ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ের কাগজ ও গুণগত মান

বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ের কাগজ ও গুণগত মান

শিক্ষা জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত এবং আমাদের এই দেশ সেই পুথিগত বিদ্যার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা নিয়ে দিনদিন এগিয়ে যাচ্ছে এ কথা অকপটে স্বীকার করতে হবে।আমাদের অনেক জাতীয় উৎসবের মধ্যে ১ লা জানুয়ারী সকল শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া বর্তমান সরকারের একটা সাফল্যময় উৎসব ও চ্যালেঞ্জ। এটা এখন একটা জাতীয় উৎসবে পরিনত হয়েছে।

বছরের প্রথম দিন এক সেট নতুন বই পেয়ে ও নতুন বইয়ের গন্ধে বিমোহিত হয় আমাদের সন্তানরা। তবে আমার আজকের লেখা নতুন বই পাওয়ার আনন্দময় অনুভূতির পাশাপাশি কিছু প্রশ্ন ও ক্ষোভ নিয়ে। আমি জানি এই পত্রিকার (আজকের মঠবাড়িয়া) নিয়মিত পাঠকদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত আছেন। তাঁরা আমার এই লেখা পড়লে বা উপলব্ধি করলে আমার ভাল লাগবে। তার চেয়েও বড় কথা হলো আমাদের প্রত্যেকের সন্তান বিভিন্ন শ্রেণিতে অধ্যায়নরত এবং এ জন্য আমরা সরাসরি ঐ সকল পাঠ্য বই সম্পর্কে কম বেশি ধারনা রাখি।

আমার দুইটা উপলব্ধির মধ্যে প্রথম হলো –” বইয়ের কাগজের গুণগত মান প্রসঙ্গে।” আমরা দেখতে পাচ্ছি গেল প্রায় দুবছর ধরে ( আনুমানিক) শিক্ষার্থীরা তাদের এক সেট বই দিয়ে খুব বেশি হলে তিন মাস পড়তে পারে। বই পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে বইয়ের কভার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে যায় এবং ভিতরের কাগজ এতই দুর্বল থাকে যে তা সেলাই বা গাম দিয়ে ঠিক রাখা যায় না। তাই আমরা স্বীকার করি আর না করি আমরা প্রায় প্রত্যেকে তাদের আত্মীয় বা পরিচিত শিক্ষকের কাছ থেকে দুই থেকে তিন সেট বই সংগ্রহ করে থাকি পুরা একটা বছর সন্তানকে পড়ানোর জন্য যেটা আমরা আমাদের সময় ভাবতেই পারতাম না। আমার মনে আছে আমি যখন প্রাইমারিতে পড়তাম তখন স্কুলের সকল শিক্ষার্থীর তুলনায় কম বই আসত। তখন শিক্ষকরা আমাদের বলত পুরানো বই স্কুলে জমা দিতে এবং কোন কোন শিক্ষার্থী সেই পুরানো বই দিয়ে আরো একটা বছর চালিয়ে দিত। এখন দয়া করে একটু ভেবে দেখুন তখন সেই বইয়ের কাগজের মানটা কেমন ছিল! এখন আমার প্রশ্ন হলো প্রত্যেক শিক্ষার্থীর যদি দুই থেকে তিন সেট বই সংগ্রহ করতে হয় এবং এই বাড়তি বই ছাপাতে কি সরকারের বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ নিতে হচ্ছে না?? এতে কি দেশের অর্থনীতি কিছুটা বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে না?? নাকি শিক্ষা দপ্তরে আমাদের সঠিক শিক্ষার্থীর পরিসংখ্যানটা নেই!!

আমার দ্বিতীয় উপলব্ধি বা প্রশ্ন হলে — ” পাঠ্য বইয়ের আলচ্য বিষয়ের ব্যাপকতা বা মৌলিক ধারনা প্রসঙ্গে”। আমি ২০১৬ সালের পঞ্চম শ্রেণির “বাংলাদেশ ও বিশ্ববপরিচয়” বিষয়ের পলাশীর যুদ্ধের কাহিনী মেয়েকে পড়াতে গিয়ে দেখেছি সেই ইতিহাস কতটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। এই বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমাকে ১৫ সালের বই সংগ্রহ করতে হয়েছে এবং সেই বইতে ধারাবাহিকভাবে বিষয়টির ব্যাখ্যা ছিল।আমরা জানি বর্তমান আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে কারিকুলাম (curriculum) তাতে প্রত্যেক বিষয়ের উপর ৫/৭ টা বড় (broad) প্রশ্ন লিখতে হয়। এবং এর জন্য কম পক্ষে ৩০ থেকে ৪০ টা বাক্য লিখতে হয় যা এই বর্তমান বইয়ে ঐ পরিমান বাক্য একটা বিষয়ের উপর থাকে না। অথচ দেখা যায় অসংখ্য সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করছেন শিক্ষকরা। তাহলে কি ধরে নেব আমাদের এক একটা সন্তান এক একটা software?? যে তারা ইচ্ছে করলেই লিখে ফেলতে পারবে সব কিছু!! আমরা এখন একটা বিষয়ের সাথে সবাই পরিচিত তা হলো তার সন্তানকে বিভিন্ন কোচিং এবং শিক্ষকরা বলে থাকেন ৫/৭ বছর আগের বই সংগ্রহ করতে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো বই আমরা কেন পরিবর্তন বা up date করি? নিশ্চই বইয়ের পাঠের বা আলোচ্য বিষয়ের মৌলিক জ্ঞান আরো মজবুত করার জন্য?? কিন্তু কই সেখানে তো আমাদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে পিছনের বইয়ের কাছে। আর বর্তমান বই হারাচ্ছে তার মান। তাই আমাদের ঐ সকল সরকারি বিনমূল্যের বই সংগ্রহ করতে যেতে হচ্ছে বিভিন্ন বইয়ের দোকানে।

আমার আর একটা প্রশ্ন হলো- আমাদের ঐ সকল অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলী কি কোন ভাবে তাঁদের বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা নীতির সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত মনে করেন না? তাঁরা কি সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌছে দিতে পারেন না তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাসেজ?? পিছনের বইয়ে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও বিষয়ের ব্যাপ্তি ছিলো বই পরিবর্তন করতে গিয়ে যে মূল জ্ঞান বা বিষয় সংকীর্ণ হচ্ছে সেটা কি তারা বুঝতে পারছে না? তাই সব শেষে আমি বলতে চাই আমার সন্তানের জন্য আমি তার টেবিলে এক বছর পড়ার জন্য এক সেট উপযুক্ত তথ্যপূর্ণ বই চাই!! যেন আমার সন্তান সেই বই পড়ে তার অসংখ্য সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সঠিক ভাবে লিখতে পারে। কোন অবস্থাতেই যেন তাকে পুরানো বই খুঁজতে না হয় এবং সার্স করতে না হয় গুগল।আর সরকারকেও এ জন্য যেন গুনতে না হয় বাড়তি বই মুদ্রনের বাড়তি খরচ!!

লেখিকা > রুমানা রুমা,সমাজকর্মী

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...