গিয়ে ভেবেছি আমাদের জীবনধারা মাটিতেই ফেরাতে হবে হয়তোবা। আসুন আমরা দোকান পাটে হোটেল মোটেলে চা পানে মাটির কাপ চালু করে দেই।
এতে মাটি শিল্পটা নতুন করে টিকে থাকার একটা উপায়ও বের হতে পারে ।
তাহলে এখন থেকে চা পান শুরু হোক মাটির কাপে।

দেবদাস মজুমদার
উপদেষ্টা সম্পাদক
আজকের মঠবাড়িয়ার

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...