ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - কাউখালীর আমড়ার বাম্পার ফলন

কাউখালীর আমড়ার বাম্পার ফলন

মো. তারিকুল ইসলাম পান্নু,কাউখালী (পিরোজপুর) >>

পিরোজপুরের কাউখালীতর আমড়া এলাকার সমৃদ্ধ ফসল। এখানে আমড়ার আবাদ হচ্ছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। এবার আমড়ার বাম্পার ফলন হলেও দাম কিছুটা কমতির দিকে । এতে চাষীরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে, উপকূলীয় জেলা গুলোতে আশির দশকে এক শ্রেনীর বেকার যুবকরা আমড়া চাষের দিকে ঝুকে পড়ে। গত বছর এক বস্তা আমড়ার বাজার দর রয়েছে প্রকার ভেদে এক হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এ বছর বস্তা প্রতি দাম রয়েছে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। বর্তমানে আমড়া একটি লাভজনক ও ভিটামিন সংযুক্ত পুষ্টিকর ফল হওয়ায় আশির দশকের পর থেকে এ গাছের রোপন তথা চাষ ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে। কাউখালী উপজেলার পতিত জায়গা সরকারী খাস জমি লিজ নিয়ে, সড়ক ও জনপথের দু’ধারে এবং বসতবাড়ীতে নিজস্ব উদ্যোগে ব্যবসায়ী ভিত্তিতে ব্যাপক হারে আমড়ার চাষ প্রচলন করা হচ্ছে। আমড়া দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইতিমধ্যেই বিদেশেও পাঠানো শুরু হয়েছে কাউখালীর এ মোকাম থেকে। বর্তমানে এতো বেশি আমড়ার ফলন দেশ বিদেশে চালানের পরও পর্যাপ্ত মজুদ থাকার মত অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অথচ হিমাগারের অভাবে সংরক্ষন করা যাচ্ছে ন। যে কারনে আড়ৎদারদের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশী হওয়ায় স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে কম মূল্য আমড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষীরা।

উপজেলার সাহাপুরা গ্রামের আমড়া ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এ মোকাম থেকে বছরের চার মাস অর্থাৎ আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটি টাকার আমড়া চালান দেয়া হয়। ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, নারায়নগঞ্জ, যশোর, সিলেট, চট্টগ্রাম, রংপুর, নোয়াখালী ছাড়াও এখন দেশের বাহিরে ভারত, দুবাই, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড সহ দেশ বিদেশের বহু স্থানে ঐতিহ্যবাহী কাউখালীর আমড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে বলে আমড়া চাষীরা জানান। ফলে চাষীরা দিন দিন এই এলাকায় আমড়া চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ফলে এলাকায় আমড়া চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এলাকার এমন কোন বাড়ি পাওয়া যাবে না যেখানে ২-৪টি আমড়া না আছে। আমড়া গাছের চাড়া রোপনের ৩-৪ বছরের মধ্যে ফলন ধরে, তা কোন আপদ বালাই ছাড়াই এক নাগারে ১৫-২০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। এর পর আস্তে আস্তে গাছ শুকিয়ে যায় ফলে জমিরও কোন ক্ষতি হয় না। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে আমড়া বাংলাদেশের একটি সু-পরিচিত ফল। এটি ছেলে মেয়েদের অতি প্রিয়। আমড়ায় পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ইত্যাদি অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। খাদ্যপোযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় রয়েছে ১.১ গ্রাম প্রোটিন, ১৫গ্রাম শ্বেতসার, ০.১ গ্রাম স্নেহ, ০.২৮ মিঃ গ্রামঃ ভিটামিন এ, ০.০৪ মিঃ গ্রাম ভিটামিন বি, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৫৫ মিঃ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩.৯ মিঃ গ্রাম লৌহ এবং ৮০০ মাইক্রোগ্রম ক্যারোটিন রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি আমড়ায় ৬৬ কিঃ গ্রাম খাদ্য শক্তি রয়েছে। এসব পুষ্টি উপাদান আমাদের সু-স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজন। ফলে একদিকে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করছে এবং অন্যদিকে বাম্পার ফলনে আর্থিক লাভবান হওয়া যায়। এবং আপদকালীন সময়ে গ্রামে গঞ্জে যখন কৃষকদের হাতে কোন টাকা পয়সা থাকে না তখন আমরার বাম্পার ফলনই আমড়া চাষীদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে। চাষীদের দাবী সরকারী পর্যায়ে একটি হিমাগার স্থাপন করে চাষীদের আমড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আলী আজম জানান, আমড়া একটি দ্রুত বর্ধনশীল গাছ হওয়ায় এটি অল্প সময়ের মধ্যেই বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় এবং ফল ধরে। পরিকল্পিতভাবে আমড়া চাষ করে প্রচুর অর্থ লাভ করা সম্ভব। এ কারনেই আমরা বেকার যুবক ও কৃষকদের পরিত্যাক্ত উঁচু জমিতে আমরা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...