ভান্ডারিয়া প্রতিনিধি 🔹
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় মানসুরা আক্তার রেনসি(২৪) নামে এক গৃহবধূকে হত্যার পর মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যার প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও শ^শুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে । গৃহবধূর স্বজনদেও অভিযোগ যৌতুকের দাবি তুলে স্বামী ও শ^শুর বাড়ির লোকজন গৃহবদূকে পিটিয়ে হত্যার পর মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যার প্রচারণা চালায়। পরে থানায় অপমৃত্যু মামলা হলে হত্যাকান্ড ধামাচাপা পড়ে যায়।
এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূ মানসুরার মা পারুল বেগম বাদী হয়ে গত ২৫ জুন পিরোজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জামাতা সোহাগ হাওলাদারসহ শ^শুর বাড়ির ৪ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত সোহাগ হাওলাদারসহ তার বাবা মিলু হাওলাদার, মা তহমিনা বেগম ও ভাই শাহীন হাওলাদার আসামী করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বামী সোহাগ পলাতক রয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে অপমৃত্যু মামলার কপি ও ময়রাতদন্তের প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য ভান্ডারিয়া থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে।
মামলা সূত্রে জানাগেছে, ভান্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া ইউনিয়নের নলকাটা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন সেপাইয়ের একমাত্র মেয়ে মানসুরা আক্তার রেনসির সঙ্গে দীর্ঘ ৯ বছর আগে একই উপজেলার পূর্ব ভান্ডারিয়া গ্রামের মিলু হাওলাদার এর ছেলে সোহাগ হাওলাদার এর সঙ্গে উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয়। পরে এ দম্পতির সংসারে দুটি সন্তানও জন্ম গ্রহণ করে। বিবাহের সময় জামাতা সোহাগকে নগদ টাকাসহ ৩ লাখ টাকার যৌতুক দিয়ে ভান্ডারিয়া শহরে একটি দোকান করে দেন মানসুরার বাবা। এরপরেও গৃহবধূর স্বামী সোহাগ ও তার স্বজনা খুশী হয়নি। আরও যৌতুকের লোভে গৃহবধূ মানসুরাকে চাপ শুরু করে। এ নিয়ে নানা ভাবে তার ওপর নির্যাতন শুরু করে গৃহবধূ রেনসির ওপর। দিনে দিনে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা রেড়ে যায় । এক পর্যায়ে পরকীয়ায়ও জড়িয়ে পড়ে স্বামী সোহাগ। এ নিয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ দেখা দেয়। ফলে গৃহবধূ মানসুরাকে বাড়ি ছাড়া করতে প্রায়শই অমানুসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছি স্বামী সোহাগ। এ ঘটনা জানিয়ে একাধিক বার মানুসরা তার মা-বাবার কাছে নালিশ করেছে। দুই শিশু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘদিন সে স্বামী সোহাগ ও শ^শুর বাড়ির লোকজনের নির্মম অত্যাচার সহ্য করে আসছিল ।
গত ১৮ জুন রাত দেড়টার দিকে স্বামী ও তার স্বজনা মিলে মানসুরাকে মারধর করে । এসময় তাকে বেদম করা হলে সে জ্ঞান হারিয়ে মৃতুর কোলে ঢলে পড়ে। ওই হত্যাকান্ড ধামাচাপা দিতে রাতেই তাৎক্ষণিকভাবে তার মুখে বিষ ঢেলে স্বামী ও শ^শুর বাড়ির লোকজন। পরে বিষপানে অসুস্থ বলে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বসে মানুসারার বাবাকে ফোন জানানো হয় তার মেয়ে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে। একমাত্র মেয়ের এমন অকাল মৃত্যুর খবর শুনে তার বাবা দেলোয়ার হোসেন মুর্ছা যান। এ সুযোগে নিহত মানুসরার অচেতন বাবার কাছ থেকে জামাতা সোহাগ ও তার স্বজনরা কৌশলে একটি লিখিত কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। পরে হত্যাকান্ড ধামাচাপা দিয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। নিহত গৃহবধূর লাশ ময়না তদন্তের জন্য পুলিশ পিরোজপুর মর্গে পাঠায় পুলিশ। বিকেলে লাশ পরিবারের কাচে হস্তান্তরের পর দাফনের জন্য গোসল করাতে গেলে আসল ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। মৃতদেহের বিভিন্ন স্থানে অগনিত আঘাতের চিহ্ন দেখে আঁতকে ওঠেন গৃহবধূর স্বজনরা । এসময় নিহত গৃহবধূর শরীরের ওই আঘাতের চিহ্নের ছবি তুলে রাখেন তারা।
নিহত গৃহবধূর মা পারুল বেগম তার মেয়ে মানুসুরাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে বলেন, মেয়ের লাশ দাফনের সময় মারধরের আঘাত দেখেছি। ওই আঘাতের ছবি তুলে রাখা আছে। আমার মেয়েকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। একমাত্র মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি।
এদিকে আদালত সূত্রে জানাগেছে, আদালত মামালাটি আমলে নিয়ে ভান্ডারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহাবুদ্দীনকে ভান্ডারিয়া থানায় দায়েরকৃত গৃহবধূ মানসুরার অপমৃত্যু মামলার কপি ও ময়না তদন্তের প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ১১ জুলাই মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারন করেছে আদালত।
এ বিষয়ে ভান্ডারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো. শাহাবুদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, গৃহবধূর মানসুরার মৃত্যুর পর পুলিশের কাছে পরিবারের কোন অভিযোগ ছিলনা এ কারনে এটি অপমৃত্যু মামলা হিসেবে গণ্য করা হয়। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন এখনও পাইনি পেলে হত্যা না আত্মহত্যা নিশ্চিত হওয়া যাবে। অপরদিকে আদালতে দায়ের করা মামলার নির্দেশনা এখনও হাতে পাইনি।