ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূল - মঠবাড়িয়ার বলেশ্বর নদীর বাধ উপচে অর্ধশত গ্রামে প্লাবন 🌑 মাঝেরচরের সাড়ে ৪কিলো বাধ ধসে গেছে

মঠবাড়িয়ার বলেশ্বর নদীর বাধ উপচে অর্ধশত গ্রামে প্লাবন 🌑 মাঝেরচরের সাড়ে ৪কিলো বাধ ধসে গেছে

, 🌑তলিয়ে গেছে কৃষিজমি,মৎস্য ঘের 🌑 ৩০ হাজার পানিবন্দী পরিবারে দুর্ভোগ

দেবদাস মজুমদার 🔴
উপকূলীয় মঠবাড়িয়ায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে বলেশ্বর নদ তীরবর্তী চার ইউনিয়ন রক্ষা বেরিবাধ উপচে অর্ধশত গ্রামে প্লাবন ঘটেছে। বলেশ্বও নদীর মাঝের চরের সাড়ে চার কিলোমিটার বেরিবাধ জোয়ারের তোড়ে সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। মাঝেরচর, ক্ষেতাচিড়া জেলেপল্লী, বড়মাছুয়া, খেজুরবাড়িয়া, ভোলমারা , তুষখালী, ছোট মাছুয়া,জানখালী, বেতমোর, উলুবাড়িয়াসহ অন্তত অর্ধশত গ্রামে বাধ উপচে লোকালয় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মঙ্গলবার বিকেল থেকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে বলেশ্বর নদী ফুলে ফেঁেপ উঠতে শুরু করে। সেই সাথে দমকা বাতাস সৃষ্টি হলে গভীর রাতে উপজেলার বড়মাছুয়া ইউনিয়নের লঞ্চঘাট, ষ্টিমারঘাট এলাকার বেরিবাধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। আতংকিত গ্রামবাসি বাধ এলাকার বসতি ছেড়ে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটতে শুরু করলে বড়মাছুয়ার গ্রামগুলো আতংক শুরু হয়। আজ বুধবার অতি জোয়ারে পানির চাপ বৃদ্ধি পায়। এতে কৃষিজমি ৩/৪ফুট পানিতে তলিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, বড়মাছুয়া স্টিমারঘাটের এক কিলোমিটার এলাকার বাধ গত আম্ফানে ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরে বাধ উঁচু না করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন কবলিত এলাকায় শুধু মাত্র বালির বস্তা ফেলে দায়সারা মেরামত করে। ইয়াসের প্রভাবে তাও ধসে গেলে বাধ উপচে জোয়ারের প্লাবনে গ্রামের পর গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ে । ওই এলাকায় অনন্ত তিন হাজার পরিবার পানি বন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বর্তমানে বড়মাছুয়া স্টিমারঘাট ও লঞ্চঘাট বাজার চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়া বিপন্ন বাধের ওপর বৈদ্যুতিক পিলার গুলো হেলে পড়ে নদী গর্ভে বিলীনের আশংকা রয়েছে।

