সুপ্রিয় আবুল হাসনাইন,
আন্তরিক প্রীতি আর শুভাশীর্বাদ রল। আশাকরি পরম করুণাময়ের কৃপায় সবাইকে নিয়ে ভালো আছো। ৪২ বছর পর লিখলাম। অসীম আনন্দ। এ আনন্দের দাবীদার “গ্রামের একাত্তর” বইয়ের সম্পাদক সহপাঠী বন্ধু আফসান চৌধুরী এবং ফেইসবুক। ৪২ বছর যোগাযোগ ছিল মোহাম্মদপুর গার্লস হাইস্কুলের সিনিয়র শিক্ষক আহমেদ শফিক (নরসিংদি) ও ভোলা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন আহমেদের সাথে। তুমি ছাড়া এ পর্যন্ত যোগাযোগ হয়েছে মুনীরা আপা, আখতার চৌধুরী( ঢাকা), জয়নাল আবেদীন(যুক্তরাষ্ট্ট প্রবাসী), গোলাম কুদ্দুস চঞ্চল ( নোয়াখালী), মাহফুজুল হোসেন নোয়াখালী), আমিরুল আলম (সুনামগঞ্জ) তাসাদ্দিক হোসেন (রাংগামাটি), ফুয়াদ কুরাইশী (কুষ্টিয়া), রোকনুজ্জামান ইউনুস (বগুড়া),কর্ণেল অবঃ শাহজাহান মোল্লা (কুমিল্লা) প্রমূখ। তুমি বর্তমানে পাকিস্তানের করাচী শহরে অবস্থান করতেছো জেনে আমি উৎকন্ঠিত। কারণ, পাকিস্তানীরা বিশেষ করে সিন্ধু ও পাঞ্জাবের মানুষ হিংস্র। ওরা বাঙালী নিধনকারী। ওরা বর্বর চেঙ্গিস ও হালাকু খানের অনুসারী। ওরা আমাদের অমঙ্গলকামী। ওরা বেমালুম ভুলে গেলো যে, পাকিস্তান আন্দোলনে বাঙালীদের অবদান। ওদের জাতির জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যিনি মুসলিম লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন, সেই মুসলিম লীগ ১৯০৬ সালে ঢাকায় গঠিত হয়। এর প্রধান ছিলেন বঙ্গ সন্তান নাবাব সলিম উল্লাহ। ইসলামের নামে ওরা আমাদেরকে প্রায় ২৪ বছর শাসন, শোষণ ও নির্যাতন করেছেন। তুমি ইতিহাস জানো। ওদের ভেতরে এখনো পরিবর্তন আসেনি। ওরা যে কতো হিংস্র ও বাঙালী বিদ্বেষী তা নিন্মের আমার লেখা পড়ে বুঝতে পারবে।
২০০২ সালে আমি হজ্বব্রত পালনের উদ্দ্যেশ্যে সৌদি আরবে গিয়েছিলাম। মক্কায় সাক্ষাৎ হয় পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আব্দুল হামিদের সাথে। তিনি আমাকে উত্তর ভারতের মানুষ মনে করে আমার দিকে এগিয়ে এসে সালাম দিয়ে করমর্দন করেন। কুশালাদি বিনিময়ের পর আমি তাঁকে জানালাম যে, আমি বাঙালী এবং বাংলাদেশে আমার জন্ম। তিনি আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলেন। আমি তাঁকে বললাম, আপনার সাথে এটাই আমার প্রথম সাক্ষাৎ। কোথায় এবং কিভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি? তিনি আমাকে বলেন, তোমরা পাকিস্তান ভেঙ্গেছো। আমি তাঁকে বললাম আপনি রাষ্টবিজ্ঞান চর্চা করেন আর আমি ইতিহাস চর্চা করি। পাকিস্তান অর্জনে আপনি বাঙালীদের অবদান জানেননা। বাঙালীরা পাকিস্তান ভাঙ্গে নি। পাকিস্তান ভাঙ্গার বীজ আপনাদের নেতা কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকায় রোপন করেন। এটি পরিচর্যা করেন আপনাদের কায়েদে মিল্লাত লিয়াকত আলী খান, গোলাম মোহাম্মদ, চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, ইসমাইল ইব্রাহীম চুন্দ্রীগড়, মালিক ফিরোজ খান নুন, জেনারেল আইউব খান ও জেনারেল ইয়াহিয়া খান। তিনি বললেন, আপনার কথা বুঝলাম না। আমি বললাম পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬% জন মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। আপনাদের মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ৫৬% জন মানুষের মাতৃভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করে ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকায় ঘোষণা করেন যে, পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, অন্য কোনো ভাষা নয়। আপনি কি জানেন পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার কতোভাগ মানুষের মাতৃভাষা উর্দু? আপনি জানেন না। প্রায় ৪% মানুষের মাতৃভাষা উর্দু। আমরা দাবী করেছিলাম বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হোক। আপনারা আমাদের দাবী না মেনে আমাদের উপর ১৯৫২ সালে ঢাকায় গুলি চালিয়ে ৩৯ জন বাঙালীকে হত্যা করেন। রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আপনারা আমাদের ওপর শাসন, শোষণ ও নির্যাতন চালাতে থাকেন। আমাদের বাঁচার জন্যে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী লাহোরে ছয় দফা ঘোষনা করেন। আপনারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
গোপনে করাচী হয়ে ঢাকায় চলে আসেন। প্রবল আন্দোলনের পর ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬০ টি আসন লাভ করে। আপনারা আওয়ামী লীগকে পাকিস্তান শাসনের সুযোগ না দিয়ে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে প্রায় ৩০ লাখ বাঙালী হত্যা করেন, প্রায় ৪ লাখ মহিলাকে রেপ করেন, কয়েক লাখ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন। আপনাদের বর্বর বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করেছি। পাকিস্তান আমরা ভেঙ্গেছি না আপনারা ভেঙ্গেছেন? তিনি জবাব না দিয়ে আর বিদায়ী সালাম না দিয়ে চলে গেলেন। বন্ধু, ওদের থেকে সাবধানে থাকো। দেশে ফিরে এসো। অনেক লিখলাম। আজ এ পর্যন্ত।
আমার শরীর ভালো নয়। দোয়া করবে। তোমার সুখ শান্তি, সুস্বাস্থ্য ও সুদীর্ঘ জীবন কামনা করে বিদায় নিচ্ছি। আল্লহ হাফিজ।
আমার যোগাযোগ নং ০১৭৩০৯৩৫৮৮৭।