ব্রেকিং নিউজ
Home - নারী - ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত সম্ভাবনাময় লেখিকা মুন্নী চিকিৎসা সংকটে

ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত সম্ভাবনাময় লেখিকা মুন্নী চিকিৎসা সংকটে

দেবদাস মজুমদার >>
আফরোজা মুন্নী একজন তরুণ উদীয়মান লেখিকা। অমর একুশের বইমেলায় আফরোজা মুন্নীর এ যাবৎ ৪টি বই বের হয়েছে। ২০১৬ সালে উপন্যাস ‘ধূসর কন্যা’ (১ম খন্ড), ২০১৭ সালে ‘ধূসর কন্যা’ (২য় খন্ড)। ২০১৮ সালে প্রবন্ধ ‘ছিটমহলের দিনগুলি’ এবং ২০১৯ সালে গল্পসমগ্র ‘জল ছবিতে আঁকা’ প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো যারাই পড়েছেন তারাই বলেছেন “বই চারটি শিক্ষামূলক এবং অনেকের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা খোড়াক” । ছিটমহল বইটি নিয়ে আফরোজা মুন্নী একটা ডকুমেন্টারী ফিল্ম নির্মাণেরও স্বপ্ন দেখেন। আর সুস্থ জীবনে বেঁচে থেকে লেখালেখি নিয়মিত চালিয়ে নিতে চান। কিন্তু এই স্বপ্ন ও সম্ভাবনা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে মগজে মরণ ব্যাধি। লেখিকা যখন ব্রেন টিউমার আক্রান্ত তখন সে সম্ভাবনা মরণের দিকে। শত প্রতিকুলতাকে অতিক্রম করে তিনি ৭ বছর ধরে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে জীবন যুদ্ধে অদম্য লড়ছেন লেখিকা। এই দীর্ঘ সময়ে চিকিৎসায় তিনি এখন সর্বশ্বান্ত। উন্নত চিকিৎসার ব্যায় বহনের কোন সংগতি না থাকায় অসহায় লেখিকা মানবিক মানুষের কাছে সহায়তার জন্য হাত বাড়িয়েছেন। আরও কিছু কাল বেঁচে থাকার প্রার্থনা জানিয়েছেন।
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শির্ষা গ্রামে ১৯৮২ সালে ২৭ মে এক সাধারণ গৃহস্থ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। বাবা আমির হোসেন মা মিসেস মমতাজ জামান। বাবা আমির হোসেন ছিলেন পেশায় একজন দক্ষ কাঠমিস্ত্রিী । চার ভাই বোনের মধে মুন্নী সবার বড়। জন্মে তিন মাস পর থেকেই মুন্নীর ঢাকায় বেড়ে ওঠা। ঢাকার খিলক্ষেত কুর্মিটোলা হাই স্কুল থেকে এস.এস.সি, সরকারী তিতুমীর কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং ¯œাতক পাস করেছেন। বর্তমানে এশিয়া ইউনিভার্সিটিতে তিনি এম.এ শ্রেণীতে অধ্যয়ন করছেন। অনলাইন পত্রিকার নিউজ এজেন্সি ২৪ এ প্রদায়ক হিসেবে কাজ করেছেন কিছুদিন। এছাড়া অনলাইন পত্রিকাতে এবং ব্লগে গল্প, কবিতা, ছড়া লিখছেন নিয়মিত। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রবিন্দু প্রকাশনীর পরিচালক এবং নজরুল-প্রমিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৬ সালে সাহিত্যে স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরুস্কার। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সাহিত্য প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা পদক লাভ করেছেন।
স্কুল জীবনে একজন কথা সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে গিয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলেন। সমাজ ও জনমানুষের অন্তর্গত ভাবনাগুলো তাকে ভিষণ তাড়িত করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার ২০১২ সালে তিনি ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হন। ওই বছর মে মাসে তার ব্রেইন টিউমার (পিিিটউইটারী ম্যাকরোএডেনোমা) অপারেশন হয়। ২০১৪ সালে রেডিওথেরাপি । ২০১৭ সালে তার ক্ষমতার বাইরে ৭৯ হাজার টাকা ব্যায়ে (স্যানডোসট্যাটিন লার ‘২০ এমজি’) ইনজেকশন নিতে হয়। কয়েকজন শুভাকাক্সক্ষীর আন্তরিক সহযোগিতায় এ চিকিৎসা চাণানো সম্ভব হয়।
