ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - সাগরে মৎস্য আহরণে সেকেলে ব্যবস্থার পরিবর্তণ দাবি

সাগরে মৎস্য আহরণে সেকেলে ব্যবস্থার পরিবর্তণ দাবি

মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ,পাথরঘাটা(বরগুনা) <>
সাগরে ইলিশ মাছ ধরে আবদুর রাজ্জাক । গভীর সাগরগামী বড় ট্রলারে তিনি সহকারি মাঝি হিসেবে মৌসুম হলেই মাছ ধরতে গমন করেন। সম্প্রতি একবার তিনি ভুলক্রমে ভারতে চলে যান বন্ধুবৎসল ভারতীয় জেলেরা তাকে বাংলাদেশ জল সীমানায় পৌঁছে দেন।
ভারতীয় ট্রলারে চড়ে স্বদেশে ফিরে আসার পথে তিনি পর্যবেক্ষন করেন ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরার কৌশল,ধরণ ও উপকরণ ইত্যাদি। গত মঙ্গলবার (২৭ আগষ্ট) দুপুরে তিনি কালেরকন্ঠ প্রতিনিধি তার কাছে সাগরে ইলিশ মাছ কেমন পাওয়া যাচ্ছে এমন প্রশ্ন করলেই তিনি তার লব্ধ অভিজ্ঞতার ঝাপি খুলে বসেন।
ট্রলার মাঝি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ভারতীয় সীমানার চেয়ে বাংলাদেশে ইলিশ মাছের প্রাচুর্যতা বেশী। ১৬ বছর ধরে এ পেশার সাথে জড়িত। তিনি বলেন,ওরা কম সময় ও কম পরিশ্রমে বেশী মাছ আহরণ করে থাকে। কারন তাদের রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। সহসা মাছের প্রাচুর্যতা বুঝতে পারে, বুঝতে পারে কোথায় পানির গভীরতা কম বা বেশী। তাদের সকল বোটে আছে জিপিএস ব্যবস্থা, ওয়ারলেস মাধ্যমে যোগাযোগের আধুনিক যন্ত্রপাতি। কোন বিপদে পড়েলে সহসা তাদের সঙ্গী ট্রলারকে খবর পাঠোলে একত্র হয়। শত্রুরা ভয় পায়। কখনো তাদের ওয়ারলেস ব্যবস্থায় সামরিক/ আধাসাামরিক বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করতে পারে। যেকারনে তারা বেশী মাছ ধরতে পারে।
আমাদের দেশের সাগরে মাছ ধরার ট্রলারগুলিতে এমন কোন আধুনিক উপকরণ নেই। যে কারনে বেশী সময় ও শ্রম দিয়েও তাদের ভাগ্যে পর্যাপ্ত মাছ জোটেনা। ভারতীয় জেলেরা আমাদের এলাকা থেকেও দ্রুত মাছ ধরে নিয়ে যেতে দেখি “ মোরা তহন এতিমের মত চাইয়া থাহি” তার পাশে বসা এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারে মালিক মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা গ্রামের মো.দেলোয়ার হোসেন একথার সায় দেন।
২দিন আগে সাগর থেকে ইলিশ শিকার করে ফিরে আসা জেলে জেলে মোনসের আলী হতাশার সুরে বলেন, আমাদের জীবন বাজি রেখে সাগরে যাই কিন্তু নিরাপত্তার সাধারণ সরঞ্জাম নেই আমাদের বোটে।
এব্যপারে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী স্বীকার করে বলেন, ভারতীয়রা আমাদের চেয়ে আধুনিক সরঞ্চাম নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে নামে তাই তারা বেশী লাভবান। তারা কিন্তু মাছের খড়ি (যেখানে মাছ বেশী) খুজতে খুজতে বাংলাদেশের পটুয়াখালীর কূয়াকাটা গলাচিপার সমুদ্্রসীমানা পর্যন্ত চলে আসে। তারা বেশী মাছ ধরে থাকে। আমাদের জেলেদের আধুনিকায়ন করতে হলে দরকার সরকারের সহযোগিতা।
দক্ষিনাঞ্চলে বৃহত্তর মৎস্য বন্দর পাথরঘাটা বিএফডিসি পাইকারি মৎস্য অবতরন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট এম নুরুল আমিন কালেকন্ঠকে স্বীকার করে বলেন, বাংলাদেশী জেলেদের মৎস্য আহরণ ব্যবস্থা এখনো সেকেলে। তাদের জিপিএস বা ইকোসাউন্ডার কিছুই নাই। সাগরে গেলে হঠাৎ নিখোজ হলে তাদের খুজে পাওয়া যায়না। সময়ের সাথে তাল মিলাতে না পারলে উপকূলের জেলেদের জীবনমান ভাল হবেনা। স্থায়ীত্বশীলতার জন্য এদিকে নজর দেয়া আবশ্যক।
তিনি এবছর সরকারের মৎস্য আহরনে নিশেধাজ্ঞা থাকায় মাছের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন। এছাড়া এবছর বড় সাইজের মাছের পরিমান বেশী। জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফার দাবি, এবছর আহরনের প্রায় ১০ % মাছ গ্রেড (এক কেজি বা তার বড়) সাইজের। এবছর ২৫ আগষ্ট পর্যন্ত ২৫দিনে বিএফডিসি অবতরণ কেদ্্ের ৪৪৫ মেিেট্রক টন ইলিশ বিক্রী হয়। এবাবদ টোল আদায় হয় ৩১ লক্ষ টাকা। গত বছর একই সময়ে টোল আদায় হয়েছিল ২৯ লক্ষ এবং মাছ বিক্রী হয়েছিল ৪৩৮ মেট্রিক টন। তা ছাড়া ২৩ জুলাই ৬৫ দিনের মাছ ধরার অবরোধ তুলে নেয়ার পর এপর্যন্ত ২টি নিন্মচাপ সৃস্টি হযেছিল। ছিল সাগর উত্তাল অন্তত তিন বার। এতে ১০/১২দিন জেলেরা সাগরমূখী হতে পারেনি। প্রাকৃতিক সমস্যা না হলে আরো বেশী মাছ পাওয়া যেত। তিনি আশা করেন মৌসুম শেষে এবছর বেশী মাছ আহরন হবে।
জেলেদের আধুনিকায়ন বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ টেলিফোনে বলেন, তিনি জেলেদের আধুনিকায়নের গুরুত্ব অনুধাবন করেন। এবছর প্রধানমন্ত্রীর সাথে জেলা প্রশাসকদের সাথে সমন্বয় সভায় উপক’লের জেলে ও মৎস্য আহরনের আধুনিকায়ন ও তাদের প্রশিক্ষনের আবশ্যকতার দাবি করেছেন।।##

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...