ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূল - ঘরবন্দী দুই হাজার শিক্ষার্থীর হাতে কাউখালী ইউএনওর চিঠি

ঘরবন্দী দুই হাজার শিক্ষার্থীর হাতে কাউখালী ইউএনওর চিঠি

দেবদাস মজুমদার: করোনা সংক্রমন রোধে গোটা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ । লক ডাইনের কবলে পড়ে শিক্ষার্থীরা সকলেই এখন ঘরবন্দী । শিক্ষার্থীর মাঝেও করোনা আতংকের ছাঁয়া। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের মানসিক আর শিক্ষাজীবন। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ও জীবন নিয়ে মানসিক শক্তি হারাতে পারে। তাদের মনোবল বাড়াতে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা নির্বাহী ককর্মকর্তা খালেদা খাতুন রেখা এক ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বিপন্ন শিক্ষার্থীর মানসিক শক্তি জোগাতে ও করোনা মোকাবেলয় করণীয় বিষয়ে চিঠি দিচ্ছেন শিক্ষার্থীর বরাবরে। কাউখালী উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার দুই হাজার শিক্ষার্থী ই্উএনওর এ চিঠি হাতে পেতে শুরু করেছে। জানাগেছে, কাউখালী উপজেলার প্রায় দুই হাজার পরীক্ষার্থীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রাম পুলিশ হাজির হয়ে চিঠি পৌঁছে দিচ্ছেন। ঘরবন্দী শিক্ষার্থী প্রশাসনের এমন চিঠি হাতে পেয়ে আনন্দিত। স্থানীয় সর্ব মহলে এ চিঠি আলোচিত হয়েছে। চিঠিতে ইউএনও উল্লেখ করেছেন, প্রিয় শিক্ষার্থী, শুভেচ্ছা নিও। আশা করি তোমরা সকলেই ভাল আছো। তোমাদের ভালো থাকাই আমার একমাত্র প্রত্যাশা। তোমরা জানো মহামারী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভয়াবহতা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতেও এ ভাইরাস কিছু কিছু এলাকায় দেখা দিয়েছে। এ ভাইরাস সংক্রমণ রোধে তোমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তোমরা অবগত আছো করোনা একটি সংক্রামক ভাইরাস যা একজন আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাঁশির মাধ্যমে ছড়ায়। এই সময়ে বাড়িতে তোমাদের সাবধানে থাকতে হবে। বারবার সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়ার এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের অভ্যাস করতে হবে। সাময়িক বিপর্যয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় আমার প্রিয় শিক্ষার্থীদের সাথে আমি কোন কথা বলতে পারছিনা। অনাকাঙ্খিত ছুটিতে তোমাদের সাথে কিছুদিন আমার দেখাও হচ্ছে না। মহামারী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আমাদেরকে যত দূরত্বেই ঠেলে দিক, আমি বিশ্বাস করি আমরা যদি সচেতন থাকি মহান আল্লাহর রহমতে অতি দ্রুত এ বিপদ থেকে আমরা মুক্তি পাবো ইনশাআল্লাহ। তোমরা ইতোমধ্যেই জেনেছো তোমাদের পড়াশুনার যেন ব্যাঘাত না হয় সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ, ঢাকা এর মাধ্যমে “আমার ঘরে আমার স্কুল” কার্যক্রম শুরু করেছে। যার মাধ্যমে তোমরা ২৯ মার্চ ২০২০ তারিখ থেকে ‘সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে’ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬ষ্ঠ হতে ৯ম শ্রেণির বিষয় ভিত্তিক পাঠদান কার্যক্রম উপভোগ করতে পারবে। ক্লাস রুটিন ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। যারা এখনও রুটিন পাওনি তারা স্ব-স্ব স্কুলের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করবে। শিক্ষকবৃন্দ তোমাদের সাহায্য করবেন অথবা যঃঃঢ়://িি.িফংযব.মড়া.