ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূল - মঠবাড়িয়ার ভীমনলীর ১৫ শহীদের স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজ স্থবির

মঠবাড়িয়ার ভীমনলীর ১৫ শহীদের স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজ স্থবির

দেবদাস মজুমদার :

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ভীমনলী গ্রামে ১৯৭১ সালের ২২ মে সংঘটিত প্রথম সম্মূখ প্রতিরোধ যুদ্ধে ১৫ শহীদের গণসমাধিস্থলে নির্মাণাধিন স্তৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজ গত তিন বছর ধরের স্থবির হয়ে আছে । মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ,মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দান আর নিরাশ্রয় বাঙালীদের আশ্রয়দানের অপরাধে রাজাকারদের হামলা প্রতিহত করতে সেদিন মুক্তিকামী বাঙালী সম্মূখ লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। গত তিনবছর আগে গণপূর্ত বিভাগ এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু সংশিষ্ট ঠিকাদারের উদাসীনতায় নির্মাণকাজ স্থবির হয়ে পড়ে আছে।

জানা গেছে, মঠবাড়িয়া সদর হতে ১৮ কিলোমিটার দুরের গ্রাম ভীমনলীর শহীদের গণসমাধিস্থলে ১০ শতক জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা বিরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস স্মৃতিস্তম্ভের জন্য এ জমি দান করেন। এখানে গত তিন বছর আগে গণপূর্ত বিভাগের আওতায় শহীদ স্মৃতি স্তম্ভটির নির্মাণ কাজ অদ্যবধি শেষ হয়নি। প্রথম দফায় ৬২ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর আরো ৮ লাখ টাকা পুন বরাদ্ধে মোট ৭০ লাখ টাকা ব্যায়ে গণপূর্ত বিভাগ এ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়। মেসার্স রাজ এণ্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণ কাজ করছেন।
প্রকল্পের সাইট ঠিকাদার মো. ইউনুস ফকির জানান, ১০ শতক জমিতে নির্মাণাধিন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হতে আরো সময় লাগবে। তবে স্মৃতি স্তম্ভে যাতায়াতের রাস্ত নির্মাণে আরো তিন শতক জমি প্রয়োজন। যা সরকারের অধিগ্রহণ ছাড়া সম্ভব হচ্ছেনা। এর সঙ্গে স্থাপনার আশপাশ জুড়ে ওয়েটিং শেড, সুপেয় পানি,সোলার প্যানেল ও ওয়াশরুম নির্মাণ জরুরী। এসব বাস্তবায়নে আরো ১৪/১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন।
এ স্মৃতির মিনারের সম্মূখ জমির মালিক দিলীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, সড়ক ও অন্যান্য স্থাপনার জন্য আমি জমি দিতে ইচ্ছুক। জমির মূল্য পেলে জমি দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তিনবছর আগে শুরু হওয়া কাজ এখনও শেষ করতে পারেনি।

মঠবাড়িয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমাণ্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. বাচ্চু মিয়া আকন বলেন,মুক্তিযুদ্ধে উপকুলীয় মঠবাড়িয়ায় স্বাধীনতা বিরোধিদের সাথে নলী গ্রামের বাড়ই বাড়ির সম্মূখ যুদ্ধ অন্যতম। শহীদের গণ সমাধিতে গড়ে উঠছে দৃষ্টি নন্দন স্মৃতির মিনার। কিন্তু গত তিনবছরেও নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঊর্মী ভৌমিক বলেন, ভীমনলী গ্রামে ১৫ শহীদের সমাধি স্থলে স্তৃতিস্তম্ভের কাঠামোর কাজ প্রায় সম্পন্ন । তবে ওখানের রাস্তাসহ কিছু নির্মাণ কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত বিভাগ। আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে দ্রুত নির্মাণ কাজ সম্পন্নের উদ্যোগ নেব।

উল্লেখ্য – মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নের নলীভীম গ্রামটি হিন্দু অুধ্যষিত এক জনপদ। ওই গ্রামের নলী খালের পাড়ে ওয়াপদা বেড়ি বাঁধ লাগোয়া ৮০টি হিন্দু পরিবরের বসবাস। গ্রামের সম্ভ্রান্ত বাড়ই বংশের পরিবারগুলো ছিল এলাকার ধনাঢ্য। মঠবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দুরের ওই গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল বিপর্যস্ত। মুক্তিযুদ্ধ সমকালীন সময়ে আশ্রয়ের জন্য একটি নিভৃত জনপদ ছিল এ ভীমনলী গ্রাম। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সেখানে যাতায়াত গড়ে ওঠে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিতাড়িত হিন্দু বাঙালীরাও সেখানে প্রাণ ভয়ে আশ্রয় নেয়। এ কারনে স্থানীয় স্বাধীনতা বিরোধি স্বাধীনতা বিরোধিদের কাছে গ্রামটি টার্গেটে পরিনত হয়।
১৯৭১ সালের ২২ মে স্বাধীনতাকামী গ্রাবাসিরা প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে লালু খাঁ নামে এক রাজাকার নিহত হয়। আর রাজাকারদের গুলিতে ভীমনলী গ্রামের মাঠে শহীদ হন ১৫জন বীর বাঙালী। এরপর রাজাকাররা ওই ১৫ শহীদের লাশ টেনে হিচড়ে নলী খালের চরে ফেলে দেয়। সেই সাথে রাজাকার বাহিনী ভীমনলী গ্রামের ৮০টি হিন্দু বাড়িতে পালাক্রমে তান্ডব চালায়। ব্যাপক লুটতরাজ চালিয়ে ওরা ঘর বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা ১৫ শহীদের নিথর দেহ নলী খালের চর থেকে তুলে খেয়াঘাটের বেড়িবাধের পাশে গণসমাধি দেন।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...