ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - রাজাকার বাহিনী গঠন এবং এর কর্মকান্ডঃ

রাজাকার বাহিনী গঠন এবং এর কর্মকান্ডঃ


বাঙ্গালী জাতির নিকট মীরজাফর এবং রাজাকার শব্দ দুটি ঘৃনিত। ফার্সী রেজাকার শব্দ থেকে বাংলায় রাজাকার। এর অর্থ স্বেচ্ছাসেবক। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে পাকিস্তান রক্ষার্থে যারা স্বেচ্ছায় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সার্বিকভাবে সহায়তা করেছে তারা রাজাকার। রাজাকার বাহিনী গঠন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াত ই-ইসলামীর ডেপুটি অামীর বাগেরহাট জেলার শরণখোলার সন্তান মাওলানা এ.কে.এম.ইউসুফ।তিনি ১৯৭১ সালের ১৫ মে খুলনার খানজাহান অালী রোডে অবস্থিত অানসার ক্যাম্পে ৯৬ জন জামায়াত কর্মী নিয়ে সর্বপ্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করেন(দি পাকিস্তান অবজারভার তাং ১৬/০৫/১৯৭১)।মে মাসের মধ্যে সারাদেশে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়।
পাকিস্তান রক্ষার জন্যে রাজাকার বাহিনী গঠনে যে সব রাজনৈতিক দল সহযোগিতা করেছে সেগুলো হচ্ছে – অধ্যাপক গোলাম আজমের জামায়াত ই ইসলামী , খাজা খয়ের উদ্দিনের কাউন্সিল মুসলিম লীগ, ফজলুল কাদের চৌধুরীর কনভেনশন মুসলিম লীগ, কাজী আবদুল কাদেরের কাইউম খান মুসলিম লীগ, নুরুল আমিনের পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি, এ এস এম সোলায়মানের কৃষক -শ্রমিক পার্টি, পীর মহসিন উদ্দিনের জমিয়াত ই ওলামায় ইসলাম, মাওলানা সিদ্দিক আহমেদের নেজামে ইসলাম, মাওলানা নুরুজ্জামানের পাকিস্তান ইসলামিক রিপাবলিক পার্টি, মাওলানা মিয়া মফিজুল হকের জমিয়াতে ইত্তেহাদুল উলেমা পার্টি, মাওলানা আশরাফ আলী খানের জমিয়াতে তালাবায়ে আরাবিয়া, মাওলানা আবদুল জব্বারের পাকিস্তান ইসলামী পুনর্জাগরণ সংস্হা, মাওলানা আজিজুর রহমান নেছারাবাদীর জমিয়তে হিজবুল্লাহ। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছিল রাজাকারদের পক্ষে। এ দলগুলোর সাথে ছিল এদেশের মোট জনসংখ্যার ২০% ভাগের কম।প্রথম দিকে রাজাকার বাহিনী শান্তি কমিটির নিয়ন্ত্রণে ছিল। পরবর্তীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছিল।
মঠবাড়িয়া থানা শান্তি কমিটির সহায়তায় ও তত্বাবধানে মে মাসের শেষ দিকে মঠবাড়িয়ায় রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। এখানে পাঁচ শতাধিক রাজাকার ছিল। রাজাকার কমান্ডারদের মধ্যে ১/২জন অতি গোপনে মুক্তিবাহিনীকে রাইফেলের গুলি সরবরাহ করেছেন। আমার জানা মতে রাজাকার কমান্ডার বকশির ঘটিচোরার আবদুস সামাদ কমান্ডার গুলিসাখালী মুক্তিবাহিনী ক্যাম্প কমান্ডার মনিন্দ্র নাথ হাওলাদারকে প্রায় দুই হাজার গুলি সরবরাহ এবং কৌশলে কতিপয় লোকের জীবন রক্ষা করেছেন।
রাজাকার বাহিনীকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শান্তি কমিটির কেন্দ্রীয় নেতারা সামরিক অাইন প্রশাসক লে.জেনারেল টিক্কা খানকে অনুরোধ জানালে তিনি ১৯৪৮ সালে গঠিত অানসার বাহিনীকে বিলুপ্ত করে ১৯৭১ সালে ২ জুন পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারি করেন।এ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে অানসার বাহিনীর যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, মূলধন, দায় এবং রেকর্ড পত্রাদি রাজাকার বাহিনীর নিকট হস্তান্তর করা হয়।অানসার বাহিনী বিলুপ্ত করার কারণ ছিল এ বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।ইসলাম ও পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্যে যারা স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালী হত্যা,মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ করা কর্তব্য মনে করেছিল তারাই রাজাকার বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়।
