ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - মৌসুমের শেষ প্রান্তে ইলিশের আকাল 🔹উপকুলীয় জেলেরা বিপাকে

মৌসুমের শেষ প্রান্তে ইলিশের আকাল 🔹উপকুলীয় জেলেরা বিপাকে

মির্জা খালেদ, পাথরঘাটা 🔹

সাগরে ভরা মৌসুমেও প্রত্যাশিত পরিমানে ইলিশ পাচ্ছে না জেলেরা। মৌসুমের শুরু থেকে প্রতিমাসেই সাগর থাকছে উত্তাল। জেলে পল্লী আর মাছ ব্যবসায়িদের এখন চলছে দুর্দিন। মাছ না পাওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছে উপজেলার ৩৩ হাজার জেলে ও রসদ সরবরাহকারি ব্যবসায়ীরা।

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আবার শুরু হবে মা ইলিশ সংরক্ষনের জন্য অবরোধ। নদীতে জাল ফেলে কিছু ইলিশের দেখা মিললেও আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় এনজিওর ঋণ আর দাদনের টাকা পরিশোধের ভাবনাই জেলে পরিবারে নেমে এসেছে হতাশা।
উপকূলীয় উপজেলার পাথরঘাটার প্রায় ২২ ভাগ মানুষ সরাসরি মৎস্য আহরন করে জীবিকা নির্বাহ করে। এদের মধ্যে ১৪ হাজার জেলে মৎস্য বিভাগ কর্তৃক নিবন্ধিত। এছাড়া ইলিশ আহরনে যুক্ত জেলেদের রসদ যেমন জ্বালানী, বরফ, জাল দড়ি ও কাচাঁবাজার সরবরাহের সাথে যুক্ত আছে আরো হাজার হাজার ব্যবসায়ী। মাছ সংকটে হতাশ হয়ে পড়েছে সব শ্রেনীর মানুষ ।
খাজা বরফ কলের মালিক মিহির কুমার আঁশ বলেন, এবছর মাছ না থাকায় বরফ তৈরী করে বাকিতে বিক্রী করছি। ১২ লাখ টাকা পাওনা, সবাই মাছ পাবে আশায় বাকি দিচ্ছ্ িউপজেলার ২৪টি বরফ কলের একই অবস্থা।
ট্রলার মালিক মো. আবুল ফরাজী বলেন, সাধারনতঃ বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত চলে ইলিশের মৌসুম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে মৌসুমের সময় পরিবর্তন হয়ে আষাঢ় থেকে শুরু হয়। ফলে মৌসুমের বড় একটি সময় জেলেরা বেকার থাকে। ফলে তাদের পূঁিজ ওঠেনা। এবছর ৩২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে সাগরে ট্রলার পাঠিয়েছি এখনো ১০ লাখ টাকা হাতে আসেনি। উপকূল ও নদী মোহনায় মাছ নেই তবে গভীর সাগরে মাছ আছে। কিন্তু ১০/১২ ঘন্টা ট্রলার চালিয়ে সাগরের পৌঁছতেই সাগর উত্তাল হয়ে পরে ফলে জীবনের ঝুকি নিয়ে শূন্য হাতে ফিরে আসতে হয়।
এফবি শাহজালার নামক ট্রলারের মালিক মো. শাহীন বলেন, জীবনের ঝুকি নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে অনেক জেলে ঝড়ের কবলে পড়ে মৃত্যু বরন করেছে। তার শাহজালার নামক ট্রলার সাগরে ডুবে গেলে ১০ জেলে ফিরে এসেছে কিন্তু ৮ জেলে এখনো নিখোজঁ। জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক দুলাল মাস্টার জানান উত্তাল সাগরে ঝুকি নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে এখনো ৪৯ জেলে নিখোজ, লাশ পাওয়া গেছে ৪ জনের।
অপর মৎস ব্যবসায়ী মো. মাসুম মিয়া বলেন, এবছর শতকরা ৮০ ভাগ ট্রলার মালিক তাদের পূজি তুলতে পারেনি। মৎস্য ব্যবসায়ী মো. আলম বলেন,দুই লাখ টাকার কাচাঁ বাজার জ্বালানী নিয়ে সাগরে গিয়ে ফিরে আসছে ৪০ হাজার টাকার মাছ নিয়ে।
জেলে মো.মনিরুজ্জামান, মো.আবুল, আবদুল মালেক সহ আরো অনেকে জানান, বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু মৌসুমের সাড়ে চার মাস পেরিয়ে গেলেও জালে প্রত্যাশিত পরিমান ইলিশ ধরা পড়ছে না। সারাদিন জাল বেয়ে খরচের টাকা উঠছে না। নদীতে জাল ফেলে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। অনেকেই এনজিও ও বিভিন্ন অর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছে। ইলিশ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবে বলে ওয়াদা করে চলেছে, কিন্তু ইলিশ না পাওয়া ঋণের দেনা শোধ করতে পারছেন না। শুনতে হচ্ছে গাল মন্দ।
দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরন কেন্দ্র পাথরঘাটা বিএফডিসির ব্যাবস্থাপক লেফটেন্যান্ট এম.রুহুল আমিন এর কালেরকন্ঠকে জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর ইলিশসহ অনান্য মাছ খুব কম। গত এক সপ্তাহে ১৭৩ টন ইলিশ বিক্রি হয়েছে। যা আগের বছরে তুলনায় কয়েক গুন কম। মৎস্য আবতরণ কেন্দ্রটি এখন ক্রেতা বিক্রেতা শূন্য। আরৎদারগন লোকসান গুনছে।
দূর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচী(সিপিপি) অফিস সহকারি মো. আরাফাত সগির জানান, গত চার মাসে প্রায় ৬/৭টি লঘু চাপ ছিল এবং আগষ্ট মাসেও ৩টি লঘু চাপের কারনে সাগর উত্তাল ছিল। সতর্ক সংকেত দিয়ে জেলেদের গভীর সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়।
এব্যাপরে পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজাহারুল ইসলাম টেলিফোনে জানান, এবছর মাছ প্রত্যাশিত পরিমানে পাওয়া যাচ্ছে না। মৌসুম এখন শেষ পর্যায়ে। এর ই মধ্যে আশ্বিনের পূর্নিমায় ৭ অক্টোবর থেকে ২৮দিন মা ইলিশ সংরক্ষনের জন্য সাগরে বা নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে।##

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...