প্রেমের ফসল
———–
প্রেমের নামে জন্ম নিল এক যে জাতক আজ।
সকল দায় বইতে হবে প্রেমিকা তোমার তাজ ।
প্রেমের নামে প্রেমিক রাজ রোপণ করে বীজ।
সেই বীজ যে বিষ হবে জানতো না তো কেউ।
গর্ভ দায়ের স্বীকারপত্র আদায়ে তুমি নামো।
আমরণ অনশনেও স্বীকৃতি না জোটে ; প্রেমিক রাজ সব সম্পর্ক অস্বীকার আজ করে।
স্বীকৃতি না পেয়ে আজ আত্মহত্যা কর।
একের ভিতর দু’য়ের মরণ দেখলো না তো কেউ।
লোক লজ্জার ভয়ে মা-বাপ জাতক হত্যা করায়।
খুন করার সাহস নেই তাই ডাস্টবিনে ফালায়। জাতক মারতে
কেউবা আবার হাসপাতালে যায়।
টাকার বিনিময়ে তারা ডোমকে ভাড়া নেয়।
টাকা নিলেও ডোম বাবাজি হত্যা নাহি করে।
ডোমের মায়ায় জাতক এবার টিকিয়া যে যায়।
ডোমের বাড়ি নিলে জাতক ডোমের কণ্যা হয়।
পিতৃহীন জাতক যে আজ বাবা পেয়ে যায়।
সন্তান শোকে কুমারী মা পাগল হয়ে যায়।
মায়ের জন্য পাগলাগারদ স্থায়ী আবাস হয়।
হেথায় খুঁজে হোথায় খুঁজে কোথাও না পায়।
বুদ্ধিহীন এ মা কেবল দুঃখ বয়ে যায়।
নিজকে যদি সচেতন আজ না কর এ ভবে।
দেহের উপর ভিত্তি করে সারাটা জীবন রবে।
বিয়ে পূর্ব যৌনকার্য করতে যাবে না।
কন্যা তোমার গর্ভদায় প্রেমিক নেবে না।
প্রেমের নামে জনন অঙ্গ মেলে ধরো না।
খুলে দিলে অঙ্গ তোমার ধরায় বাঁচব না।
প্রেমের নামে হরমোন জ্বালায় মানবতা মরে যায়।
© ওশ্যাঘর
[ অনাকাঙ্ক্ষিত এক নবজাতককে মেরে ফেলার জন্য গাজীপুর হাসপাতালে একজন ধনবান লোক ডোমকে এক লক্ষ টাকা দেয়। যাতে তার মেয়ের গর্ভে জন্ম নেয়া শিশুকে মেরে ফেলে। ডোম টাকা নেয়। জাতককে মারে না। এ জাতক ডোমের ঘরে পালিত হয়। ডোমের কথা – আমি লাশ কাটি ; মানুষ না । মানুষ মারা আমার পেশা নয় । সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কারনে ডোম চাকরি হারায় । ডোমের ছেলে বদলী চাকরী পায় । এদিকে ঐ সন্তান ডোমের সন্তান হয়ে বড় হয় । ডোমের ঘটনাটি মাথায় আটকে আছে । সেটা স্মরণ করে ঐ ডোমকে উৎসর্গ করা । ]
গণিকালয়
————
গণিকাবৃত্তি গণিকা নাম নিয়ে এসেছি সেই কবে।
নাম দিয়ে যে পেশা হবে ভাবিনি তো ভবে।
ভাবিনি তো খুপড়ি ঘরে বসত মোর হবে।
জানালাহীন ঐ ঘরেতে ঝলমলে পোশাক ;
চার ইঞ্চির হাই হিল আর সবুজ রঙের ফ্রোক ;
চাঁদ বদনের সেই তো আমি এই ঘরেতে রই।
ক্রিতদাসের হাসি দিয়ে অধররঞ্জনী বই।
কাঁচুলি পড়তে এখন অনভ্যস্থ হই।
এক কাঁচুলি কতবার খুলতে মন চায় ?