এছাড়া,টাউট,বাটপার,গুন্ডা,মাস্তান,মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা আর গ্রামের গরীব যুবকরা খাদ্যের অভাবে এ বাহিনীতে ভর্তি হয়।পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে এ বাহিনীকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে অস্ত্রে সজ্জিত করা হয়।একজন ধর্মীয় নেতা তাদেরকে পবিত্র কুরঅান শরীফ স্পর্শ করে শপথ করাতেন। রাজাকারদের শপথ নামায় লেখা ছিলঃ
I….. do solemnly declare that from this moment I shall faithfully fellow the injunctions of my religion and dedicate my life to the service of my society and country. I shall obey and carry out the lawful orders of my superiors. I shall bear true allegiance to the constitution of Pakistan as framed by law and defend Pakistan, if necessary with my life.
১৯৭১ সালের অাগস্ট মাসে রাজাকার বাহিনীকে একটা অাধা সামরিক বাহিনীতে পরিণত করা হয় এবং এর জন্যে পৃথক অধিদপ্তর গঠন করা হয়।১৯৭১ সালের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রয়োজনীয় অস্ত্রে সজ্জিত রাজাকারের সংখ্যা ছিল ৫৫ হাজার। ইউনিয়ন পর্যায়ে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপনকল্পে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা একলাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহন করে।রাজাকারদের বেতন-ভাতা ও ফ্রি রেশন দেয়া হত।রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল জামায়াত ই ইসলামীর ছাত্র সংগঠনের সভাপতি।জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের জেলা প্রধানরা নিজ নিজ জেলার রাজাকার বাহিনীর প্রধান ছিল।পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজাকাররা সৈন্যদের চলাচল অবাধ ও নির্বিঘ্ন করতে সেতু, কালভার্ট,সড়ক,যানবাহন ও বিভিন্ন স্থাপনা পাহাড়া দিত। মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলাদের গতিবিধি,অবস্থান,চলাচল ইত্যাদি যাবতীয় সংবাদ শান্তি কমিটি ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে পৌঁছাতো। মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকাররা লুটপাট, চাঁদাবাজি,হত্যা,অগ্নি সংযোগ,নারী নির্যাতন সহ এমন কোন অনৈতিক কাজ নেই যা তারা করেনি।রাজাকারদের কার্যকলাপ ছিল ইসলাম ধর্ম বিরোধী।
তবে কিছু সংখ্যক রাজাকারের কার্যকলাপ ভালো ছিলো। তাদের সংখ্যা খুবই কম ছিল। তারা অতি গোপনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং রাজাকার বাহিনীর কর্মসূচি তথা গতিবিধির সংবাদ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে জানিয়ে দিতেন। গ্রাম থেকে নিরীহ মানুষকে ধরে আনলে তাদের মুক্তির ব্যাপারে চেষ্টা করতেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারত -বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর নিকট ঢাকায় সারেন্ডার করার সাথে সাথে রাজাকার বাহিনীর স্বাভাবিক বিলুপ্তি ঘটে।সরকারের নিকট আমার আবেদন, যে সব রাজাকার মানুষ হত্যা করেছে, নারী ধর্ষণ করেছে, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, লুটপাট করেছে তথা মানবতা বিরোধী কাজ করেছে তাদের তালিকা সত্বর প্রণয়ন করুন।

নূর হোসাইন মোল্লা
অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক
গুলিশাখালী জিকে মাধ্যমিকবিদ্যালয়

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে সাজানো অস্ত্র মামলায় আসামী করে হয়রাণির অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় গত সংসদ নির্বাচন চলাকালীন সময়ে থানা পুলিশের দায়ের করা একটি ...