ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - মঠবাড়িয়ার কুলুবাড়ির কিংবদন্তির প্রাচীন স্থাপনাগুলো বিলীনের দিকে

মঠবাড়িয়ার কুলুবাড়ির কিংবদন্তির প্রাচীন স্থাপনাগুলো বিলীনের দিকে

দেবদাস মজুমদার >
প্রায় দুইশত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মিরুখালী ইউনিয়নে কুলু বাড়ির প্রাচীন পুরাকীর্তির স্থাপনাগুলো এখন ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। ঐতিহাসিক নিদর্শনের সুরম্য স্থাপনা গুলো সুরক্ষা ও সংস্কারের অভাবে এখন বিলীনের দিকে। প্রতœতত্ত্ব বিভাগের নজরের বাইরে অযতেœ অবহেলায় পড়ে আছে প্রাচীন পুরাকীর্র্তিগুলো।
জনশ্রুতি আছে,আজ থেকে প্রায় দুইশত বছর আগে বরিশালের প্রত্যন্ত কোন এলাকা থেকে বৃন্দাবন চন্দ্র কুলু এখানে আসেন ব্যবসার উদ্দ্যেশ্যে। তখন থেকেই তাদের গোড়াপত্তন হয় এখানে। বৃন্দাবনের তিন ছেলে পূর্ন চন্দ্র রায়, মহশে চন্দ্র রায়, গুরু চরণ রায় এর মধ্যে বড় ছেলে পূর্ন চন্দ্র রায় তখনকার জমিদারদের নিকট থেকে এ এলাকার জমিদারীর সুযোগ লাভ করে। আর তখন থেকেই তাদের পদবী কুলু থেকে পরবির্তন হয়ে যায় রায় পদবী ব্যবহার হতে থাকে। এ বাড়ির এই বিশাল প্রাসাদ এবং নয়াভিরাম মন্দির তিনিই নির্মান করেন। তিনি মারা যান ১৯৫১ সালে। পুর্ন চন্দ্র রায় এর দুই ছেলে শ্যমল লাল রায় এবং নলীনি রঞ্জন রায় তারাও মোটামুটি আধিপত্য বিস্তার করে এ এলাকা রাজ করতেন। নলীনি রঞ্জন রায় ছিলেন এ এলাকার চেয়ারম্যান। তিনি এ এলাকার উন্নয়নে ও সামাজিক উদ্যোগ মূলক অনেক কাজ করে গেছেন। মিরুখালী বাজার স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ নানা উন্নয়ন মূলক কাজে জমিদান এ বংশের একটি স্বীকৃত ইতিহাস। কুলু বংশের নানা জনসেবা মূলক কর্মকা- এখনও দৃশ্যমান আছে এখানে। কুলু বংশের প্রতিষ্ঠিত মিরুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রয়াত নলীনি রঞ্জন রায়ের ছেলে পংকজ রায় বিদ্যালয়ের সভাপতিত্ব করছেন।
প্রাচীনকাল থেকে এ বাড়িকে ঘিরে মেলা বসত। আর নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হত । প্রতিবছর নানা উৎসবে দূর দূরান্তের মানুষ এখানে উৎসবে যোগ দিয়ে মিলন মেলায় মেতে উঠতেন। কালের বিবর্তনে আজ অনেক কিচুই হারিয়ে গেছে। তবে এখানে এখনও প্রতিবছর এখানে দূর্গা উৎসব,কালী পূজা ও বাৎসরিক কীর্তণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে আগের মত অনুষ্ঠানে এখন আর সে প্রাণ নেই। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে কুলু বাড়ির ঐতিহ্য, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে নয়নাভিরাম সুরম্য অট্টালিকা আর কারুকাজ সম্বলিত মন্দির।