অসুস্থ অসহায় লেখিকা জানান, ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ভর্তি হয়ে জানতে পারেন নতুন করে টিউমারের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। একটু সুস্থ থাকার জন্য কিছু শুভাকাক্সক্ষীদের সহযোগিতায় গত ২২/০৪/২০১৯ তারিখ চেন্নাই সিএমসি হসপিটালে ভর্তি হন। ২৪ দিন সবধরনের পরীক্ষা শেষে সেখানকার চিকিৎসকগণ জানান টিউমার এখন অপারেশন করার মত নয় । তবে হরমোন ঠিকমতো কাজ করছেনা বলে তিনি অসুস্থবোধ করেন। তারা প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা সমমূল্যের ১টি ইনজেকশন (দীর্ঘ তিন বছরের জন্য) দিতে পরামর্শ দেন। সেই সাথে ধীরে ধীরে আরও অনেক হরমোন রিপ্লেসমেন্ট ওষুধ তাকে নিয়মিত প্রয়োগ করতে হবে। এমনিক হরমোনের ওষুধ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিয়মিত প্রয়োগ করে যেতে হবে। যা তার কিংবা তার পরিবারের পক্ষে চালিয়ে নেয়া আর সম্ভব নয়। মিানুষের সহযোগিতায় এই ৭ বছর আফরোজা মুন্নী অনেক কষ্টের মাঝে কোনমতে চালিয়ে নিয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার আশায় গত সাত বছর কোনমতে চিকিৎসা চালিয়ে এখন সে নিঃস্ব প্রায়। অসুস্থ জীবনের মাঝে হতাশা, পরিবার এবং সব কিছু উপেক্ষা করেও তিনি লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সুজনশীলতা তাকে আরও কিছুকাল বাঁচার সাহস জোগায়। অমর একুশে বইমেলায় এ যাবৎ আফরোজা মুন্নীর ৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে । ২০১৬ সালে উপন্যাস ‘ধূসর কন্যা’ (১ম খন্ড), ২০১৭ সালে ‘ধূসর কন্যা’ (২য় খন্ড)। ২০১৮ সালে প্রবন্ধ ‘ছিটমহলের দিনগুলি’ এবং ২০১৯ সালে গল্পসমগ্র ‘জল ছবিতে আঁকা’ তার সম্ভাবনার প্রকাশনা ।
আরও কিছুকাল বাঁচার আকুতি তার। আরও কিছু কথাসাহিত্য লিখে যেতে চান। একদিকে মরণব্যাধি ব্রেন টিউমারের সাথে লড়াই আর অন্য দিকে সৃজনশীল সাহিত্যের জন্য নিবেদিত থাকার লড়াইটা এখন অদম্য। একটু উন্নত চিকিৎসা হলে তার স্বপ্ন ও সম্ভাবনাটা বাঁচতে পারে।
পিরোজপুরের কাউখালীর আব্দুস সোবহান স্মৃতি পাঠাগারের পরিচালক ও সামাজিক উদ্যোক্তা আব্দুল লতিফ খসরু বলেন, তার চিকিৎসা সহায়তার জন্য লেখিকার প্রকাশিত বই এলাকায় বিক্রয় আমরা কাউখালীবাসি সহায়তার চেষ্টা করেছি। মুন্নী সম্ভাবনাময় লেখিকা। তাঁকে বাঁচানো প্রয়োজন। তার উন্নত চিকিৎসা চালানোর কোন সংগতি আর নেই । এখন প্রয়োজন মানবিক মানুষের সহায়তা।
আফরোজা মুন্নীর কালের কণ্ঠকে বলেন, “আমি শুনেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক বই পড়েন। আমার ভিষণ ইচ্ছে করে আমার ছিটমহলের দিনগুলি বইটিসহ আমার ৪টি বই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে নিজ হাতে উপহার দিতে। ছিটমহল সমস্যা, চুক্তি বাস্তবায়ন এবং তাদের স্বাধীনতা, এখন তারা কেমন আছেন? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদান এ সবকিছু নিয়ে আমার ‘ছিটমহলের দিনগুলি’ বইটি। শিক্ষামূলক এ বইটি বর্তমান প্রজন্মের জন্যই আমি লিখেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মানবতার নেত্রী,অনেক দয়ালু। সেই সাথে তিনিও একজন লেখিকা। জানিনা এ লেখাটি তার চোখে পড়বে কিনা! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে কেউ আমাকে একটু সাহায্য করবে কিনা! আমিতো তার সন্তানের মতো। অসহায় এক সন্তানের আকুতি তার কাছে কী পৌছবে”! আমি আমার বাঁচার আকুতি তাঁর কাছে পৌঁছাতে চাই।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...