ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - আল বদর ও আল শামস বাহিনী গঠনের ইতিহাসঃ

আল বদর ও আল শামস বাহিনী গঠনের ইতিহাসঃ


আল বদর বহিনীঃ জামায়াত ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি মোঃ আশরাফ হোসেন ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল জামালপুরে আল বদর বাহিনী গঠন করেন।এখানেই ১৯৫৮ সালে গঠিত হয়েছিল পূর্ব বাংলা লিবারেশন ফ্রন্ট। বদরের যুদ্ধকে আদর্শ করে এ বাহিনী গঠন করা হয়।পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার জন্যে এ বাহিনী প্রথমে জনমত গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত ছিলো। অতপর ইসলামী ছাত্র সংঘের অন্যতম নেতা মোঃ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে ময়মনসিংহে আল বদর বাহিনীর কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম শুরু হয়। সারা দেশের ছাত্র সংঘের সদস্যদের সংগঠিত করে আগস্ট মাসে সারা দেশের ছাত্র সংঘের শাখাগুলো আল বদর বাহিনীতে রুপান্তর করা হয়। সরকারের নির্দেশ ছাড়া জামায়াত ই ইসলামীর সমর্থনে এ বাহিনী গড়ে ওঠে। ঢাকায় এ বাহিনী গঠিত হলে সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় এবং মেজর রিয়াজ হোসেনকে এ বাহিনীর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়া হয়।
আল বদর বাহিনীর সব সদস্যই ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য। সেজন্যে ছাত্র সংঘের নেতারাই ছিল এ বাহিনীর কমান্ডার। এ বাহিনী ছিল জামায়াত ই ইসলামীর ক্যাডার। জামায়াতের ক্যাডার হলেও সরকার তাদেরকে বেতন দিত।ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা,ওয়ার্ড ও মহল্লায় এ বাহিনীর কমিটি ছিল।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এবং মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেইনিং কলেজ মাঠে এ বাহিনীর নিয়মিত ট্রেইনিং দেয়া হত।
রাজাকার বাহিনীর কর্মকাণ্ডের সাথে আল বদর বাহিনীর কিছুটা পার্থক্য ছিলো। রাজাকার বাহিনী সামগ্রিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু বদর বাহিনীর লক্ষ্য ছিলো শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা নয়, সন্ত্রাস ও হত্যার মাধ্যমে মানুষের মনে আতংক সৃষ্টি করাও। এ বাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী ছিলো। অক্টোবর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বাহিনী অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে।বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের জন্যে প্রধানত আল বদর বাহিনী দায়ী। এ বাহিনীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ১৪-৯-১৯৭১ তারিখে দৈনিক সংগ্রাম পএিকা লিখেঃ
আল বদর একটি নাম।আল বদর একটি বিস্ময়। আল বদর একটি প্রতিঞ্জা। যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী, আল বদর সেখানেই। যেখানেই দুস্কৃতকারী আল বদর সেখানেই। ভারতীয় চর কিংবা দুষ্কৃতকারীদের কাছে আল বদর সাক্ষাৎ আজরাইল।
আল বদর বাহিনীর হিংস্রতায় আশঙ্কিত পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলি ভুট্টাে, ওই দলের সহ সভাপতি মাওলানা কাওসার নিয়াজী এবং পাকিস্তান জমিয়াতে ওলামায়ে ইসলামের প্রধান মাওলানা মুফতি মাহমুদ , তাহরিখ ই ইস্তাকলাল পার্টি প্রধান এয়ার মার্শাল আজগর খান প্রমুখ আল বদর বাহিনীর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করায় এ বাহিনীর পূর্ব পাকিস্তান শাখার প্রধান আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন,পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক যুবকরা ভারতীয় চরদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্যে এগিয়ে এসেছে এবং আল বদর বাহিনীর সদস্যরা জাতির সেবা করছে, তখন কতিপয় রাজনৈতিক নেতা আল বদর বাহিনীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করে বিষোদগার করছেন। এসব নেতার এ ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্যে এবং এ ব্যাপারে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করার জন্যে সরকারের প্রতি আবেদন জানান।( দৈনিক সংগ্রাম, তারিখ ১৫/১০/১৯৭১)।
নিখিল পাকিস্তান আল বদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন পাবনার মাওলানা মতিয়র রহমান নিজামী আর পূর্ব পাকিস্তান শাখার প্রধান ছিলেন ফরিদপুরের আলী হাসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকায় বাংলাদেশ – ভারত যৌথ বাহিনীর নিকট সারেন্ডার করার সাথে সাথে এ বাহিনীর বিলুপ্তি ঘটে। মাওলানা মতিয়র রহমান নিজামী এবং আলী হাসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রী সভার সদস্য ছিলেন। মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে আদালত তাদেরকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন।
অাল শামস বাহিনীঃ
আল শামস আরবী শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে সূর্য, যা রাতের অন্ধকারের পর পৃথিবীকে আলোকিত করে। অাল শামস অাল বদর বাহিনীর মতোই একটি ডেথ স্কোয়ার্ড। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গুলোর ছাত্র সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে এ বাহিনী গঠন করে।পাকিস্তান সেনা বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় জমিয়াতে তালাবায়ে অারাবিয়ার ছাএ সংগঠনের নেতৃত্বে এ বাহিনী গঠিত হয়।এ বাহিনীর কার্যক্রম ছিল অাল বদর বাহিনীর মতো।এ বাহিনী অাল বদর বাহিনীর সাথে মিলিত হয়ে বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছে।১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনা বাহিনী অাত্মসমর্পনের সাথে সাথে এ বাহিনীর বিলুপ্তি ঘটে।

নূর হোসাইন মোল্লা
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক
গুলিশাখালীজিকেমাধ্যমিকবিদ্যালয়

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...