ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - পদ্মাসেতু এবং শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব

পদ্মাসেতু এবং শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব

মো. আলমগীর হোসেন খান >
পদ্মাসেতু বাংলার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনের সেতু। এক সময় এ অঞ্চলের মানুষ খুব সকালে ক্যারিয়ারে ভাত নিয়ে রওয়ানা হতো। সমস্ত দিন-রাত লঞ্চে থেকে পরের দিন সকালে গিয়ে ঢাকা পৌঁছাতেন। যারা ভাত নিতে পারতেন না তাদের কেউ কেউ লঞ্চের হোটেলের বাসি পচা খাবার খেতে বাধ্য হতেন, অনেকে না খেয়ে, কোনমতে নাস্তা করে পরের দিন মুখ শুকিয়ে ঢাকা পৌঁছাতেন। তখন লঞ্চে কেবিনের সংখ্যা ছিল খুবই কম। সবাইকে বিছানার চাদর বিছিয়ে কিংবা যাতায়াত পথের পার্শ্বে বসে থাকতে হত। আবার কেউ কেউ পূর্বে বিছানা পেতে দখল নেয়া ভাই বোনদের কাছে ভিক্ষুকের সুরে অনুরোধ করে পার্শ্বে বসার সুযোগ নিতেন। অনেকেই লঞ্চের ছাদে আশ্রয় নিতেন। বৃষ্টি আসলে ভিজতে হত কিংবা নিরাপদে আশ্রয় খোজার চেষ্টা করতেন। দুই ঈদ এবং পূজোয় দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের ভীর এবং যাতায়াত সমস্যা অকল্পনীয়। সদরঘাট থেকে দক্ষিনের মানুষ লঞ্চ থেকে নামলে ইয়ারকি মারতো ঢাকায় বসবাসরত অন্য অঞ্চলের মানুষেরা। আমাদের এ অঞ্চলের মানুষেদের অসহায় ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে ট্রিট করতো। লঞ্চ, স্টিমার ছাড়া অন্য কোন ওয়ে ছিলনা আমাদের। ঢাকায় আসা এবং যাওয়ায় সময় লাগত ২ দিন ২ রাত। তারপর কাজের সময় শুরু হত। তার মধ্যে মলম পার্টি, রুমাল পার্টি, ঘুম পার্টি, নদীতে লাফ দেয়া পার্টি এদের দৌড়ত্ব ছিল অনেক। এদের হাত থেকে রক্ষা পেত খুব কম সংখ্যক মানুষ। মা-বাবা দুশ্চিন্তায় থাকতেন, পরিবারের লোকজন দূর্ভাবনায় থাকতেন সবসময়। কোন মেয়েকে ঢাকায় লেখা-পড়া করতে পাঠানো মা-বাবার কাছে যুদ্ধ ঘোষনার সামিল। পরবর্তীতে অনেকগুলো ফেরী পার হয়ে বাস চলাচল শুরু হয়।

১৯৯৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ক্ষমতায় এসেই রুপসা সেতু, গাবখান সেতু, মোল্লারহাট, ফকিরহাট, শিকারপুর, দোহারিকা, আড়িয়াল খাঁ, ধলেশ্বরী-১, ধলেশ্বরী-২, আলীপুর, মহিপুর, লেবুখালী, ধপধপিয়া, বাগেরহাট, পিরোজপুর, পাটঘাতি কোন কোন সেতু নির্মান কাজ শুরু করেন যা পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে সম্পন্ন করেন।রাস্তাগুলোকে হাইওয়ে রাস্তায় পরিনত করেন। দক্ষিনাঞ্চলের মানুষদেরকে একদিনের মধ্যে বাড়ি থেকে ঢাকা গিয়ে অফিসের কাজ সেরে বাড়ি পৌছাতে হলে পদ্মাসেতু নির্মান একান্ত জরুরী। ঢাকার দুরত্ব কমে যায় প্রতিনিয়ত। সময় সাশ্রয় হতে থাকে দ্রুত গতিতে। দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন শুরু হয়। তাই পদ্মা সেতু নির্মানের পরিকল্পনা করে বিশ্বব্যাংক সহ বিদেশের কাছে সাহায্য কামনা করেন। Soil test করার কাজ চলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত। ৫ বছরের মধ্যে পরিকল্পনা হাতে নেয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সরকার বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে যান। Soil test করতে করতে পদ্মানদী ক্লান্ত হয়ে যায়।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় এসেই পদ্মা সেতু নিয়ে জোর তদবির করতে থাকেন। বিশ্বব্যাংক জাইকা অর্থ ঋন প্রদানের অনুমতি প্রদান করেন। ড. ইউনুস ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটনের ষড়যন্ত্রে এদেশীয় স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের কাছে দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের প্রানের সেতু হেরে যায়। দেশপ্রেমিক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদত্যাগে বাধ্য করা, এদেশীয় মীর জাফরদের সৈয়দ আবুল হোসেনকে বন্ধী করানোর পরামর্শ, সচিবকে বন্ধী করা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে পদত্যাগ করানোর পরামর্শ, ১টি টাকাও প্রদান না করে অর্থ কেলেংকারীর অভিযোগে মামলা-অপমানের পরেও এক পর্যায়ে পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থ দেয়া হবে না মর্মে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে চিঠি প্রদান। জাইকা ও বিশ্বব্যাংককে অনুসরণ।

দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের পদ্মাসেতুর আর কোন আশা ছিল না। হঠাৎ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তের উত্তরসূরী জননেত্রী শেখ হাসিনা কোন বাজেট ছাড়াই ঘোষনা দিলেন কারো সাহায্যের প্রয়োজন হবে না স্বদেশের অর্থেই পদ্মাসেতু নির্মান করব। যেই বলা সেই কাজ। প্রকল্প তৈরী, অর্থের হিসাব, জমি অধিগ্রহন, টেন্ডার প্রদান, প্রকল্পের কাজ শুরু মনে হল যেন একটি খালে সাঁকো তৈরী করছেন শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আবার খুশিতে মন ভরে গেল কানাডার আদালত এই প্রকল্পের কোন দূর্নীতি খুজে না পাওয়ায় অভিযুক্ত সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। বাঙ্গালী জাতি হিসেবে মাথা উচু করে দাড়ানোর একটি অহংকার। সাবাস বাংলাদেশ। সাবাস শেখ হাসিনা। সালাম দেশ ও মানুষের নেত্রী ।

লেখক : মো. আলমগীর হোসেন খান, অধ্যক্ষ, মিরুখালী স্কুল এন্ড কলেজ, মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর।

Leave a Reply

x

Check Also

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক আলমগীর হোসেন আটক

পিরোজপুর প্রতিনিধি : বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনকে আটক করেছে ...