ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - মঠবাড়িয়া আসনে ফরাজির লাঙল -দুলালের ধানেরশীষ এর দ্বিমুখী লড়াই

মঠবাড়িয়া আসনে ফরাজির লাঙল -দুলালের ধানেরশীষ এর দ্বিমুখী লড়াই

দেবদাস মজুমদার >>

পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া একক আসনে একসময় ধানেরশীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ডা. রুস্তুম আলী ফরাজি। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি ধানেরশীষ প্রতীকে নির্বাচিত হন। এরপর স্থানীয় বিএনপির নেতা কর্মীদেও ভেতর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নানা মতবিরোধ দেখা দেয়। প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন স্থানীয় বিএনপির নেতা কর্মীরা। ২০১৪ সালে বিএনপির ধানেরশীষ মনোনয়ন চেয়ে আর পাননি। সে যাত্রা ডা. ফরাজিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীক পরাজিত করে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার চিত্র উল্টো । সাধারণ ভোটারের কাছে জনপ্রিয় ডা. রুস্তুম আলী ফরাজি জাতীয় পার্টিতে(এরশাদ) যোগ দিয়ে মহাজোট প্রার্থী হয়ে লাঙল প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করছে। একদা ধানেরশীষ প্রতীকের এমপি এবার প্রতিদ্বন্দী ধানেরশীষ প্রতীকের ।
এবার পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া একক আসনে লড়াই হচ্ছে মহাজোটের লাঙল আর বিএনপির ধানেরশীষ।

জানাগেছে, মঠবাড়িয়া আসনে নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রচারণা শেষ মূহুর্তে তুঙ্গে। এ আসনে মহজোটের লাঙ্গল, বিএনপির ধানেরশীষ প্রতীকের কর্মী সমর্থকদের প্রচারণায় নির্বাচনী মাঠ এখন সরগরম। মহাজোটের লাঙল নির্বিঘেœ মাঠ চষছেন। আর বিএনপির রুহুল আমীন দুলাল এর ধানেরশীষ বড় ধরনের সভা,মিছিল চোখে না পড়লেও তারা প্রচারণার কৌশল হিসেবে উঠান বৈঠক আর মতবিনিময় সভায় মাঠে সরব । এ আসনে বিএনপির অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ় ধাকলেও তপছিল ঘোষণার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত দলটি দ্বিধা বিভক্ত ছিল। নির্বাচনকে ঘিরে সে বিভক্তির অবসান হয়েছে। ফলে নেতা কর্মীরা ভোট ঘিরে এখন চাঙা। অপরদিকে ডা. রুস্তুম আলী ফরাজির লাঙল প্রতীক এবার মহাজোটের প্রতীক। একদিকে তার নিজস্ব ভোটব্যাংক আর অন্যদিকে আ.লীগের দলীয় ভোট মিলে লাঙল আছে ফুরফুরে আমেজে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দ্বিমুখী লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডি।
এ আসনে মহাজোটে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী জোট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাসহ তৃণমূলের বড় একটি অংশ বিক্ষুব্দ হয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। দলের বড় একটি অংশ দলীয় প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুর রহমানকে নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আপেল প্রতীক নিয়ে মাঠেও নেমেছিল। এতে মহাজোট ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের মাঝে বিভাজন তৈরী হওয়ায় নানা সংকট দেখা দেয় । অবশেষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে পিরোজপুর জেলা অওয়ামী লীগের এক সভায় কে›ন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিমের মধ্যস্থতায় লিখিত ভাবে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। সেই সাথে মহাজোটের বিদ্রোহী প্রার্থী আশরাফুর রহমানের নির্বাচনী সকল প্রচারণা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জোটের মধ্যে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপ এখন এক হয়ে ডা. ফরাজির লাঙল প্রতীকে নির্বাচনী মাঠ সরব করছেন। ফলে লাঙল এখন আরও মহাজোটগত প্রচারণায় শক্ত অবস্থানে উঠে এসেছেন। মহাজোট প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী এ আসনে প্রথম ১৯৯৬ সালে জাতীয় পাটির , ২০০১ সালে বিএনপি ও ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ডা. ফরাজির নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে যা প্রতিটা নির্বাচনে তাকে অপ্রতীদ্বন্দী করে তোলে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র রফিউদ্দিন আহম্মেদ ফেরদৌস বলেন, শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের কান্ডারী। দেশে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ঘটেছে। একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই এ উন্নয়ন সম্ভব। আমরা সকল দ্বিধা দ্বন্দ ভুলে একজোট হয়ে মহাজোটের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে চাই। ইতিমধ্যে এ আসনের সকল মুক্তিযোদ্ধারা মহাজোটের লাঙল প্রতীকে সমর্থন দিয়েছেন। আর সাধারণ ভোটাররাও চান জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে।

এদিকে দীর্ঘদিন বিরোধি দলে থাকা নতুন মুখ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন দুলাল নির্বাচনী মাঠে এখন শক্ত প্রার্থী হিসেবে কৌশলে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছেন। তিনি স্থানীয় বিএনপিতে একজন ত্যাগী নেতা। তবে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কোন্দলে দুই ধারায় বিভক্তি ছিল। এবার তারা দলের হাই কমা-ের নির্দেশে নেতাকর্মীরা বিভেদ ভুলে একাট্রা হয়েছেন। ফলে স্থানীয় বিএনপি এখন আগের চেয়ে চাঙা হয়ে উঠেছেন। ভোটাররা মনে করেন বিএনপির নতুন প্রার্থী রুহুল আমীন দুলালের সাথে লড়াইটাও বেশ চ্যালেঞ্জের। বিএনপির নেতা কর্মীরা এ আসনে বড় সমাবেশ,মিছিল না করলেও তারা নিরবে উঠান বৈঠক, মতবিনিময় সভা ও ভোটারের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি দলের ১০০ নেতা কর্মীর নামে মামলা আর বেশ কিছু নেতা কর্মী গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে থাকায় দলীয় নির্বাচনী প্রচারণায় শেষ মুহূর্তে এসে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে ১০০ নেতা কর্মীর নামে পুলিশ গায়েবি মালা দিয়ে হয়রাণি করছে। তারপরও এ আসনে বিএনপির ভোট সুসংহত। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ধানেরশীষ প্রতীকেরই জয় হবে।

একক এ আসনে মহাজোটের লাঙ্গল ও বিএনপির ধানেরশীষ প্রতীকের প্রচার প্রচারণায় হাট জনপদ মুখরিত হয়ে উঠেছে। এ আসনে লাঙ্গল ও ধানের শীষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে সবাই ধারণা করছেন।

উল্লেখ্য পিরোজপু-৩ একক আসনে এবার ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৮৬ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ৯৫ হাজার ২৮৮ জন ও পুরুষ ভোটার ৯৪ হাজার ২৯৮ জন। এ আসনের ৮১টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...