কিংবদন্তী রয়েছে কুলু বাড়ির মাটির নীচে মাটির কলসি ভর্তি প্রচুর স্বর্ণ মুদ্রা আর নানা দামি অলংকার গচ্ছিত ছিল। ওই সব ধন সম্পদের কোন অস্তিত্ব না থাকলেও কালের স্থাপনাগুলো এখন কালের সাক্ষি হয়ে দাড়িয়ে আছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, মিরুখালীর কুলু বাড়ির(বর্তমান রায় বাড়ি) মূল ভবন, মন্দির ও মঠ। নান্দনিক নকশা আর অসাধারণ নির্মাণ শৈলীর এসব স্থাপনা সংস্কারের অভাবে প্রতিনিয়ত খসে ও ধসে পড়ার উপক্রম। এছাড়া এখানে রয়েছে নান্দনিক নির্মাণ শৈলী আর দৃষ্টি নন্দন কারুকার্য খচিত অতি পুরাতন তিনটি বিশালাকৃতির অট্টালিকা । একটি দারুন নকশা খচিত দূর্গা মন্দির ও বেশ কিছু কয়েকটি মঠ। এর মধ্যে কুলু বাড়ির দুটো সুরম্য মূল ভবন বহু বছর ধরে পরিত্যাক্ত। এ ভবন দুটি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।একটি ভবনে বংশানুক্রমিক কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে ঝুকিপূর্ন অবস্থায়। প্রায় সব গুলো স্থাপনাই এখন অতি জ্বাজীর্ণ অবস্থা। এবাড়ির বেশ কয়েকটি পরিবার প্রাণহানীর আশংকায় ভবন ছেড়ে পাশে আলাদা বসবাস করছেন। এসব ভবন গুলোর ভিত্তির তলদেশ থেকে রয়েছে একটি বিশেষ সুরঙ্গ যা দিয়ে এক পাশ থেকে অন্য পাশ দেখা যায়। পরিত্যাক্ত মূল ভবনের ভেতরে একটি অন্ধকার কূপ রয়েছে। সেখানে অপরাধি প্রজাদের বিচার আচারও চলত বলে কথিত আছে।
কুলু বংশের বংশধর পংকজ রায় বলেন,এ অঞ্চলে এমন স্থাপনা,মন্দির আর দ্বিতীয়টি নেই। এটি মঠবাড়িয়া জনপদের এখন দর্শনীয় স্থান। প্রাচীন নিদর্শন হলেও নানা সংকটে বংশ পরম্পরায় এসব স্থাপনা সংস্কার ও সুরক্ষার তেমন একটা সংগতি নেই। ফলে বংশগতভাবে এ ঐতিহ্য কার্যকর সুরক্ষা সম্ভব হচ্ছেনা। এ জনপদের ঐতিহ্য হিসেবে স্থাপনাগুলো সুরক্ষার দাবি জানাচ্ছি। সরকার এ বাড়ির নিদর্শণগুলো সুরক্ষার দিকে নজর দিলে এসব প্রচীন স্থাপনা একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
মঠবাড়িয়ার মহিউদ্দিন আহম্মেদ মহিলা মহা বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. ইকতিয়ার হোসেন পান্না বলেন,মিরুখালীর কুলু বাড়ির প্রাচীন স্থাপনাগুলো এখন ঐতিহাসিক নিদর্শণ। এ জনপদের সংস্কৃতির অংশ । যা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। ঐতিহাসিক এসব স্থাপনা সুরক্ষার দায়িত্ব এখন রাষ্ট্রের । কারন প্রাচীন এ নিদর্শন গুলো উপকুলীয় মঠবাড়িয়া জনপদের দর্শনীয় স্থান। এসব সুরক্ষা করে সংরক্ষণ এখন জরুরী বিষয়।
মিরুখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সোবহান শরীফ বলেন, ইতিহাসের কিংবদন্তি মিরুখালীর কুলু বাড়ির স্থাপনাগুলো কালের সাক্ষি। সংস্কার করা গেলে দর্শনীয় স্থান হতে পারে। তাই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রক্ষলাবেক্ষন প্রয়োজন ।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...