ঘামে ভিজা শরীর মোর ঘামাচিময় রয় ;
এ শরীর তো কখনোই শুষ্ক থাকে না।
চোখখানি মোর মাটির দিকে সর্বদা তাকায় ।
শরীর যে মোর নিলামযোগ্য মন তো কিছু নয় ।
এ দেহ যে আরেক দেহের সাময়িক দখল নেয়।
মানুষরুপী দেহ বস্তুর মালিকানা পায়।
মোর জীবনের সকল রঙ ফিকে হয়ে যায়।
‘পুরুষ খুঁটি’র সাথে মোর নৃত্য শিখতে হয়।
গা ছমছম করা পুরুষের কেবল গহ্বর দরকার।
আমারও তো টাকার জন্য ‘পুরুষ খুঁটি’ দরকার।
টাকায় কেনা শরীর বলে প্রত্যাখ্যান নয়।
গহ্বর আর ‘পুরুষ খুঁটি’ একাকার হয়।
তের বছর বয়সে এ গহ্বরে রক্ত গঙ্গা বয়।
তবে প্রকৃতির নিয়মে আসা রজঃরক্ত নয়।
‘পুরুষ খুঁটি’র তাণ্ডব নৃত্যে রক্তের আকুতি হয়।
‘পুরুষ খুঁটি’ দেহখানাকে চামড়া মনে করে।
খুবলে খাওয়া দেহখানা সাজসজ্জা না চায়।
তবু কেন বউ সাজুনী হৃদপাজর পোড়ায় ?
আমার এ দেহখানা কেন পুঁতিময় ?
দেহ নামক বইখানার কবে শুরু হয় ?
আবার এ বইখানার কোথায় শেষ রয় ?
বইখানার মধ্যপাতা হিসাব বিহীন হয়।
কেমন করে হিসাব দিব নিকাশ যদি চায় ?
মধ্য গগণে এসে জীবন খেই হারায়।
তবু কেন ‘গহ্বরে’র নৃত্য থামে না?
অর্থের লোভে শরীর তো আর থামে না।
পালিয়ে বাঁচার স্বপ্ন সময় যখন থমকে যায়;
পালিয়ে যাবার চিন্তা যখন দূরে চলে যায় ;
লোভ তখনই দেহের মধ্যে নৃত্যরত রয়।
সময় এখন জানিয়ে দেয় থেকে যাওয়াটাই উত্তম ;
মন তখন এ বলে আত্মতৃপ্ত হয় ‘ ধর্ষণ তো এড়ালাম’।
নারী তোমার সময় এসেছে সবকিছু মূল্যায়ন করবার।
© ওশ্যাঘর
ফ্রিডম
———–
ফ্রিডম মানে কী – মুক্তি ; স্বাধীনতা।
না – কী নির্ভয়তা ; মন খুলে কথা বলা।
একটা প্রজন্ম বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার চেয়ে ফ্রিডম বেশী কিছু নয়।
বংশগতির কোড – ডি.এন.এ’র মাধ্যমে এটা প্রবাহিত করা যায় না ।
এটা পাবার জন্য যুদ্ধ করতে হয়।
এটা রক্ষার জন্য যুদ্ধ করতে হয়।
এবং যুদ্ধ করেই এক প্রজন্ম হতে অন্য প্রজন্মে এটার হাত বদল করতে হয়।
ফ্রিডম, তুমি বড় রক্ত পিপাসু।
যুগে যুগে তোমার জন্যই অবিসংবাদিত নেতার জন্ম হয়।
তুমি ইতিহাস নও, নেতা – ইতিহাস।
© ওশ্যাঘর
এড়িয়ে যাওয়া
————————-
যা তোমাকে ভীত করে ;
যা তোমাকে দুঃখিত করে ;
যা তোমাকে হেয় করে ;
সকলের সামনে- যে কাজ করতে লজ্জাবোধ কর;
তা অবজ্ঞা কর। তা হতে দূরে থাক।
নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে সামনে যাও।
জীবনের কানাগলি এড়িয়ে যাও।
চলার পথে ঘেউ ঘেউ করা কুকুরের দিকে ঢিল ছুঁড়ে সময় নষ্ট করো না।
সময় কোথা, সময় নষ্ট করবার।
ঢিল ছুঁড়ে সময় নষ্ট করলে তোমার গন্তব্যে তুমি কোনদিন যাবে না।
গন্তব্যহীন জীবন আর পাল ছেঁড়া নৌকা এক কথা।
কেননা – এগুলো তোমার পথ চলাকে বাঁধা দেয়।
যেমন দেয় : জরা ও মৃত্যু।
©ওশ্যাঘর।
লেখক > ডক্টর মোহাম্মদ জহিরুল হুদা , উপপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