ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - শবে কদরের ফযিলত

শবে কদরের ফযিলত


রমযান মাস শ্রেষ্ঠতম মর্যাদার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এ মাসে রয়েছে শবে কদর। কদর অর্থ সম্মান। কদরের রাতের মত সম্মানিত রাত আর নেই। আল্লাহ বলেন এ রাতের ইবাদাত-বন্দেগি হাজার মাসের ইবাদাত বন্দেগি অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ হাজার মাস কাল ইবাদাত বন্দেগি করলে যে সওয়াব হয়, কদরের রাতের ইবাদাত বন্দেগিতে তদাপেক্ষা বেশি সওয়াব হয়। এ রাতের মর্যাদা ও ফযিলত সম্পর্কে মানব জাতিকে অবহিত করার জন্যে পরম করুণাময় আল্লাহ “সুরা কদর” নাযিল করেন। এ সুরা মানব জাতির সর্ব শ্রেষ্ঠ নেয়ামত।

হযরত মাওলানা আশরাফ আলি থানবি রঃ এর বয়ানুল কুরআন তাফসিরে দুররে মনসুর নামক তাফসিরের বরাতে এবং অলিকুল শিরমনি হযরত আব্দুল কাদের জিলানী রহঃ এর গুনিয়াতুত ত্বালেবীন কিতাব থেকে জানা যায় যে, এক বিশেষ ঘটনার কারণে সুরা কদর নাযিল হয়েছে। একদা রাসুল সাঃ সাহাবীগণকে বনী ইসরায়েল গোত্রের বিখ্যাত চার জন বুজুর্গ ব্যাক্তি সম্পর্কে বলেন, তাঁরা ৮০ বছর পর্যন্ত একাধারে ইবাদাত বন্দেগি করেন। এ সময়ে তাঁরা একটি খারাপ কাজও করেননি। তাঁদের ইবাদাত বন্দেগির কাহিনী শুনে সাহাবীগণ বিমর্ষ হয়ে রাসুল সাঃ কে বিনীতভাবে আরয করেন যে, হে রাসুল সাঃ, আমরা আপনার উম্মত। এ জগতে আমাদের জীবন ৬০-৭০ বছরে শেষ হয়ে যাবে। আমরা তাঁদের মত বেশি ইবাদাত বন্দেগি করতে পারব না। রাসুল সাঃ সাহাবিগণের আবেদন মনযোগ সহকারে শোনেন এবং চিন্তা করতে থাকেন যে, এ জগতে অল্প জীবন নিয়ে সম পরিমান ইবাদত বন্দেগি করা কিভাবে সম্ভব?

আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও মহা কৌশলী। তাতক্ষনিকভাবে মহান আল্লাহ হযরত জিবরাইল আঃ কে সুরা কদর নিয়ে রাসুল সাঃ নিকট প্রেরণ করেন। এখানে সুরাটির বাংলা অনুবাদ বর্ননা করা হল ” অবশ্যই আমি কুরআন শরিফ কদরের রাতে নাযিল করেছি। আর আপনি কি জানেন যে, কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাস হতে উত্তম। এ রাতে জিবরাইল আঃ একদল ফেরেস্তাসহ আল্লাহর নির্দেশে অসংখ্য বরকত ও রহমত নিয়ে পৃথিবীর সর্বত্র অবতীর্ণ হয় এবং প্রভাত পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজমান থাকে।”

রাসুল(সঃ) চিন্তা মুক্ত হন এবং সাহাবীগণকে জানিয়ে দিলেন,এ জগতে তোমাদের অায়ু কম হলেও তোমরা পর্যাপ্ত সওয়াব লাভে সমর্থ ও সক্ষম হবে এবং অন্যান্য নবী রাসুলগণের উন্মতদের চেয়ে অধিক মর্যাদার অধিকারী হবে।

সূরা কদরের অর্থের প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলে তিনটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি অাকৃষ্ট হয়। যথাঃ (১)শবে কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। (২)এ রাতে অাল্লাহর নির্দেশে হযরত জিবরাইল অাঃ একদল ফেরেস্তাসহ অসংখ্য বরকত ও রহমত নিয়ে পৃথিবীতে অাগমন করেন।(৩) ইবাদতকারীদের উপর প্রভাত পর্যন্ত শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজমান থাকে।

শবেকদরের ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কুরঅানের বর্ননাই যথেষ্ট। এ কারণে রাসুল (সঃ) শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে তেমন কিছু বলেননি। তবে শবে কদর রমজান মাসের কোন তারিখে হতে পারে সে সম্পর্কে তিনি উপদেশ দিয়েছেন।

বায়হাকী কিতাবে হযরত অানাস (রাঃ) হতে এক মারফু হাদিসে বর্ণিত অাছে যে,কদরের রাতে হযরত জিবরাইল (অাঃ) একদল ফেরেস্তাসহ পৃথিবীতে অাসেন এবং যাকে দন্ডায়মান ও বসা অবস্থায় নামাজ ও অাল্লাহর জিকিরত পান, তাকে অাল্লাহর রহমতের দোয়া করেন। শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে দুররে মনসুর তাফসিরে বর্ণিত অাছে যে, এ রাতে তওবা কবুল হওয়া, অাসমানের দরজা সমূহ খুলে দেয়া এবং প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের প্রতি ফেরেস্তাগণের সালাম করার কথা ব্যক্ত অাছে।

প্রশ্ন হল শবে কদর রমজান মাসের কোন তারিখে। রাসুল (সঃ) রমজান মাসের শেষ ১০ রাতের যেকোন বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করতে বলেছেন।নির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে সাহাবীদের মধ্যে মতবেদ অাছে।হযরত অায়শা (রাঃ) এর মতে, রাসুল (সঃ) রমজানের শেষ ১০ রাতে অধিক এবাদত করতেন,যা অন্য সময় করতেন না।হযরত অাবু জর গিফারী এবং হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) এর মতে ২৫ রমজান শবে কদর।হযরত ইবনে অাব্বাস (রাঃ) এবং হযরত উবাই ইবনে কাব (রাঃ) এর মতে শবে কদর ২৭ রমজান। হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত অাছে যে,কয়েকজন সাহাবী স্বপ্ন দেখেন যে,রমজান মাসের শেষের ৭ রাতের মধ্যে শবে কদর নিহিত এবং তাঁরা রাসুল (সঃ) নিকট তাদের স্বপ্নের কথা বর্ণনা করেন।রাসুল (সঃ) বলেন, তোমাদের সকলের স্বপ্ন একই অর্থাৎ শবে কদর রমজানের শেষ ৭ রাতে সীমাবদ্ধ।সুতরাং শেষ ৭ রাতে অন্বেষন করো। অতএব, এর দ্বারা প্রমানিত হয় যে, শবে কদর রমজান মাসের ২৭ তারিখ। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)।

নূর হোসাইন মোল্লা,
লেখক, অবঃঃ প্রধান শিক্ষক।

Leave a Reply

x

Check Also

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক আলমগীর হোসেন আটক

পিরোজপুর প্রতিনিধি : বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনকে আটক করেছে ...