বড়মাছুয়া গ্রামের তরুণ মাইনুল ইসলাম জানান, বেতমোড়ের, মাছুয়া ও কালিরহাট বাজারের খালেরজোয়ারের তোড়ে গ্রামের পর গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। সেখানে ৫০০ পরিবার এখন পানিবন্দী। তিনি আরও বরেন, বলেশ্বর নদীর বর্তমান বাধ অন্তত আরও ৭/৮ফুট উচু করা না হলে একন স্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবন সৃষ্টি হবে।
এসব এলাকার মানুষের পানিবন্দী নির্ঘূম রাত শেষে আজ বুধবারের জোয়ারে আরও দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি, আউশ ধানের ক্ষেত ৪/৫ফুট পানির নিচে। পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে।
অপর দিকে বলেশ্বরের মাঝের চর এলাকার জেলে পল্লীর ১২০ পরিবার এখনও আশ্রয় কেন্দ্র অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার রাতে ঝড় ও জোয়ারের তোড়ে মাঝের চরের সাড়ে চার কিলোমিটার বেরিবাধ সম্পূর্ণ ধসে গিয়ে মাঝের চরে মহা প্লাবনের সৃষ্টি করেছে। আজ বুধবারের জোয়াওে পুরো চরের বসতি ও বনাঞ্চল ৫/৬ ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়লে ১২০ পরিবার পানিবন্দী পরিবার স্থানীয় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে আটকা পড়েন। এসব জেলে পরিবারগুলোর রান্না বান্না বন্ধ হয়ে পড়লে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আকাশ কুমার কুণ্ডু ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন মিলন তালুকদার চাল ডালসহ খাদ্য উপকরণ ও গ্যাসের চুলা পৌঁছে দিয়ে পানিবন্দী মাঝেরচরের পরিবারগুলোর দুপুরের আহারের ব্যবস্থা করেন।
স্থানীয় তরুণ সমাজ সেবক শাহ আলম সিকদার জানান, মাঝের চরের সাড়ে চার কিলোমিটার বাধ জোয়োরের তোড়ে সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। ১২০ চরবাসি পরিবার এখন পানি বন্দী। তিনি আরও জানান, সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত ও আম্ফানে ক্ষতি বাধ উচু করে নির্মাণ না করার ফলে পুরো চরটি এখন ৬ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। চরবাসি ও এখানের বনাঞ্চল বাঁচাতে হলে নতুন করে অন্তত ১২/১৫ ফুট কার্যকর বাধ নির্মাণ জরুরী। না হলে এখন প্রতিদিন জোয়ারে চরটি জলমগ্ন হয়েই থাকবে।
স্থানীয় সাপলেজা ইউনিয়নের বলেশ্বর নদীর খেতাছিড়া পয়েন্টে যেটি ঘূর্ণিঝড় সিডরের উৎসমুখ সেখানে অন্তত দুই কিলোমিটার বাধ উপচে কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। সেখানে বাধের পারে আশ্রিত ২৫০টি জেলে পরিবার এখন পানি বন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। ওই এলাকার কচুবাড়িয়া,খেতাছিড়া,বাবুর হাটসহ অন্তত ৫ গ্রামের নিম্নাঞ্চল ৪/৫ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলার মিরুখালী বাজার ও তুষখালী ইউনিয়ন বাজার সংলগ্ন খালের জোয়ারে ইউনিয়ন বাজার ২/৩ ফুট পানিতে জলমগ্ন।
মঠবাড়িয়া পৌর শহরের দক্ষিণ বন্দর এলাকার খাল উপচে হুহু করে জোয়ারের পানি ঢুকে ব্যাপক এলাকাজুড়ে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। সহস্রাধিক পৌরবাসি পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। এসব পরিবারে আজ রান্নাবান্নাও বন্ধ। এছাড়া শহরের আজহার কলোনী এলাকায় খালের পানি ঢুকে ৩০০ পরিবাওে দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড পিরোজপুর এর উপ সহকারি প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বালি বলেন, বড় মাছুয়া বেড়ি বাধে ঝুকি পূর্ণ স্থানে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধ করার চেস্টা চলছে। এছাড়া ক্ষেতাছিরা কচুবাড়িয়া বাধে জোয়ারের তোরে কিছু জিও ব্যাগ ডিসপ্লেস হয়ওয়ার খবর পেয়েছি। তবে পর্যাক্রমে ছুটে যাওয়া বাধে সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঊর্মী ভৌমিক জানান, ইয়াস মোকাবেলায় ৭৫টি সরকারি সাইক্লোন শেল্টার এবং বেসরকারি পর্যায়ের ৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে স্কুল ,কলেজ ও মাদ্রাসা ভবন ও ২০৫টি প্রাথমিক স্কুল দুর্যোগ কবলিত জনগণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলায় সিপিপির মোট ১১৭৫ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেরচরসহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনা খাবার পৌছে দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটা ঘূর্ণিঝড়ে এখানকার বলেশ্বর তীরের বসতির মানুষজন ভিষণ ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। বিশেষ করে, বলেশ্বর নদীর খেতাছিড়া মোহনা বাধ, বড়মাছুয়া মোহনা বাধ ও বলেশ্বর নদীর মাঝের চরের জেলে বসতির মানুষ জলমগ্ন হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বলেশ্বর নদীর বাধ ও মাঝেরচরের বেরিবাধ অন্তত আরও ৬/৭ ফুট উচু করান জরুরী। এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবওে একটি প্রস্তাবনা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...