নফ ওয়েব সাইট থেকে ডাউনলোড করেও নিতে পারবে। তোমরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। নিজেদের আলোকিত মানুষরূপে গড়ে উঠতে হবে। তোমরাই হবে আগামী দিনে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের দক্ষ কারিগর। তোমাদের মধ্য থেকেই আমরা পাব একেকজন দক্ষ প্রশাসক, ডাক্তার বা বিজ্ঞানী। কেউ আবার নেতা হয়ে দেশের উন্নতির জন্য কাজ করবে। কেউ হবে বড় উদ্যোক্তা এবং নতুন নতুন ধারণা দিয়ে দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। দেশ থেকে বেকারত্ব দূর করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। একদিন তোমরাই এদেশ পরিচালনা করবে। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে যাবে এবং বিশ্বকল্যাণে কাজ করবে। তোমরা জানো আলোকিত মানুষ হতে হলে তোমাদের অধ্যবসায়ী ও সময়ানুবর্তী হতে হবে। তোমাদের স্কুল/কলেজ/মাদ্রাসা ছুটি রয়েছে। বাড়িতে অবস্থান করার ফলে তোমরা এখন অনেক সময় পাচ্ছো। এ সময়টা কাজে লাগাতে হবে। ঘরে বসে নিজেদের পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে হবে। যেন তোমরা পিছিয়ে না পড়। নিজের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষামূলক গল্প, মনিষীদের জীবনী, বঙ্গবন্ধুর জীবনী নির্ভর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচাসহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়তে পারো। নিজের দেশ সম্পর্কে জানতে হবে। মা, বাবা, বড় ভাই, বোনের সাহায্য নিয়ে তুমি যে বিষয়টি কম বুঝ সেটি ভালোভাবে শিখে নিতে পারো। সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বাহিরে একদমই যাওয়া যাবে না, বাবা মায়ের কথা মেনে চলতে হবে, তাদের সাথে ভালো সময় কাটাবে। নিয়মিত রুটিন মাফিক পড়াশুনা করবে। বাসায় যদি অসুস্থ দাদা-দাদী, নানা-নানী থাকেন তাদের সেবাযত্ন করবে এবং তাদের কাছে বসে অতীতের গল্প শুনে সময় কাটাবে। ঘরে বসে ইনডোর খেলাধুলা করবে এবং পরিবারের কাজে সাহায্য করে সময় কাটাবে। আশা করি অতি দ্রুতই এই সংকট দূর হবে এবং তোমরা খুব তাড়াতাড়ি তোমাদের ক্লাসে ফিরতে পারবে। তোমাদের পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমরা শেষ করতে পারবো। এ নিয়ে তোমরা কোন দুশ্চিন্তা করবে না। তোমরা আবার দলবেঁধে স্কুলে যাবে। পড়াশুনা করবে, খেলাধুলা করবে। তোমাদের কলকাকলীতে মুখরিত হবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তোমাদের সকলে আমার ভালবাসা ও আদর নিও। পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থেকো, সুস্থ থেকো এই প্রত্যাশায়। কাউখালী সরকারি কেজি ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র তাহমিদ হোসেন বলেন, ইউএনও স্যারের চিঠি পেয়েছি। খুব আনন্দ লেগেছে। করোনায় ঘরবন্দী জীবনে এ চিঠি মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে। ইউএনও স্যারকে ধন্যবাদ। মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি কিরণ চন্দ্র হালদার বলেন, দেশের এই সংকটময় মূহুর্তে শিক্ষার্থীদের মাঝে এই চিঠি তাদের মনোবল বাড়াবে। সেই সাথে করোনা সচেতন হতে সতর্ক করবে। ইউএনও মহোদয়ের এ চিঠি শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। এ বিষয়ে কাউখালীর ইউএনও খালেদা খাতুন রেখা বিষয়টি নিশ্চিত করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে অনেক বিষয়ে অবগত হয়েছি। সব মানুষের মতো শির্থীরা ঘরবন্দী আতংকে। তাদের কথা মাথায় রেখেই এ খোলা চিঠি দিয়েছি। এতে ক্ষার্থীরা যদি অনুপ্রাণিত হয় সেই আশাবাদ।

Leave a Reply

x

Check Also

লাইটার জাহাজের ধাক্কায় চরখালী ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে বিধ্বস্ত 🔴 যানবাহন চলাচল বন্ধ

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার কঁচা নদীর চরখালী-টগরা ফেরিঘাটের চরখালী ঘাটে একটি জাহাজের ধাক্কায় ফেরির ...